ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জনাব ফখরুল কোন শর্তের কথা বলছেন? এদেশে শর্তের ইতিহাস কি ভুলে গেছেন?
ড. সেলিম মাহমুদ
ড. সেলিম মাহমুদ

বিএনপির ফখরুল সাহেবের কাছে প্রশ্ন, আপনাদের নানা দেশবিরোধী অপপ্রচার সত্ত্বেও বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পাওয়ায় আপনারা এখন ভিসার শর্ত নিয়ে নানা কথা বলছেন! অথচ তারেক রহমানকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলো, সেটি ভুলে গেছেন। কানাডার উচ্চতর আদালত অর্থাৎ ফেডারেল কোর্ট একাধিক মামলায় আপনার দল বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, সেকথা আপনি ভুলে গেছেন। ফখরুল সাহেব আপনি ভুলে গেছেন, তারেক জিয়া কী শর্ত মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছিল! ২০০৮ সালে তারেক মুচলেকা দিয়েছিল, সে আর কোনদিন রাজনীতি করবে না। সেই শর্তেই তারেক জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করেছিল। 

জনাব ফখরুল অন্যান্য শর্তের কথা ভুলে গেছেন? ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের আগে আপনাদের মুচলেকায় কী কী শর্ত ছিল, সেটি ভুলে গেছেন? ক্ষমতায় আসতে পারলে আপনারা বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ বিদেশে রপ্তানি করবেন, এই শর্ত সাদরে গ্রহণ করে আপনারা বিদেশিদের দিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। একই অনুরোধ তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও করা হয়েছিল। সেই অনুরোধ করতে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ২০০০ সালের ২০ মার্চ বাংলাদেশে এসেছিলেন। শেখ হাসিনা উল্টো শর্ত দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে ৫০ বছরের গ্যাসের চাহিদা নির্ধারণ করে সে গ্যাস মজুদ রেখে তারপর এক্সপোর্ট করা যেতে পারে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়া সেই সময় দেশের গ্যাস সম্পদ রপ্তানির জন্য মুচলেকা দিয়েছিল। শেখ হাসিনার বিরোধিতার কারণে খালেদা জিয়া গ্যাস এক্সপোর্ট করতে পারেনি। বিএনপি জামাত সেই কাজটি করতে পারলে বাংলাদেশ অনেক আগেই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতো। শেখ হাসিনাই তখন আপনাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচিয়েছিলেন।

ফখরুল সাহেব আপনি ভুলে গেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর করা মামলা এবং তদন্তে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল। আর আরাফাত রহমান কোকোর পাচারের অর্থ ফেরত এনে অর্থপাচার প্রতিরোধ কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে। আপনি ভুলে গেছেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকো অর্থপাচার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, আর সেই অর্থ বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স এবং কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ হিসেবে নিয়েছিলেন কোকো।

জনাব ফখরুল, এদেশের শর্তের ইতিহাসের গোড়ার দিকের কথাও নিশ্চয়ই আপনি ভুলে গেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকারের একজন সেনা কর্মকর্তা হয়েও কী কী শর্তে জেনারেল জিয়া সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, সেই শর্ত গুলো কি আপনার মনে আছে? সেই শর্ত গুলো ছিল বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ গুলো ভুলুণ্ঠিত করা, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বৈপ্লবিক অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়া, পাকিস্তানের ভাবধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেয়া, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার না করা ইত্যাদি। জনাব ফখরুল, আপনি কি ভুলে গেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের সাথে আপনার নেতা জিয়ার কি কি শর্ত বিনিময় হয়েছিল? সেই সব শর্তের কারণেই জিয়া স্বঘোষিত খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল এবং পঞ্চম সংশোধনীতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে অনুসমর্থন (রেটিফিকেশন) করেছিল। সেই শর্ত আদান প্রদানের ধারাবাহিকতার কারণেই জিয়ার বিধবা স্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ভোটার বিহীন নির্বাচনে স্বঘোষিত খুনি রশীদকে বিরোধী দলীয় নেতা বানিয়ে জাতিয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছিল। 

জনাব ফখরুল আপনারা শর্তের রাজনীতি করে আসছেন। বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে হবে, পঙ্গু করে দিতে হবে, জাতির পিতাকে হত্যা করতে হবে এবং তার নাম মুছে দিতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মুছে ফেলতে হবে-এই সকল শর্ত মেনে আপনারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এদেশে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আপনাদের রাজনীতির মূল ভিত্তিই হচ্ছে ষড়যন্ত্রমূলক নানা শর্ত।

জনাব ফখরুল, কানাডার আদালতে কিভাবে এবং কি কারণে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করা হলো, সেই কথা হয়তো আপনারা ভুলে গেছেন। কানাডার ফেডারেল কোর্ট অর্থাৎ সর্বোচ্চ আদালত ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি মামলায় বাংলাদেশ থেকে কানাডায় গমনকারী কয়েকজন ব্যক্তির রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদন খারিজ করেছিল এই যুক্তিতে যে, আবেদনকারীগণ দাবি করেছিল তারা বিএনপির সদস্য। কানাডার আদালত বলেছিল, বিএনপি কানাডার আইনের দৃষ্টিতে একটি সন্ত্রাসী দল। তাই কোন সন্ত্রাসী দলের সদস্যকে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া যায় না। কানাডার ফেডারেল কোর্ট বলেছিল, বিএনপি যে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস, পেট্রল বোমা সহ নানা বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ, খুন খারাবি, গ্রেনেড হামলা, নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে, সেসব তথ্য তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন



এই পাতার আরো খবর