ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দেশের উন্নয়ন বনাম রাজনৈতিক খেলা
হাসিনা আকতার নিগার
হাসিনা আকতার নিগার

বলা হয়ে থাকে গণতন্ত্র মানুষের কথা বলে। তবে বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র শব্দটা কতটা জনগণের কথা বলে তা পরিস্কার নয়। কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব মানুষকে মানবিক হতে শেখায়নি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দুনিয়াকে বিশাল সমস্যার মুখে ফেলে দিয়েছে অর্থনৈতিক ভাবে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রায় সকল রাষ্ট্র ও সরকার বেসামাল। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ যে খুব বেশি ভালো নেই তা বুঝা যায় জনগণের দৈনন্দিন জীবনের দিকে নজর দিলেই। বাজারে জিনিসপত্রের আকাশ ছোঁয়া দাম আর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বলে দেয়, 'কতটা ভালো আছে বাংলাদেশ।' এরপর ব্যাংকি সেক্টরের টলমটল পরিস্থিতি গুজব না সত্য সে কথা নিয়ে বির্তক যাই হোক না কেন; সেখানে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিম্নমুখী তার প্রমাণ দেয় রেমিট্যান্সের হার কমে যাওয়া দেখে। 

অন্যদিকে, রাজার নীতি 'রাজনীতি' বলতে গেলে এখন এক পাক্ষিক। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে বিশ্বের মোড়ল দেশগুলো প্রশ্ন তুলছে নানাভাবে। আসলে কি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সকল অধিকারের সমন্বয় ঘটছে এ প্রশ্ন অনেকটাই আলোচ্য বিষয় ঘরে বাইরে। একটি দেশের রাজনীতি এক তরফা চলতে পারে না। এক দলের আধিপত্য গণতন্ত্রের সংজ্ঞাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সময়ের সাথে এ কথা মানতে হবে সরকার ও রাষ্ট্রকে। আজ বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের নির্বাচন, সরকার ও বিরোধী দল নিয়ে নানা বক্তব্য আসছে। এ অবস্থায় দেশের উন্নয়নের রাজনীতিকে অব্যাহত রাখতে হলে সরকারের প্রতি বিশ্বের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার অবসান ঘটাতে হবে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে। সে সাথে দল ও দেশের স্বার্থের লেবাসে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে সরকারের সিদ্ধান্তের মাত্রারিক্ত ব্যবহার কেউ যেন না করে  লক্ষ্য রাখতে হবে সরকারকেই। কারণ জনগণের দৃষ্টি এখন রাজনীতির মাঠে।

আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ সময়ের পথ চলাতে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, তার সুফল মানুষ পাচ্ছে।  তবে সে উন্নয়নকে ছাপিয়ে যদি অপরাজনীতি জনগণের সামনে দৃশ্যত হয় তা সঠিক ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রভাব ফেলবে তা বুঝতে হবে দল ও সরকারকে। যে কোন দেশের রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দল থাকবে এটাই নিয়ম। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য যোগ্য বিরোধী দলকে সঠিক  নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে আনা দরকার। বর্তমান বাংলাদেশে বর্তমানে বিরোধী দল বলতে কিছু নেই প্রকৃতপক্ষে। এ অবস্থা আগামী সময়েও যদি চলমান থাকে তবে তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলের জন্য হিতকর হবে না। 

সরকারের কাজের আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই এটা স্বাভাবিক। তাই বর্তমান সরকারের আগামী নির্বাচনে নিয়ে শঙ্কিত হবার কোন কারণ থাকার কথা না। কেননা দেশের সার্বিক উন্নয়ন জনগণের অজানা নয়। তাই আওয়ামী সরকারের এতো উন্নয়ন থাকা সত্ত্বেও তারা বিএনপিকে নিয়ে শঙ্কিত হচ্ছে কেন তা নিয়ে যেমন জনগণ ভাবছে। তেমনিভাবে বিএনপি রাজনীতির মাঠে দাঁড়াতে পারছে না নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কারণে নাকি অন্তরালে আর কিছু আছে তা জনগণকে বুঝতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সরকারকে সহনশীল হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। 

বিএনপি এখন তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে কতটা নাজুক পরিস্থিতিতে বিরাজ করছে তা কারো অজানা নয়। বলতে গেলে মূলধারার বিএনপি এখন নেতৃত্ব শূন্য। তারা জনগণের কথা বলার চেয়ে নিজেদের অবস্থান সৃষ্টি করতে ব্যতিব্যস্ত। আর আওয়ামী সরকারের ভান্ডারে আছে জনগণের পাশে থাকার হাজারো উদাহরণ। এ পরিস্থিতিতে মাঠের রাজনীতিতে কে কার সঙ্গে খেলবে তা বুঝতে জনগণের কালক্ষেপণ হবে না এটা আওয়ামী লীগকে অনুধাবন করা উচিত।  

বেশ কিছুদিন ধরে 'খেলা হবে খেলা হবে' এমন বাল্যখিল্যতা কথা নেতা নেত্রীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এসব কথা কারো জন্যই হিতকর নয়। অস্থির পরিবেশ তৈরি করে বা দলের পেশি শক্তি দিয়ে  আধিপত্য ঘটিয়ে রাজনীতির খেলা কোন দলের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। বরং রাজনীতির দাবার গুটির একটা ভুল চালে বিপদগ্রস্ত হবে দেশ ও জনগণ। তাই রাজনৈতিক খেলা হবে কথাটি বড় বেমানান আওয়ামী সরকারের দেশের উন্নয়নের সফল গাঁথার সাথে। তবে দীর্ঘমেয়াদি আওয়ামী সরকারের অতি সর্তক থাকতে হবে দেশ ও জনগণকে ভালোবেসে। কারণ জনগণ চায় একটি স্থিতিশীল পরিবেশ।

লেখক : কলামিস্ট 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর