ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনীতির দানব ও আমাদের মন
সাইফুল ইসলাম (স্বপ্নীল)
সাইফুল ইসলাম (স্বপ্নীল)

অর্থনীতি নামক শব্দ আমার কাছে প্রহেলিকা। যদিও আমি অর্থনীতির ছাত্র না তবুও চারপাশের অভিজ্ঞতা থেকে উপযোগ-চাহিদা-জোগান ইত্যাদি শব্দগুলো সহজ অর্থে যা বুঝি এগুলো একটি আরেকটি সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিভিন্ন মারফতে জানলাম, একজন কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ক্ষেত্র বিশেষে কয়েক হাত বদলের পর তিনগুণ চার গুণ বা পাঁচ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে ভোক্তার কাছে আসে। মজার বিষয় হল রাষ্ট্র সমাজ মানুষ বা রাষ্ট্রযন্ত্র বহু বছর ধরে এ ধরনের হাজারো অনুযোগ, অভিযোগ শুনে আসছে। কিন্তু বাস্তবে এর কোন উল্লেখযোগ্য সমাধান  দেখতে পাওয়া যায় না। সব সময় দেখে আসছি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে। এখন শুনছি স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদনকারী, পাইকারি, খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে। 

গতকাল ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ডিজি বললেন, কয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কর্পোরেট গ্রুপের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। গাছের গোড়ায় পানি না ঢেলে আগায় পানি দিলে এর ফলাফল কি তা বলাই বাহুল্য। পুঁজিবাদী যুগে রাজনীতি-অর্থনীতি সবই পুঁজিবাদের করাল গ্রাসে পড়েছে। সংসদের ৬৭% সংসদ যদি ব্যবসায়ী হন আর সরকার যতই হুংকার দিক না কেন দিনশেষে পুঁজিবাদীদের রাহু থেকে কোনভাবেই মুক্তি সম্ভব নয়। ব্যাপারটা এমন যে মুরগী পাহারা দেওয়ার জন্য শিয়ালকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অতিমুনাফা, মজুতদারি একটি পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চরম বাস্তবতা। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন টেলিভিশন দেখতাম পত্রিকা পড়তাম কিন্তু মজুতদার, কর্পোরেট গ্রুপ, অতিমুনাফা, ব্যবসার নামে ডাকাতি এ সকল শব্দগুলো এতটা শুনতে পাইনি। পক্ষান্তরে এখন ঘুম থেকে উঠে বা ঘুমোতে যাওয়ার সময় টিভি খুললে, ইউটিউব দেখলে বা ফেসবুক খুললেই এ ধরনের শব্দগুলো মাথার মধ্যে কিলবিল করে। 

যখন থেকেই বিভিন্ন কর্পোরেট গ্রুপ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন চাল, ডাল, আটা, তেল ইত্যাদি বাজারজাত করা শুরু করেছে তখন থেকেই এ সংকট আরো গভীরতর হয়েছে। এ সকল গ্রুপ বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে অথবা বিভিন্ন কর্পোরেট গ্রুপের সাথে সিন্ডিকেট করে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি করে অথবা পূর্ণ সরবরাহ বন্ধ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পক্ষান্তরে ছোট ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে খাতুনগঞ্জ এর অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারেন না বলে অভিযোগ শোনা যায়। ডলার সংকটের এই সময়ে যেহেতু বড় বড় কর্পোরেট গ্রুপের নিজেদের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নিজস্ব জাহাজ রয়েছে তারা ইচ্ছেমতো এলসি খুলতে পারছে। 

রমজান আসলে বাজারে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এতদসত্বেও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। 

কথায় কথায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বলে গলা ফাটানো লোকজন অতিমুনাফা ও অধিক লাভের উদ্দেশ্যে পণ্য মজুদ করে, সাধারণ মানুষের জীবন বিষিয়ে তোলে। আমরা ফেসবুক, youtube, টেলিভিশনের পর্দায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় এদের আসল রূপ দেখতে পাই। 

সবচেয়ে ভালো হয় সমন্বিত অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি খুচরা বিক্রেতা অথবা ভোক্তার কাছে উৎপাদনকারী সরাসরি পণ্য সরবরাহ করে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কৃষক ও ভোক্তা অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। 

আমরা একই ব্যক্তি সেবাগ্রহীতা এবং সেবাদাতা হিসেবে আবির্ভূত হই। যখন সেবাদাতা হই তখন আমাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করি কিনা সেটি আত্ম সমালোচনার বিষয়। আবার সেবা গ্রহণ করার সময় আমরা আমাদের সুবিধা ও অধিকার নিয়ে সচেতন। মজার বিষয় হল আমরা যে সেক্টরে সেবাদাতা সে সেক্টরে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য প্রদর্শন করলেও একই ব্যক্তি সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের অধিকার সম্পর্কে অধিক সচেতন। আমাদের এ দ্বৈত নীতি পরিহার করতে হবে। সোনার দেশ গড়তে হলে সোনার মানুষ লাগবে। সোনার মানুষ তো আকাশ থেকে পড়বে না। সোনার মানুষ আমরা সেদিনই হব যেদিন আমরা নিজেরা আমাদের অধিকার-কর্তব্য সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ও দায়িত্ববান হবো। 

লেখক: প্রভাষক, সরকারি হাজী আব্দুল বাতেন কলেজ, সন্দ্বীপ।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন  



এই পাতার আরো খবর