ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‌‌‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ অন কমিউনিটি ক্লিনিক’
ডা. মো. মনোয়ার হোসেন

বাংলাদেশে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে অপরিহার্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী সফল উদ্যোগ। এটি বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতা যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। এই উদ্ভাবনী প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যখন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন কর্তৃক কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিষয়ে একটি রেজুলেশন উপস্থাপন করা হয়। প্রথমবারের মতো উপস্থাপিত এই ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা সর্বসম্মতিক্রমে গত ১৬ মে ২০২৩ তারিখে গৃহীত হয়। স্বাস্থ্য কূটনীতি বহুপাক্ষিক ফোরামে একটা দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে কিভাবে সহায়তা করতে পারে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আলোচ্য রেজুলেশন তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই অনন্য কমিউনিটি-ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করেন। ২০০১ সালের পরে বিভিন্ন সরকারের সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর নির্মাণ ও এগুলোর পরিষেবা স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হন, তখন তিনি ‘বাংলাদেশে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস’ প্রকল্প চালুর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ৪র্থ স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা সেক্টর প্রোগ্রামের অপারেশনাল প্ল্যানের অধীনে এই প্রকল্প চলমান থাকে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বাংলাদেশের মূল ধারার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কমিউনিটি ক্লিনিকের অন্তর্ভুক্তিকরণঃ বিগত কয়েক দশকে কমিউনিটি ক্লিনিক চালুসহ একটি বহুমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। গড় আয়ু, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারসহ জনস্বাস্থ্যের অগ্রগতি নির্দেশক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ আজ প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশকে এখন বলা হয়, কম খরচে একটি ভাল স্বাস্থ্যসেবার দেশ। এর জন্য শেখ হাসিনার সরকার বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার।

স্বাস্থ্যখাতে বর্তমান সরকারের একটি ফ্লাগশিপ কর্মসূচি হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। এই উদ্যোগের অধীনে তৃণমূল পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতি ৬,০০০ জন মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ লাভ করেছে। এর ফলে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো এখন নারী, শিশু, বয়স্ক নাগরিকসহ সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। দেশের দরিদ্রদের, বিশেষত নারীদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে এসকল ক্লিনিক বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাপক আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কেবল স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাই দেয় না। এটি জনস্বাস্থ্য সমস্যাসমূহ এবং পেশাদার স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছ থেকে সেবা গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে, এটি অপেশাদার এবং প্রথাগত স্বাস্থ্য কর্মীদের উপর মানুষের নির্ভরতা হ্রাস করতে সাহায্য করেছে। অধিকন্তু, ক্লিনিকগুলো নারীদের তাদের ঘরের বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে সাহায্য করছে। এর ফলে পূর্বে প্রচলিত বাড়িভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের ব্যবহার কমিয়ে নারীদের ক্রমবর্ধমানহারে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেবা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক নির্ণয় ও পরীক্ষা, টিকাদান কর্মসূচি, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং প্রয়োজনে উচ্চ-স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফারেল সহ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ইন্সুলিন, উচ্চ রক্তচাপের ঔষধসহ প্রায় ৩০ ধরনের ঔষধ এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করে। এতে দেশের সামগ্রিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কার্যক্রম উন্নতর হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবং এই কেন্দ্রগুলোতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করেছে। এ আইনটির আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মালিকানা এবং পরিচালনা ট্রাস্টি বোর্ড এবং উপদেষ্টা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা কেউই সরকারি কর্মচারী নন এবং উপদেষ্টা বোর্ডের সভাপতি হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আইনটি ট্রাস্টকে সরকারি সহায়তার পরিপূরক হিসেবে তহবিল সংগ্রহের অনুমতি দেয়, যা ক্লিনিকের অব্যাহত কার্যক্রম এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানঃ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা ও রুপকার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার অনুপ্রেরণায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দক্ষ পরিচালনায় কমিউনিটি ক্লিনিকের বর্তমান সাফল্য তরান্বিত হয়েছে। উপদেষ্টা বোর্ডে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা দেশের অতিশয় দরিদ্র জনগণের জন্য কল্যাণমুখী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে তার দৃঢ় প্রতিশ্রতির স্বাক্ষর।

সদ্য স্বাধীন দেশে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণাটি প্রথম প্রবর্তন করেন। ১৯৯৮ সালে এ সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণের পর, ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতীতে দেশের প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন এবং তারপর থেকে এই উদ্যোগ সারা বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ধারাবাহিক সমর্থন সমাজের সকল অংশের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে এবং তার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এ পর্যন্ত স্থাপিত প্রায় ১৪৫০০ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। কমিউনিটি-ভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য হ্রাসে অবদান রাখবে। উল্লেখ্য, এটি জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত দারিদ্র্য হ্রাস সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১ এর বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যখন মানুষ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যবস্থাপনার সুযোগ লাভ করে, তখন তারা সুস্থ থাকতে পারে এবং ব্যয়বহুল স্বাস্থ্য  সংকট এড়াতে পারে। উপরন্তু, সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সুস্থ ও কর্মক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তদুপরি, সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই প্রকল্প দারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করেছে। স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন এবং স্থানীয় সরকারের নিবাচিত কর্মকর্তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে কমিউনিটি-ভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে সহায়তা করেছে এবং তাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখে চলেছে।

প্রয়োজনীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৩ (সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ) অর্জনে সরাসরি অবদান রাখে। তাছাড়া এটি পরোক্ষভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২ (ক্ষুধা মুক্তি), ৪ (মানসম্মত শিক্ষা), ৫ (লিঙ্গ সমতা), ৬ (নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন), ৮ (শালীন কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) এবং ১০ (বৈষম্য হ্রাস) সহ অন্যান্য বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

জাতিসংঘ কর্তৃক ‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’র স্বীকৃতিঃ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিকের সফল উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। জাতিসংঘ এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সাথে প্রায় ৪ মাসেরও বেশি নিবিড় আলোচনার পর বিগত ১৬ মে ২০২৩ তারিখে ‘কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা : সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবায় একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামের একটি ঐতিহাসিক রেজুলেশন প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে।

৭০টি দেশ এই রেজুলেশন কো-স্পন্সর করেছে, যা বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থানের স্বাক্ষর বহন করে। রেজুলেশনটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে সারা বাংলাদেশে কমিউনিটি ভিত্তিক মডেল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। রেজুলেশনটিতে এই উদ্যোগকে ’দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সেবায় সাম্য আনয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

এই রেজুলেশন ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি-ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে, কারণ এটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং দাতাদের জাতিসংঘ সদস্য দেশসমূহে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই মডেলটি বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানায়।

এই রেজুলেশন গ্রহণের ফলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এই কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় মুহূর্ত এবং আমাদের বহুপাক্ষিক কূটনীতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। আশা করা যায় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী মডেল বিশ্বব্যাপী একটি সর্বোত্তম অনুশীলন উদাহরণ হিসাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে অনুসরণ করা হবে যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।

এই রেজুলেশনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সারা বিশ্বে সফলভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। দ্বিতীয়ত, রেজুলেশনটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় উদ্ভাবনী পদ্ধতির শক্তিশালীকরণকে সাহায্য করার লক্ষ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। তৃতীয়ত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাগুলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন এবং টেকসই বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।

সাধারণ পরিষদে গৃহীত এই রেজুলেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা অর্জনের পথে বাংলাদেশের দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলার স্বীকৃতি। এ ছাড়াও, এটি তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য উন্নয়ন অগ্রগতির স্বীকৃতি যা আগামী দিনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে।

অত্যন্ত আনন্দের বিষয় এই যে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলতি ৭৮তম অধিবেশনের সাইডলাইনে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান আতিথ্যে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীবৃন্দসহ উচ্চ পর্যায়ের সদস্যদের অংশগ্রহণে এই বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

লেখক : মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রাক্তন উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, নিউইয়র্ক

 

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর