ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের উৎসবকে’ বিঘ্নিত করছে
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, চলমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে “রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের উৎসবকে’ বিঘ্নিত করছে” শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ফ্রি প্রেস জার্নালে। নিবন্ধটি লিখেছেন ভারতীয় সাংবাদিক জয়ন্ত রায় চৌধুরী। সেই লেখার চুম্বকাংশ নিম্নে তুলে ধরা হল :

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বংলাদেশ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। কারচুপির আশঙ্কা এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির এই পদক্ষেপে নির্বাচনের বৈধতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। যা পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে পশ্চিমাদের অনেক প্রশ্ন থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে কোনো উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নেই। এমনটিই মনে করেন দলটির প্রভাবশালী নেতা শামসুল হক টুকু।

এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন জাকের পার্টির নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হেনা রাজ্জাকি। তার মতে, সংবিধান মেনেই নির্বাচন হচ্ছে। তবে, বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি রাজনৈতিকভাবে এই নির্বাচনকে কম গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

ভারতের জন্য সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, সেখানকার বিরোধীদল ভারতকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সমর্থক হিসাবে দেখছে এবং এতে প্রতিবেশীর প্রতি ক্রোধ সৃষ্টি হতে পারে তাদের। আমরা দেখেছি, ভারত বিশ্বকাপে হেরে যাওয়ার পর বাংলাদেশিদের উদযাপন। যা প্রতিবেশীর প্রতি সৃষ্ট ক্ষোভ থেকেই হয়েছে বলে ধারণা করছি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব পিনাক আর চক্রবর্তী বলেছিলেন, সাধারণত নির্বাচনের সময় বেশিরভাগ প্রতিবেশী দেশে ভারত বিরোধী চেতনা বেড়ে যায় এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

ভারতের নিকটতম প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ। ভারতের উত্তর-পূর্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠী ও নিজের দেশের সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎখাত করেছে তাদের সরকার। এতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অনেক বেশি উপকৃত হয়েছে।

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের জিডিপি নাটকীয়ভাবে ১০২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সেখানে স্বাক্ষরতার হার, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদির উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি, দীর্ঘদিন একটি দল ক্ষমতায় থাকায় ভিন্ন শাসন শৈলী সৃষ্টি হচ্ছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন অনেকে।

২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর পর থেকেই বিএনপি বিশৃঙ্খল। আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ আওয়ামী লীগের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির সেই অংশগ্রহণ এখন দূরবর্তী সম্ভাবনা বলে মনে হচ্ছে।

ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে আসছে ভারত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যার ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়। বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগকে বেশি ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে দেখে ভারত। কারণ, এর আগে বিএনপি বাংলাদেশের লঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এমনকি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে তারা বাংলাদেশের মাটিও ব্যবহার করতে দিয়েছে। যখনই তারা ক্ষমতায় গিয়েছে তখনই এই ধরণের কাজ করেছে তারা।

এই কারণগুলোর জন্যেই শেখ হাসিনার সরকারকে নিয়ে পশ্চিমাদের বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও তা আমলে নেয়নি ভারত। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোয়াড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যাকে মূলত চীন বিরোধী সামরিক গোষ্ঠী হিসাবে দেখা হয়।

তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের অভিযোগুলো উপেক্ষা করা খুব কঠিন। কারণ, অনেকেই বাংলাদেশের নির্বাচনকে একপাক্ষিক হিসেবে দেখছেন। এই বিষয়ে ওপি জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং ভারতের কৌশলগত বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের প্রাক্তন ফেলো শ্রীধা দত্ত বলেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভাব অবশ্যই বিভিন্ন মহলের উপলব্ধির উপর প্রভাব ফেলবে এবং অনেক দেশই প্রশ্ন উত্থাপন করতে থাকবে। ভারতকে এই সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গিগুলো আমলে নিতে হবে।

বাংলাদেশের আকাশে যে মেঘ ঘনীভূত হয়েছে তা উপেক্ষা করা ভারত তথা বিশ্বের ভালো কিছু হবে না। বিশেষ করে ভারতের জন্যে, কারণ ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থানে আছে এবং যা একটি উঠতি “টাইগার অর্থনীতি”। তাই যতোদিন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ততোদিন তা ভারত ও বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক।



এই পাতার আরো খবর