ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দুর্ভিক্ষ আরব বসন্ত অতঃপর
মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি
মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

৮ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনাড়ম্বরভাবে নিজ নির্বাচনি এলাকা এবং জাতির জনকের সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলেন। এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসেন তিনি। ২১ নভেম্বর সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের সাগর ভাই ও শাইখ সিরাজ ভাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেঁটে হেঁটে উপস্থিত সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় আমাদের সামনে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন। সাগর ভাইয়ের শরীরের খবর নিলেন এবং পায়ে ব্যথা নিয়ে কেন দাঁড়িয়ে আছে-জিজ্ঞেস করলেন। নিরাপত্তারক্ষী ও সেনা কর্মকর্তাদের বললেন ব্যারিকেডের ওপারে তাকে ভিভিআইপি শামিয়ানার নিচে আয়োজিত সোফায় বসার ব্যবস্থা করতে। আর শাইখ সিরাজ ভাইকে বললেন গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটে তার জমিতে তারই তত্ত্বাবধানে বোনা ফসলের মাঠ দেখে আসতে। সাগর ভাই অভিযোগ দিলেন, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত খামারে উৎপাদিত ধানের চাল, মুড়ি, চিড়া কিংবা দেশি মুরগির ডিম কিছুই পাননি। প্রধানমন্ত্রী হেসে শাইখ সিরাজ ভাইকে দেখিয়ে বললেন, ওই তো সব নিয়ে আসছে, ওকে জিজ্ঞেস করো তোমার ভাগ গেল কই? মাটি ও মানুষের সঙ্গে এমন সম্পর্ক থাকা প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে এ ঘটনার ১৭ দিন পর (৮ ডিসেম্বর) গোপালগঞ্জে উচ্চারিত হলো দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা। টুঙ্গিপাড়ার কোটালীপাড়ায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, বিএনপি ‘মার্চের দিকে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। শুধু দেশের নয়, বাইরের দেশেরও পরিকল্পনা। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে।’

দুর্ভিক্ষ শব্দটির সঙ্গে পরিচয় আমার কৈশোরে। ১৯৭৪ সাল। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার জন্য শূন্য হাতে নতুন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু দেশের তথাকথিত বাম শক্তি একদিকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অরাজকতা শুরু করে দেয়, অন্যদিকে তাদের মিডিয়া তথা বেশকিছু দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা আংশিক সত্য ও মিথ্যা সংবাদের ভিত্তিতে দেশের সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে। আড়তদার, মজুদদার ও সিন্ডিকেটকারীরা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও চোরাচালান করে নাজুক পরিবেশ সৃষ্টি করে। এরই মাঝে এক খোঁড়া যুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশমুখী এক জাহাজভর্তি খাদ্যপণ্য আসার পথ বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসামগ্রী প্রভৃতির প্রবল সংকটের সঙ্গে খাদ্য সংকটের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অভিশপ্ত সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে আজও শিউরে উঠতে হয়। আমার বাবা তখন মফস্বল শহরের এক সরকারি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার।

তখনো এ দেশের মানুষ ঋণখেলাপি বা ব্যাংকখেকো জাতীয় শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিল না। ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা ছিলেন সৎ এবং ছা-পোষা মানুষ। স্কুলগামী পাঁচ ভাইবোন, কলেজে পড়া মামা আর বাবা-মা মিলে মধ্যবিত্তের আবর্তে ঘুরেছিল আমাদের পরিবার। বাবা মাসের বেতন পেয়ে মায়ের হাতে টাকা তুলে দিতেন। দুর্ভিক্ষের দিনে মা কেমন করে যে সংসারের ঘানি টেনেছেন, তা বলা বা লিখে বোঝানোর মতো নয়। মনে পড়ে, মা বিভিন্ন উপকারিতার কথা বলে মিষ্টি ও গোল আলু সিদ্ধ, রিলিফের ছাতু এবং গুঁড়াদুধ খাওয়াতেন আমাদের। পরে জেনেছি ভাতের ওপর চাপ কমাতে এই উপায় বের করেছিলেন তিনি। বাবা ছিলেন মাইজভান্ডার তরিকার মানুষ। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে একদল ভক্ত, আশেকান, পাগল, দেওয়ানা ও ফকির-ফাঁকরা নিয়ে জিকির আসকার আর খিচুড়ি না খেলে দিন কাটত না বাবার। দুর্ভিক্ষের দিনেও মা আমাদের বাবার মনরক্ষায় খিচুড়ি রান্না অব্যাহত রাখলেন। তবে পরিবর্তন এলো রন্ধন পদ্ধতিতে। দানাদার খিচুড়ির বদলে নিতান্ত তরল খিচুড়ি চালু হলো, যা বণ্টন করা হতো মগে ভরে। তবুও গো-গ্রাসে সবাই সেই তরল খিচুড়ি গিলতাম। বাইরে অনেক ভিখারি অপেক্ষা করত। কারও কারও কোলে শিশু, কিন্তু মায়েদের বুকের দুধ শুকিয়ে গেছে। এই তরল খিচুড়িই শিশুদের কাক্সিক্ষত খাবার। অনেক ক্ষুধার্ত মানুষের দেখা মিলত ডাস্টবিনের চারপাশে। কেউ মারা গেলে চাঁদা তুলে কবর দিতে হতো। এসবই আমার নিজের চোখে দেখা, কোনো নাটক-সিনেমার কাহিনি বা কোনো গল্প, উপন্যাস বা প্রবন্ধের লেখা নয়। তাই আজ দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস মনের শঙ্কা জাগায়। তখনকার চেয়ে এখন জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। তবে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় আমরা কমবেশি কিংবা মোটামুটি ভালোভাবেই খেয়েপরে দিন কাটাচ্ছিলাম। তারপরও অর্বাচীন কতিপয় মানুষের কারণে আমরা কষ্ট ভোগ করি। তাদের কেউ ডিম, মুরগি বা গো-মাংসের দাম বাড়ায়; আবার কারও নজর পিঁয়াজ-কাঁচামরিচের ওপর। তাদের কারসাজিতেই বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। কৃষিপ্রধান এ দেশে ডলার সংকটের মুহূর্তেও আমরা গাজর, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, মসলা, ফল ইত্যাদি আমদানি করি। আর অর্বাচীন মন্ত্রী বলেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ফলাফল আরও খারাপ হবে। মন্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসায়ী নেতা বলেন মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই। আসলে শর্ষেতে ভূত থাকলে ভূত তাড়ানো যায় না, এমন কথাই আজ বাতাসে ভাসছে। চুয়াত্তরের বৈরী মিডিয়ার মতো এখন চলছে বৈরী সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। ৯ মাসের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা লুট করেছিল বলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার বা ব্যাংকে টাকা ছিল না। কিন্তু পত্রিকা মতে, এখন পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকে কেন তারল্য সংকট- এই প্রশ্নের উত্তর নেই। আবার ১৭টি ব্যাংকের অবস্থা নাজুক বলে অতি সম্প্রতি তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এমতাবস্থায় একটা দুর্ভিক্ষ দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা সত্যি দুশ্চিন্তার বিষয়। জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ইমারজেন্সি ফান্ড (ইউনিসেফ) কোনো দেশে মূলত চারটি কারণে দুর্ভিক্ষ হয় বলে উল্লেখ করেছে। কারণগুলো হচ্ছে ক) রোগ ও অপুষ্টি, খ) জলবায়ু পরিবর্তন, গ) সংঘাত, ঘ) বাধ্য হয়ে নিজ ভিটা ত্যাগ বা বাস্তুচ্যুতি। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি বলেছে, শুধু সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও কেনিয়াতেই ৭০ লাখ শিশুসহ মোট ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ অভুক্ত থাকে। আফ্রিকার এই তিন দেশে দুর্ভিক্ষের কারণ ‘কনফ্লিক্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট’ অর্থাৎ সংঘাত ও জলবায়ু। ব্রিটিশদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ২১টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের যৌথ সংস্থা অক্সফাম ওপরে উল্লিখিত কারণগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যর্থতাকেও দুর্ভিক্ষের কারণ বলে চিহ্নিত করেছে। ইন্টারনেটে থাকা একটি প্রকাশনায় আফ্রিকার রাজনীতি বিষয়ে গবেষণা করা ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যালেক্স ডি অয়ালকে উদ্ধৃত করে অক্সফাম উল্লেখ করেছে যে, ‘দুর্ভিক্ষ হলো একটি রাজনৈতিক কলঙ্ক। দুর্ভিক্ষ রোধ করার ক্ষেত্রে যা করণীয়, তা করতে সরকারের সক্ষমতা ও সদিচ্ছা যদি চরমভাবে ভেঙে পড়ে, তবেই কেবল কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ হয়।’ বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ঝুঁকিতে থাকলেও এ দেশের অবস্থা অন্য বহু দেশের চেয়ে অনেক ভালো। এ দেশের মাটি পশ্চিমা দেশের মতো বরফে ঢেকেও যায় না, আবার মরুভূমির বালুর মতো উত্তপ্তও হয় না। সমুদ্র উপকূলীয় কিছু এলাকা বাদ দিলে লবণাক্ত জমিও তেমনটা নেই দেশের অন্য কোথাও। একটি বীজ মাটিতে পড়লেই এই মাটির আশীর্বাদে তা গাছ হয়ে জন্মে। আর মরুর দেশে দেখেছি একটি চারার জন্য বা গাছ বাঁচাতে ড্রেনের পানি জীবাণু ও দুর্গন্ধ মুক্ত করে পাইপ দিয়ে সারা দিন টিপ টিপ করে পড়ার ব্যবস্থা করতে হয়। সুতরাং কেবল বিরূপ জলবায়ুর কারণে এ দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে, দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন থাকলেও আফ্রিকার বহু দেশ, সিরিয়া কিংবা আফগানিস্তানের মতো তা সশস্ত্র সংঘাতের রূপ ধরেনি। গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়লেও রোহিঙ্গা বা ফিলিস্তিনিদের মতো শরণার্থী হয়নি কেউ। এ দেশের মানুষের খাদ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ও পুষ্টির মান বিশ্বের অনেক দেশের চেয়েও ভালো। এমনি এক প্রেক্ষাপটে মার্চে ঠিক কীভাবে দুর্ভিক্ষ ঘটানো সম্ভব- তা নিয়ে ভাবতে হবে।

এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকেই উচ্চারণ করেন একটি শক্তিধর দেশের নাম। এই দলভুক্তরা মনে করেন, অনেক দৌড়ঝাঁপ করা একটি দেশের দূতাবাস এবং সে দেশের রাষ্ট্রদূতের হঠাৎ নীরবতা কোনো বড় ঝড়ের পূর্বাভাস। আর এই ঝড় হতে পারে নির্বাচন, গণতন্ত্র, কিংবা মানবাধিকার প্রশ্নে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে নিষেধাজ্ঞা কিংবা শ্রমনীতি ও অন্যান্য ইস্যুর ভিত্তিতে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা। আরেকটি হতে পারে জাতিসংঘে প্রভাব খাটিয়ে শান্তিরক্ষা মিশন সংকুচিত করা বা বন্ধ করা। এ তিনটি পদক্ষেপের প্রত্যেকটি বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ সীমিত করা তথা অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তথা দুর্ভিক্ষের পটভূমি তৈরি করতে সক্ষম। এ তিনটি অস্ত্র ব্যর্থ হলে যা হতে পারে, তার প্রতি অতি সম্প্রতি ইঙ্গিত করেছে মস্কো। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের ব্রিফিং চলাকালে সেদেশের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিবিদ মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, জনগণের ভোটের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্তোষজনক মনে না হলে আরব বসন্তের মতো করে বাংলাদেশকে আরও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আরব বসন্ত বলতে রাশিয়া ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছে- তা স্পষ্ট নয়। কারণ ২০১০-১১ সালে আরব অঞ্চলে তথা মধ্যপ্রাচ্যে ও উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তথাকথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে একেক ধরনের সরকারবিরোধী আন্দোলন, বিক্ষোভ ও সশস্ত্র সংঘাত হয়। সরকারের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক স্থবিরতার বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ২০১০ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিউনিসিয়ায়। এর ১১ দিন পর ২৯ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে তা ছড়িয়ে পড়ে আলজেরিয়ায়। এভাবে মাত্র দুই মাসের মধ্যে (১৮ ডিসেম্বর ২০১০ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১) আরব বসন্ত নামে পরিচিত এরকম বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ে আরও ২৭টি দেশে, যেখানে কোথাও রাজতন্ত্র, কোথাও স্বৈরতন্ত্র, কোথাও জরুরি অবস্থা, আবার কোথাও গণতন্ত্রের নামে দীর্ঘদিন ধরে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির বা দলের বা পরিবারের শাসন কায়েম ছিল। এ আন্দোলনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, ২৭ দিনের মধ্যে তিউনিসিয়ার শাসক বেন আলী সৌদি আরবে পালিয়ে যান, ১৩ দিনের মধ্যে আলজেরিয়ায় ১৯ বছর ধরে চলা জরুরি অবস্থার অবসান ঘটে, ১৮ দিনের মধ্যে মিসরের ৩০ বছরের শাসক ও রাষ্ট্রপতি হোসনি মোবারকের ক্ষমতাচ্যুতি হয়, এক মাসের মধ্যে ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আলী আবদুল্লাহ সালেহ ক্ষমতা ছাড়েন এবং সিরিয়ায় পূর্ণমাত্রায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। অন্যান্য দেশেও শুদ্ধি অভিযানসহ নানা রকমের সংস্কার ও ভবিষ্যতে নিজে নির্বাচন না করার অঙ্গীকার দিতে বাধ্য হন আরব নেতা বা সরকারপ্রধানরা।

গবেষণায় দেখা যায়, এসব দেশের মধ্যে এমন বিপ্লব, সংঘাত, সংগ্রাম বা আন্দোলনের নেপথ্যে কোথাও সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক শক্তিশালী বাহিনী, কোথাও রাজনৈতিক শক্তি, কোথাও বিচ্ছিন্নতাবাদী, আবার কোথাও জঙ্গিগোষ্ঠীকে কাজে লাগায় আমেরিকা ও তার দেশীয় কুশীলবরা। আরব বসন্তের ফলে পট-পরিবর্তনের কল্যাণে অস্ত্র ব্যবসায়ী ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো লাভবান হলেও তা গণতন্ত্র বা গণতন্ত্রকামীদের উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং বিধ্বস্ত হয়েছে হাজারো জনপদ।

আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন আর রাশিয়া আরব বসন্তের কথা বলছে, তখন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাণ্ডারী হুশিয়ার কবিতা ও গানের কয়েকটি লাইন স্মরণ করছি- “গিরি-সঙ্কট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ, পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ! কাণ্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ? করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!”

লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর