ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

আঁই অরিজিনাল আওয়ামী লীগার
হাসিনা আকতার নিগার
হাসিনা আকতার নিগার

ব্যক্তিজীবনে বেশ কিছু দিন শারিরীক সমস্যার কারণে ৩/৪টি হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে গিয়ে শুধু মনে হল, এদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন এখনো অলীক স্বপ্ন। চিকিৎসার জন্য মানুষের হাহাকার আর অনিশ্চিয়তা বড় বেদনাদায়ক। এখানে চিকিৎসা মানে আতংক। গরীব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের এদেশে ভালো চিকিৎসার আশা করা ভুল। কারণ রোগের শুরুতে টেস্টের পেছনে টাকা সব শেষ হয়ে যায়। এক হাসপাতালে এক এক ধরনের মূল্য নির্ধারিত। তার উপর চিকিৎসকের পছন্দমত ল্যাবে টেস্ট করতে হয়। তা না হলে টেস্ট রির্পোট গ্রহনযোগ্য নয়। তার উপর করোনার ভয়াবহতাতে একটা অস্থির পরিবেশ। এ করোনাকালিন সময়ে যে পরিবারে করোনা হানা দেয়নি সে বুঝবে না এর প্রভাবে কি করে একটা পরিবার অসহায়ত্বের শিকার হয়। রাস্তাঘাটের চিত্র আর হাসপাতালের ভেতরের চিত্র একদম ভিন্ন রকম। হাসপাতালে গেলে বুঝা যায়, মানুষ একটু অক্সিজেন পেতে কতটা লড়াই করছে জীবন বাঁচাতে গিয়ে। একজন করোনা রোগীর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আকুলতা দেখে দিশেহারা লাগে। নিজের কাছে এমন পরিস্থিতিতে বড় অসহায় বোধ হয় ।

করোনা আর মানুষের এমন জীবন যুদ্ধের মাঝে দেশে চলছে নানা কাহিনি। আর সে কাহিনিগুলোতে রাজনৈতিক সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র এতটাই দৃশ্যত্ব যে, বিবেকবান মানুষের বাকরুদ্ধ। মদ, নারী, অনৈতিক কার্যকলাপের খবরের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে করোনার তাণ্ডব। আজকাল আর নিত্যদিন ২৫০ মানুষের মৃত্যতে ব্যাথিত হয় না প্রাণ। করোনার নিষ্ঠুরতারই ফল এটা। করোনায় মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিয়েছে। হয়তোবা মহামারির সাথে মানিয়ে চলার এটাই সহজাত প্রক্রিয়া প্রকৃতিগতভাবে।

এসবের পাশাপাশি যে বিষয়টি সারাদেশে বিদ্যমান তা হল, কতিপয় মানুষের  রাজনৈতিক পরিচিতি ও দাপট। কথায় কথায় ক্ষমতার দাপট দেখাতে নিজেকে আওয়ামী লীগ হিসাবে জাহির করার প্রবণতা সব ক্ষেত্রে এখন সীমাহীন পর্যায়ে চলে গেছে। তারা বুঝতে চায় না রাজনীতি আর রাজনৈতিক দর্শন খুব সহজ বিষয় নয়। তাদের কাছে রাজনৈতিক পরিচয় কেবল সুযোগের ফায়দা নেয়া। রাজনীতিকে তার ব্যবহার করে দাবার গুটির মত। পদ পদবী পেয়ে তার হয়ে উঠে রথী মহারথী। দলের নিয়ম শৃঙ্খলা বা আর্দশ নিয়ে চর্চা করার প্রয়োজন বোধ করে না। 

অন্যদিকে এদেশে ভোটের রাজনীতি হয় অনেকটা আবেগ থেকে। তবে বর্তমান সময়ে ভোট নিয়ে বির্তক সমালোচনা রয়েছে। সে আলোচনা দিয়ে এখনকার বাংলাদেশের রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করা যায় না। তার কারণ হলো দেশে রাজনৈতিক দল বলতে এখন একটাই দল আছে, 'আওয়ামী লীগ।' আর দলের সমর্থক, কর্মী অগণিত। ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগ। মজার বিষয় হলো, প্রত্যেকে সামান্য বিষয়েও রাজনৈতিক পরিচিতিকে জাহির করে সবার আগে।আর দলে যেহেতু হাইব্রিড শব্দটি প্রচলিত রয়েছে তাই নিজেকে অরিজিনাল আওয়ামী লীগার বলে আবার এক ধরনের বীরত্ব জাহির করে। 

এ প্রসঙ্গে বলার কারণ হলো, অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা এক ঘটনা। এক ব্যক্তির এতই সময়ের অভাব সামান্য নিয়ম মেনে ডাক্তার দেখাতে নারাজ। সিরিয়াল না মানার কারণে একজন প্রতিবাদ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তিনি বারবার বলতে থাকতেন তার রাজনৈতিক পরিচয়। চট্টগ্রামের মানুষ এমনিতেই একটু উচ্চ গলায় কথা বলে। আর সে ব্যক্তির রাজনৈতিক দাপটে গলা স্বরের হম্বিতম্বি দেখে একজন বলে বসে 'ইতা নয়া আওয়ামী লীগার'। এ শুনে তিনি আরও উচ্চ স্বরে বলতে থাকেন তার ক্ষমতা কতদূর, কি করতে পারেন তা বলার সাথে আবারও বলে 'আঁই অরজিনাল আওয়ামী লীগার।' ঘটনাটা সাধারণ হলেও এর সংকেত কিন্তু ভালো কিছু নয় আওয়ামী লীগের জন্য।

এখন প্রশ্ন হলো কে নতুন আওয়ামী লীগ আর কে প্রকৃত আওয়ামী লীগ তা যাচাই বাছাই করার কোন সুযোগ নেই জনগণের। কারণ অর্থ, প্রভাব, চটকদারি জৌলুশ আর নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে সময় সুযোগ মত দলে যে পদ পদবি পাওয়া যায় তার প্রমাণ এখন সবার সামনে বিদ্যমান।  তৃণমূলের রাজনীতি করে আসা কজন নেতা কর্মীকে যথাযোগ্য স্থান দিয়েছে মূল দলের শীর্ষ নেতারা তা বলা দুস্কর। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে ধারণ করা রাজনীতিবিদদের নিশ্চুপতা দলের জন্য হিতকর নয়। তাদের এ নীরবতার কারণে আজ দলের রন্দ্রে রন্দ্রে যে হাইব্রিডের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তা যে একদিন কাল হবে তা বলাই বাহুল্য। তাই সময় থাকতে মুখোশধারী আওয়ামী লীগারদের দমন করতে না পারলে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ ভালো কোন উপমা সৃষ্টি করতে পারবে না আগামীতে। নতুন প্রজন্ম এমনিতেই রাজনীতি বিমুখ। তার বর্তমান সময়কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সত্যি কারের রাজনৈতিক দর্শন বা ব্যক্তি দের জানতে পারছে না। যা তাদের জন্য শুভ কিছু নয়। এছাড়া এসব কারণে সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হবে না। 

অন্যদিকে একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক আর্দশ ও দর্শন যদি বলিষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠ না হয় তাহলে সে রাষ্ট্রের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে এদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশাকে মূল্যায়ন করতে হলে আওয়ামী লীগকে নিজের ঘর সামাল দিতে হবে। তা না হলে নব্য আওয়ামী লীগারদের মুখোশধারী 'অরজিনাল আওয়ামী লীগার' ভাবের কারণে লজ্জিত হবে সরকার ও দল এ কথা ভুলে গেলে বড় ভুল করা হবে।

লেখক: কলামিস্ট। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন 



এই পাতার আরো খবর