ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ঘর অন্ধকারে থাকলে কি বাহিরে আলো জ্বালানো যাবে না?
আহমেদ আল আমীন
আহমেদ আল আমীন

মানুষকে সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিশুদ্ধ হতে বলা হলে সমাজ থেকে নানা রকম প্রতিক্রিয়া আসে। কেউ মুখ টিপে হাসে। বিদ্রুপ করে। ব্যস্ততার কথা শোনায়। নানা রকমের মন্তব্য করে। 'এই আইছে একজন!' 'বাণী দিচ্ছেন না কি!' 'আমরা তো ঠিকই আছি, অমুকে কি করে দেখুন।' 'কতো লোকই তো কতো কিছু করে, আমরা করলে দোষ কী!'

সমাজ সংস্কারের সময়, মানুষকে সংশোধন, পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে ব্যক্তিমাত্রই এসব মন্তব্য ও কটু কথার শিকার হন। সবচেয়ে বেশি যে তীর্যক মন্তব্যটি একজন মানুষের উদ্যম নষ্ট করে দেয়, সেটি হলো ব্যক্তিগত আক্রমণ। তাকে বলা হয়, 'আগে ঘর সামলান, মিঞা। আপনার ঘরই তো ঠিক নেই। আমাদেরকে বাণী শোনাতে হবে না।'

এটা ঠিক যে, ন্যায়ের কথা, শুদ্ধতার কথা, পূর্ণতার বাণী পরিবার তথা কাছের মানুষকেই আগে শোনাতে হয়। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সবার আগে পরিবার তথা কাছের মানুষকেই আশপাশে পাওয়া যায়। এতে কাজটি সহজ হবে। সময় ও শ্রম কম লাগে। সবাই পরিবার তথা কাছের মানুষকে ন্যায়পরায়ণ ও সত্যনিষ্ঠ করতে পারলে তো পুরো গোষ্ঠী বা সমাজেরই লাভ। সর্বত্র শুদ্ধতার কথা, পূর্ণতার বাণী ছড়িয়ে পড়বে।

তাই এটা বলা যায় যে, আপনার কথা বা কাজটি ভালো। তবে আপনি কি এই কথাগুলো আপনার ঘরেও বলেছেন? আপনার পরিবার-পরিজনের কাছেও এই কথা বলেছেন?

তা না করে, সরাসরি ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে আক্রমণ। আপনার ঘর কি ঠিক করতে পেরেছেন?

এর থেকে একটি প্রশ্ন তৈরি হয়। নিজের পরিবার-পরিজনকে সংশোধন করতে না পারলে কি অন্যকে ভালো হতে বলা যাবে না? ঘর সামলাতে না পারলে কি বাহিরে সামলানোর যৌক্তিকতা থাকে না? ঘর অন্ধকারে থাকলে কি বাহিরে আলো জ্বালানো যাবে না? আমার ঘর পুড়ে গেছে, রক্ষা করতে পারিনি বলে; আমি কি আপনার ঘরের আগুন নেভাতে যাবো না?

 পৃথিবীর সব জায়গায়, সব ঘরে কি সূর্যের আলো পৌঁছে। এটা কি সূর্যের ব্যর্থতা? তাই বলে কি সূর্য আর আলো দেবে না? সবাই কি সূর্যের আলোকে গ্রহণ করতে পারে? যেমন পেঁচা। সততা, ন্যায়পরায়ণতাও এমনই; এটিও সবাই নিতে পারে না। এটি গ্রহণ করার মতো সামর্থ্য তো থাকতে হবে মনে।

সততা, ন্যায়পরায়ণতাকে গ্রহণ করার মতো লোক আমার পরিবার বা ঘরে নেই বলে, তারা এটি গ্রহণ করতে পারেনি। তাই আমি আপনার কাছে এসেছি। আপনি দেখুন আমার বক্তব্য বা কাজ ঠিক কি না। ঠিক হলে আপনি গ্রহণ করুন। অমুকে আমার কথা শোনেনি বলে, আপনিও শুনবেন না, ব্যাপারটি এমন হবে কেন? বাহিরে আলো জ্বাললে, ঘরেও তার আঁচ লাগে। বাহিরে আলো জ্বললে, ঘর আলোকিত হতে কতোক্ষণ লাগে?

ইতিহাস থেকে দেখা যায়, অনেক মহৎ লোকের পরিবারও তার কথা শোনেনি। তাই তারাও ঘর ঠিক করতে পারেননি। কিন্তু, সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণে তাদের অবদান অপরিসীম।

তাই আপনার কাছে সততা ও ন্যায়ের বাণী নিয়ে গেলে, তাকে হতোদ্যম করে দেবেন না। বরং তার পরিবার তথা কাছের মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন, এ রকম একটি সার্চলাইট আপনার ঘরে থাকতেও, আপনি অন্ধকারে কেন? পেঁচার মতো চোখ বন্ধ করে আছেন কেন? নিজে আলোকিত হতে পারছেন না কেন?

বিডি প্রতিদিন/এএ



এই পাতার আরো খবর