ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

২১ আগস্ট নিয়ে স্মৃতিচারণ
সেদিন দেশরত্ন প্রমাণ করেছেন মানবসেবাই সবচেয়ে বড় রাজনীতি
আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে অকল্পনীয় এক নারকীয় গ্রেনেড হামলার ঘটনা বাংলাদেশে এক কলঙ্কময় অধ্যায়।

২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। সুধা সদনে ফেরার পর কর্মসূচি দেওয়ার চাপের মুখে নেত্রী বলেছিলেন 'এখন রাজনীতি করার সময় নয়।'

জননেত্রী শেখ হাসিনার মুখে উচ্চারিত হয়, 'এখন একমাত্র রাজনীতি আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহতদের দাফনের ব্যবস্থা করা।'

জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা সবসময়ই দেখি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব মানবিক গুণাবলিকে উত্তরাধিকার হিসেবে নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত হতে।

স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারহত্যা করা হয়। বিদেশে অবস্থান করায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে আরও দুটি নির্বাচনে ১৯৯৬-এ আওয়ামী লীগ ও পরে ২০০১-এ বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এ সময়ে ঘটে ইতিহাসের আরেকটি নৃশংস হত্যার ঘটনা, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। নারী নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ অসংখ্য নেতাকর্মী নিহত ও আহত হন এ গ্রেনেড হামলায়।বেঁচে গেলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। মূলত, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্যভিত্তিক মানবিক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।

২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সভার খোলা ট্রাকে নির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। ভাষণ শেষ করে তার ‘সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার’ উদ্বোধন ঘোষণার মুহূর্তে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে মুহূর্তের মধ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। পুরো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের ইতিহাসে যতনৃশংস সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর মধ্যে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সবচেয়ে ভয়াবহ।

ঘটনার পর নেত্রীর নির্দেশে ডিএমসিএইচ (DMCH)-এ গিয়ে আহত-নিহতদের সারি দেখলাম। চোখের সামনে আদা চাচা সহ কয়েকজনকে শহিদ হতে দেখলাম। ওটিতে অপারেশনরত আইভি রহমানের হাঁটু পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন পা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। ডাক্তারদের পরামর্শে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে CMCH -এ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। সঙ্গে থাকা বন্ধুবর নাজমুল হাসান পাপনের কিংকর্তব্যবিমূঢ় মুখচ্ছবি আজও মনে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালে থেকে ভোরে মর্গে যাই মৃতদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। ময়নাতদন্তের পর লাশ হস্তান্তরে সরকারের অনীহার কারণে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে লাশ পেতে। নেত্রী ঘণ্টা ঘণ্টায় খোঁজ নিচ্ছিলেন।

পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে রাতে স্বজনদের হাতে ২২টি লাশ হস্তান্তরে সক্ষম হই। লাশ প্রেরণের ব্যাপারে আমার আত্মীয় ফাহমি গ্রুপ (FAHMI GROUP)-এর এমডি এ আই চৌধুরী স্বপন ভাইয়ের সহযোগিতা ভোলবার নয়।

পরদিন থেকে দীর্ঘ সময় হাসপাতালগুলোতেই কাটাতে হয় সেবা সুশ্রসা, চিকিৎসার দেখভাল, বিদেশ প্রেরণ সহ নানাবিধ কাজে। মমতাজ ভাই, প্রয়াত বজলু ভাই, ড. আওলাদ, জাহাঙ্গীর, মান্নান সহ বড় একটি দল নেত্রীর নির্দেশে সার্বক্ষণিক আহতদের সেবায় নিয়োজিত ছিল। সেদিন সরকারের টলটলায়মান অবস্থায় কর্মসূচি না দিয়ে দেশরত্ন প্রমাণ করেছেন মানবসেবাই সবচেয়ে বড় রাজনীতি।

লেখক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস ও সাবেক ছাত্রনেতা।



এই পাতার আরো খবর