ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম যুদ্ধ
হাসান হাফিজুর রহমান
হাসান হাফিজুর রহমান। ফাইল ছবি

ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ জাঞ্জিবার ১৪৯৯ সাল থেকে পর্তুগিজ শাসনে ছিল। ১৬৯৮ সালে ওমানের সুলতান তাদের বিতাড়িত করে দেশটি ওমানের অধীনে নেন। তারপর ১৮৫৮ সালে সুলতান মাজিদ বিন-সাঈদের নেতৃত্বে বৃটিশ সহায়তায় জাঞ্জিবার স্বাধীনতা অর্জন করে। জাঞ্জিবার টাউনকে রাজধানী করে সমুদ্রের পাড়ে স্থানীয় কাঠ দ্বারা রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব বন্ধু ব্রিটিশদের হাতে থাকায় প্রাসাদ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাখার খুব একটা প্রয়োজন ছিল না!

দীর্ঘ সময় বন্ধুত্ব থাকার সুযোগে ১৮৮৬ সালের দিকে ব্রিটিশরা জাঞ্জিবার ও এর সুলতানের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৯০ সালে খলিফা মৃত্যুবরণ করলে আলী বিন-সাঈদ সুলতান হন। তিনি জাঞ্জিবারকে ব্রিটিশদের উপনিবেশ ঘোষণা করেন এবং ভবিষ্যৎ সুলতান নির্ধারণের জন্য ব্রিটিশদের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা দেন। বিনিময়ে সুলতান ও প্রাসাদের নিরাপত্তা রক্ষায় ১,০০০ জনের একটি বাহিনী গঠনের অনুমতি দেওয়া হয়।

সুলতান আলীর মৃত্যুর পর ১৮৯৩ সালে সুলতান হন হামাদ বিন-তাওয়াইনি। তিনি এই বাহিনীকে সুলতানবিরোধীদের দমনে সফলভাবে কাজেও লাগান। জাঞ্জিবার সালতানাতের সুলতান হামিদ বিন তোয়াইনি ২৫ আগস্ট, ১৮৯৬ সালে মৃত্যুবরণ করলে সিংহাসনে বসেন খালিদ বিন বারঘাশ। কিন্তু মসনদের জন্য ব্রিটিশদের পছন্দ ছিল হামাদ বিন-মুহাম্মদ। ১৮৮৬ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক আশ্রিত রাজ্যের সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসতে হলে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অনুমতি নিতে হতো কিন্তু খালিদ বিন বারঘাশ তা না করায় ব্রিটিশরা চরম নাখোশ হন।

চুক্তি অমান্য করায় খালিদ বিন বারঘাশকে তারা ২৭ আগস্ট সকাল ৯ টার আগে প্রাসাদ ত্যাগ করতে বলেন। কিন্তু খালিদ ব্রিটিশদের কথা না শুনে প্রাসাদের চারপাশে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে সেখানেই অবস্থান করেন। এতে বৃটিশরা ভয়ানক ক্ষেপে যায়, তারা হার্বার এলাকায় তিনটি ক্রুজিয়ার, দুটি গানবোট, ১৫০ জন মেরিন সেনা ও নাবিক, এবং ৯০০ জন স্থানীয় যোদ্ধা নিয়ে প্রাসাদ ঘিরে ফেলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়।

এদিকে সুলতানের পক্ষে ছিল ২,৮০০ জাঞ্জিবার যোদ্ধা (সাধারণ জনগণ) এবং কয়েকশ দাস-দাসী। ব্রিটিশদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে খালিদ বিন বারঘাশ প্রাসাদ ত্যাগ না করায় ব্রিটিশবাহিনী সকাল ৯টা ২ মিনিটে প্রাসাদ লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঠের প্রাসাদে আগুন ধরে যায়। সুলতান খালিদের বাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গুলিবর্ষণ করলেও শেষ পর্যন্ত তারা ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে টিকতে পারেনি। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ব্রিটিশরা প্রাসাদে ঢুকে পড়ে। সমাপ্তি ঘটে সুলতান খালিদের ২ দিনের বাদশাহির, তার প্রায় ৫০০ লোক হতাহত হয়।

অপরদিকে ব্রিটিশ বাহিনীর মাত্র একজন নাবিক আহত হয়। ১৮৯৬ সালের ২৭ আগস্ট মাত্র ৩৮ মিনিটে সমাপ্ত হওয়া ইঙ্গ-জাঞ্জিবার যুদ্ধোই ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম যুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি।

ব্রিটিশরা এই যুদ্ধের পর হামাদ বিন মোহম্মদকে মসনদে বসায় এবং বন্ধুত্ব অটুট হয়। তারপর জাঞ্জিবার এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। কালের পরিক্রমায় এখন তারা তানজানিয়ার অংশ।

লেখক : পুলিশ ইন্সপেক্টর, ক্রাইম অ্যানালাইলিস শাখা, ডিআইজি অফিস, রাজশাহী

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর