দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। অপরদিকে সরকার সংবিধানের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় বরং চলমান নির্বাচন ব্যবস্থাকেই গুরুত্ব দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি মীমাংসিত বিষয়। উচ্চ আদালতের রায়ে সেটি বাতিল হয়ে গেছে। ২০১১ সালের ১০ মে বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেয়। এছাড়াও বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়। নির্বাচন কমিশনের মেয়াদও শেষ পর্যায়ে। সংবিধান অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তাদের অধীনেই দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনী বিলের ২০ ও ২১ নম্বর প্রস্তাবনায় বলা হয়, সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইবে। সংবিধানের ২(ক) পরিচ্ছেদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হইবে। প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পদসংক্রান্ত ১৫২ অনুচ্ছেদ সংশোধন ও ক্রান্তিকালীন এবং অস্থায়ী বিধানাবলী সংক্রান্ত ১৫০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, বিএনপি নিজেদের আগামী নির্বাচন বয়কট করার জন্য একটি ফন্দি আটছে যা বাস্তবসম্মত নয়।
তবে বাস্তব দৃষ্টিকোন থেকে যদি দেখার চেষ্টা করা হয় সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে বিএনপি'র নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। যদি তারা এমনটি না করে এর ফলাফল স্বরুপ বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে আমি মনে করি। যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে বলা যায় এর ফলাফল হিসেবে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। একটি রাজনৈতিক দল বছরের পর বছর নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে কখনো জনগণের প্রতিনিধিত্ব এবং নেতা-কর্মী তৈরী করতে পারেনা। আর নেতা কর্মী ছাড়া সেটি কোন রাজনৈতিক দল হতে পারে না। বিষয়টি বিএনপি'র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের অনুধাবন করতে হবে।
রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়া একজন প্রকৃত গণমানুষের নেতা কখনো জনসম্পৃক্ততার বাইরে থাকতে পারে না। একইভাবে নিজের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য বা কারাবরণের ভয়ে দেশত্যাগ করতে পারে না। ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে যেয়ে জনগণের অধিকার আদায়ে আপোষহীন নেতৃত্বের উদাহরণ বিশ্বে রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের জন্য চার হাজার ছয়শত বাষট্টি দিন কারাবাস করেছেন। অবশেষে তিনি এদেশের জনগণকে উপহার দিয়েছেন বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন এর ফলাফল স্বরূপ তিনি আজ বিশ্বে অমর হয়ে রয়েছেন। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যারা নিজের দল এবং জনগণ ও দেশের স্বার্থে কারাবন্দী থেকেছেন কিন্তু দেশত্যাগ বা ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেননি। একজন সত্যিকারের নেতার যদি ফাঁসিও হয় তবুও তিনি বীরদর্পে দেশে থেকে সে ফাঁসিতে ঝুলে তার নেতা কর্মী ও দলের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করবেন। যদিও যুগে যুগে বিদেশের মাটিতে থেকে যারাই রাজনীতি পরিচালনা করেছে সেটি কখনও জাতির জন্য শুভকর হয়নি, বরং তাতে সে সকল রাজনৈতিক ব্যক্তির স্বার্থ হাসিল হয়েছে। সুতরাং ইতিহাসের আলোকে বলা যায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এদেশের সহজ সরল মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে এবং রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের চলমান পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের কু-পরামর্শ বর্জন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে কর্মীবান্ধব সিদ্ধান্ত। আগাম নির্বাচন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে রাজপথ গরম করার ষড়যন্ত্র বরং তাদের রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে দেবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সফলতা এবং জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ফাঁকাবুলি আওড়িয়ে কোন লাভ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের ভোট বিপ্লবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে, যা সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা এসেছে তার মহত্ব রক্ষা করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরব রয়েছেন। তিনি কোন ষড়যন্ত্রকে প্রশ্রয় দেবেন না। সুতরাং বিএনপিকে অনুরোধ করবো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র নয়, বরং নিজেদেরকে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত করে নির্বাচন প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
লেখক: উপ-তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত