ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ঘৃণ্যতম কলঙ্কময় অধ্যায় ২১ আগস্ট
আরিফুর রহমান দোলন
আরিফুর রহমান দোলন

বিরোধী মত দমনে ঘৃণ্যতম এক অপচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এটা পরিষ্কার যে ওই নৃশংসতম ঘটনার সঙ্গে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের যোগসাজশ ছিল। তাই যদি না হবে তাহলে কেন ওই সময় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলকে নিন্দা প্রস্তাব নিতে দেওয়া হয়নি? কেন গ্রেনেড হামলার পরে হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসা নেতাকর্মীদের পুলিশ হটিয়ে দিয়েছিল? কেন ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে যে সমস্ত নেতাকর্মী চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল তাদের চিকিৎসায় ডাক্তারদের অনুপস্থিতি ছিল?

একথা তো পরিষ্কার যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। জাতীয় সংসদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ভাগ্যক্রমে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ নিহত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী। আর মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী। চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন অনেকেই, অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন এখনও। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। যদি সেদিন বিকালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতেন সেটি মারাত্মক ভয়ংকর এক পরিণতি ডেকে নিয়ে আসত।

হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একথা তো খুবই পরিষ্কার যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্যই ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা; লক্ষ্য ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের হত্যা করা। এভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পরে ঘটনার তদন্ত না করে তড়িঘড়ি করে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার কেন ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপিয়েছিল? কেন রাতের অন্ধকারে ফায়ার ব্রিগেড দিয়ে সব আলামত ধুয়েমুছে ধ্বংস করা হয়েছিল? কেন অবিস্ফোরিত গ্রেনেড ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করে রাতারাতি নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল? কেন হামলার পর আওয়ামী লীগ নেতারা মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলাও নেয়নি? বিস্ময়করভাবে আমরা লক্ষ্য করেছি গ্রেনেড হামলার সময় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব কর্মকর্তা দায়িত্বে অবহেলা করেছিলেন পরবর্তীতে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচাতে জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে বড়সড় অপরাধ করেনি?

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্তে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করে তা ছিল আসলে একটি আজ্ঞাবহ কমিশন। তাই যদি না হবে মাত্র এক মাস দশ দিনের মাথায় বিচারপতি জয়নুল আবেদীন যে ফরমায়েশি প্রতিবেদন জমা দেন (১৬২ পৃষ্ঠার) তাতে প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করা হয়। বিচারপতি জয়নুল আবেদীন মূলত পুরো জাতির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তামাশা করেন। পরবর্তীতে জয়নুল আবেদীন এর পুরস্কারও পান, তাকে পদোন্নতিও দেওয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচাতে যে জজ মিয়া নাটক সাজালেন, এটি কেন করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর কি তৎকালীন তদন্তের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা দিতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর কি তদন্তকারীদের তদারক যারা করেছিলেন তারা দিতে পারবে? তৎকালীন রাজনৈতিক এবং পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বে যারা ছিলেন সেই নেতৃত্ব কি দিতে পারবে? আমরা যতদূর জানি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকে তৎকালীন সেনা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমী এক জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাস ছিল গ্রেনেড হামলার ঘটনা।

আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছি, ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যতদিন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল তাদের পক্ষ থেকে অবিশ্বাস্য মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ নিজেরাই জনগণের সহানুভূতি-সমর্থন পাওয়ার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য ছিল, গ্রেনেড হামলা এমনভাবে করা হয়েছে যেন শেখ হাসিনা বেঁচে যান এবং পরবর্তীতে জোট সরকারকে একটি অস্বস্তিকর, বিব্রতকর বিতর্কের মধ্যে ফেলা যায়। ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সংসদ সদস্যরা ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বক্তৃতা দেন। বিএনপির এমপিরা বলেছিলেন, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়ে এখন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে চায়। আর সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তখন বিএনপি ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতিও অঙুলি নির্দেশ করেছিল। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গোটা দেশবাসীকে একথাই বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করেছিল যে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার  পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি কলকাতায় পালিয়ে থাকা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনায় ১৪ জনের একটি দল এই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার ও গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ওই সমস্ত মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য জোট সরকারের সমর্থক পত্রপত্রিকায় জোরালোভাবে প্রচার করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমর্থক লেখক-বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন সভা-সেমিনার সিম্পোজিয়ামে একই সুরে লাগাতারভাবে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা পত্রপত্রিকায় কলাম লিখেছেন এবং সেই মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য প্রচারে সর্বাত্মকভাবে সহায়তাও করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে যখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রকৃত সত্য প্রকাশ পেয়েছে তারপর থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সহযোগীরা এই বিষয়ে চুপ হয়ে গিয়েছেন, তারা আর বেশি কিছু বলেননি।

আমরা সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেছি যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা এবং গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা বিভিন্নভাবে ২১ আগস্ট হামলার বিষয়ে মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করেছিলেন এবং প্রচারের বিষয়ে সবরকম সহায়তা করেছিলেন। প্রশ্ন, তারা কেন এই কাজ করেছিলেন, কী স্বার্থে করেছিলেন, কার স্বার্থে করেছিলেন— এ বিষয়টি এখন জানা জরুরি।

দেশবাসীর কারোরই একথা বুঝতে আর অসুবিধা হয়নি যে, বিএনপি-জামায়াত সরকার জেনেবুঝে সম্পূর্ণই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রকৃত ঘটনা আড়াল করেছিল। এমনকি উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী এবং প্রকৃত আসামিদের আড়াল করার চেষ্টাও করেছিল। শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকরা আওয়ামী লীগকে ফাঁসিয়ে বিরোধী দলকে আরও দুর্বল করার সব রকম চেষ্টাও নিয়েছিল, যা আসলে পরবর্তীতে ব্যর্থ হয়েছিল।

যদিও ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরতরা বিভিন্নভাবে একান্ত আলোচনায় বলার চেষ্টা করেছেন তাদেরকে আসলে পুলিশই ভুল বুঝিয়েছিল। পুলিশই উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল এবং তারা প্রকৃত সত্য বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আর পরে যখন সত্য জানতে পারেন তখন আসলে তাদের কিছু করণীয় ছিল না। কিন্তু এই বক্তব্য কি আসলে গ্রহণযোগ্য? মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং যারা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রাজনৈতিক নীল-নকশা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছেন আমি মনে করি তাদেরকেও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। যে সুপরিকল্পিতভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও এর শীর্ষ নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার কাজটি করা হয়েছিল সেটি তারা কেন করলেন এর জবাব তাদেরকে দিতেই হবে।

একটি কথা আজ প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে যায়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পর তৎকালীন গণমাধ্যমে সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনিও কিন্তু একই সুরে সেদিন কথা বলেছিলেন বলে আমরা পরবর্তীতে জানতে পারি। তিনি আকারে- ইঙ্গিতে আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এই ঘটনার সঙ্গে সরকারের কোনো যোগসূত্র নেই।

একটি প্রশ্ন জোরেশোরেই আছে। কেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে কোনো ধরনের তদন্ত করতে নিষেধ করেছিলেন? কেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তার পছন্দের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের দিয়ে ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যমূলক তদন্ত করতে বলেছিলেন? আমরা সেই তদন্ত প্রতিবেদন আদৌ প্রকাশ হয়েছে কি না জানি না। কারণ, এখনও পর্যন্ত কোথাও সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেছে বলে জানা যায় না। একটা কথা পরিষ্কার। কী সেটা? কথাটা হচ্ছে, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার খুবই উদ্দেশ্যমূলকভাবে, সংগঠিতভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশের বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা, যারা এর দায়িত্বে তাদেরকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষে নানা ধরনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে আসলে বলেছিলেন, পেশাদার খুনিচক্র, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং ভারত এই হামলার জন্য দায়ী— সেটিই যেন প্রচার-প্রকাশ করা হয়। তাই যদি না হবে, মামলার আলামত কেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে নষ্ট করা হলো? কেন, ওই সময় বিদেশ থেকে আসা ইন্টারপোল, এফবিআইয়ের বিশেষজ্ঞদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হলো? যদিও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের আনাকে লোকদেখানো একটি কৌশল বলে আজও মনে করা হয়।

বিভিন্ন সময়ের তদন্তেই এটা প্রমাণিত হয়েছে, ২১ আগস্ট হামলায় গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন বিএনপির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শিল্প উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর আপন ভাই তাজউদ্দিন। সেই তাজউদ্দিন কোথায়? এটিও বিভিন্ন সময় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, সেই তাজউদ্দিনকে ভিন্ন নামে পাসপোর্ট করিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। আর এই তাজউদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে একাধিকবার বৈঠক করেছিল তার ভাই আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারি বাসভবনে। শুধু কি তারাই জড়িত ছিল? নাকি জোট সরকারের আরও অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জড়িত ছিল? একটি তদন্ত কমিশনও এ ব্যাপারে গঠিত হওয়া উচিত বলে মনে করি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য বর্তমানে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ্ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় জানা যায়। কোথায় সেই কায়কোবাদ যার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ? শুরু থেকেই ছিল, যিনি পরবর্তীতে বিচারে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন। যার বিরুদ্ধে আদালত রায় দিয়েছে তাকে কেন বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রাখা হয়েছে? এতে কী প্রমাণিত হয়? ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্ষমতাসীনদের যোগাযোগ কতটা গভীর ছিল? ওই সময়ের সরকারের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অবস্থান আসলে কী ছিল সেটা কী খতিয়ে দেখা জরুরি নয়?

একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার এবং সেই সরকারের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে, ধ্বংস করতে নৃশংস ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালাতে পারে তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। কখনও বিএনপি-জামায়াত এর দায় এড়াতে পারবে? যদি দায় এড়ানোর চেষ্টা করেও, ইতিহাস কি তাদের ক্ষমা করবে? ২১ আগস্টের মতো ভয়ংকর নৃশংস ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ঘৃণ্য ভূমিকা দেশের মানুষ কী সাধারণভাবে গ্রহণ করেছে? মোটেও করেনি। বরং ওই ঘটনা বিএনপির জন্য একটি কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবেই আজীবন বিবেচিত হবে এবং এই কলঙ্ক কখনওই বিএনপি-জামায়াত মুছে ফেলতে পারবে না। ইতিহাস কখনওই বিএনপি-জামায়াতকে ২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার জন্য ক্ষমা করবে না। তাদেরকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে এবং একটি খুনিচক্র হিসেবে তাদেরকে এর দায়দায়িত্ব নিয়েই পথ চলতে হবে।

লেখক: সম্পাদক, ঢাকা টাইমস; চেয়ারম্যান, সমাজসেবামূলক সংস্থা কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন ও সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, কৃষক লীগ।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর