আগামী ২১ অক্টোবর একই দিনে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে টরন্টোর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে সঙ্গীত শিল্পী সুমন মালিক এবং পরে শিল্পী আশিকুজ্জামান টুলু এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট দেওয়ার পর এ নিয়ে শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বন্যার্তদের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ থিয়েটার টরন্টো, কল্পলোক শিল্পকুঞ্জ, সুকণ্যা নৃত্যাঙ্গন ও সিম্ফনি মিউজিক একাডেমী যৌথভাবে সুমন মালিকের কণ্ঠে একক সঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই দিনই টরন্টো দুর্গাবাড়ীতে অমিত শুভ্র এবং স্বর্ণালী মুক্তা’র গানের অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ার পর সুমন মালিক ফেসবুকে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন।
সুমন মালিকের পোষ্টে দুর্গাবাড়ীর অনুষ্ঠানের প্রতি ঈঙ্গিত করা হলেও ২১ অক্টোবর টরন্টোতে আসলে মোট চারটি ঘোষিত অনুষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, কানাডা রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতি পর্যায়ের গান নিয়ে ‘ঋতু মালঞ্চ’ নামের একটি অনুষ্ঠানের ঘোষনা দিয়ে রেখেছে অনেক আগেই। ওই দিনই আবার বাংলাদেশ মাইনোরিটি এলায়েন্সের ‘আসন্ন নির্বাচন এবং বাংলাদেশের সংখ্যালগু সম্প্রদায়’ শীর্ষক দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ওই দিন অনুষ্ঠান রয়েছে আসলে চারটি।
জানা যায়, দুর্গাবাড়ীর অনুষ্ঠানটির ফেসবুকে ইভেন্ট পেজ খুলেছেন বাচনিকের প্রধান ও আবৃত্তি শিল্পী মেরি রাশেদীন। সুমন মালিক তার পোস্টে মেরি রাশেদীনের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, “কথায় আছে কাক কাকের মাংস খায়না। আমরা কি এই টরন্টো শহরের বাঙ্গালীরা এতটাই বোধশূন্য হয়ে গেলাম যে প্রকৃতির কোন নিয়মই আমরা আর আজকাল মানিনা। আমি যখন এখানকার একটি আবৃত্তি সংগঠনের সাথে কাজ করতাম, তখন সেই সংগঠনের কর্ত্রীকে একবার ভীষণ রাগান্বিত আর হতাশ হতে দেখেছিলাম। কারণ ছিল সেই প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক অনুষ্ঠানের একই দিনে অন্য আর একটি ইভেন্ট, একটি পারিবারিক পূনর্মিলনী এবং তাতে তিনি দর্শক হারাবেন এই আশংকা। আজকে তিনি আমাদের তহবীল সংগ্রহ ইভেন্টের সাতদিন আগে আর একটি ইভেন্ট পেজ খোলেন একই দিনে একই সময়ের !!! আমরা যা বলি আর যা করি তার মধ্যে অসামানজস্য দিন দিন বেড়েই চলেছে । হায় স্বজাতি”
প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে বাচনিকের অনুষ্ঠানের নির্ধারিত দিনে আরেকটি সংগঠন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় মেরি রাশেদীন ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিলেন।
সুমন মালিকের পোস্টটির পর পরই শিল্পী আশিকুজ্জামান টুলু আরেকটি পোস্ট দেন। টোরাণ্টোতে একদিনে ৩ টা অনুষ্ঠান শিরোনামে ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন,” দিন বদলের পালা আইসা পড়সে। আগে অনুষ্ঠানে দেখতে পয়সা লাগতো। এখন একদিনে দুইটা তিনটা কইরা অনুষ্ঠান হওয়া শুরু হইছে। তাই এহন দর্শকরাই পয়সা চায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। যে আয়োজক যত বেশী পয়সা দিবো, তার অনুষ্ঠানে ততোক্ষণ থাকবো। অনেক দর্শক আবার সব আয়োজকদের কাছে অল্প অল্প কইরা নিয়া সব অনুষ্ঠানেই অল্প অল্প মানে এই খানে গিয়া ৫ টা গান, ওইখানে গিয়া ৪ টা নাচ, সেইখানে গিয়ে ৭ টা গান সুনতেসে এবং এইভাবে দর্শকরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা শুরু করছে। কি করবো, দর্শকদের তো আর দোষ নাই, একদিনে ৪ টা অনুষ্ঠান হইলে দর্শকদের তো পার্ট টাইম উবার চালাইতে হইবই টিকেট কিনার জন্য। এছাড়া দর্শক বাঁচবো ক্যামনে।”
দুটি পোস্টেই টরন্টোর সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাদের মতামত দিয়েছেন। দুর্গাবাড়ী মন্দিরের পরিচালনার সাথে যুক্ত সুশীতল চৌধুরী এবং সুদীপ সোম তাদের মতামতে লিখেছেন, দুর্গাবাড়ীর পক্ষ থেকে মেরি রাশেদীনকে অনুরোধ জানানো হয়েছিলো তাদের অনুষ্ঠানের একটি পেসবুক ইভেন্ট পেজ খুলে দেওয়ার জন্য। মেরি রাশেদীন সেই অনুরোধ রক্ষা করেছেন মাত্র। এটি তাদের দুর্গোৎসব পরবর্তী একটি আয়োজন বলেও তারা উল্লেখ করেন।
তবে সুশীতল চৌধুরী বলেছেন, কমিউনিটি বড় হচ্ছে, নানা ধরনের বিকল্প মানুষের সামনে আসছে। দর্শক শ্রোতারা ঠিকই তাদের সঠিক পছন্দটি বাছাই করে নেবেন। এর মধ্য দিয়ে মনোপোলির অবসান ঘটবে। তিনি উল্লেখ করেন, তবে গুনগত উৎকর্ষতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।
রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শাহজাহান কামাল তার মন্তব্যে লিখেছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা কানাডা অনুষ্ঠানের ঘোষনা দিয়েছিল জুলাই ২৪ বা ২৫ তারিখে। লেখকদের অনুষ্ঠান ১৪ তারিখে থাকায় সংস্থা ২১ তারিখে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন দেখছি আরো দুটি হচ্ছে। অনুযোগ নয় আপনি বিষয়টি তুলেছেন তাই লিখলাম।
তিনি লিখেছেন, বেশি অনুষ্ঠান হওয়া মানে কমিউনিটি বড় হয়েছে, শক্ত হয়েছে। আরো হোক। তবে আমাদের উদ্দেশ্য হতে হবে সৎ। শুধু সংস্কৃতির সেবা সেবা। তাহলে সবাই উপকৃত হবে। এমনিই ৮০০০০ বাংগালীর (ধারণা ৮০০০০ আছে) মধ্যে আমার ধারণা ১০০০ থেকে ১৫০০ দর্শক ঘুরে ফিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যায়। এই সংখ্যাটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি অনুষ্ঠান একটা ভুমিকা রাখে।
সূত্র : নতুন দেশ
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন