ঢাকা, রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

যুক্তরাজ্য অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় সার্বজনীন গোলাপগঞ্জ উৎসব
যুক্তরাজ্য অফিস

ব্রিটেনের বহুজাতিক সংস্কৃতির মাঝে বাংলাদেশিদের মূল শেকড় বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টিকে লালন করে গত ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে গোলাপগঞ্জবাসীদের প্রাণের উৎসব দ্বিতীয় সার্বজনীন গোলাপগঞ্জ উৎসব ২০২২।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবে পরিণত হয়েছিলো গোলাপগঞ্জবাসীদের এই মিলন মেলা। লন্ডন ছাড়াও লুটন, বার্হিমংহাম, কেন্ট, আশফোর্ড, রেডিং, মানচেস্টারসহ বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা জড়ো হতে থাকে ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারের সামনে। 

এখানে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে উদ্বোধনী ঘোষণা করেন উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আবু তাহের। এরপর পরই উদযাপন কমিটির সদস্যসহ প্রায় ৫০টির মতো সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে দুপুর সাড়ে ১২টায় র‍্যালি শুরু করে বাংলা টাউন হয়ে শেষ হয় উৎসবের মূল হল ব্রাডি আর্ট সেন্টারে।

দুপুরের খাবারের বিরতির পর বিকাল ৪টায় জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের ২য় পর্ব। জাতীয় সংগীতের পর পরই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব তমিজুর রহমান রঞ্জু। গোলাপগঞ্জ উপজেলা ও ইউনিয়ন ভিত্তিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দ, সাংবাদিক, সপরিবারে উপস্থিত হয়েছিলেন গোলাপগঞ্জের মুরব্বিয়ান, যুবকসহ বিপুল সংখ্যক গোলাপগঞ্জবাসী।

গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র, বিয়ের গান, ধামাইল, পুঁতি, সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা, সিলেটি নাটক আর সিলেটি গান। উৎসবে কমিউনিটিতে অবদানের জন্য প্রথমবারের মতো গোলাপগঞ্জের গুণীজনদের মধ্যে ৫ জনকে মরণোত্তর সম্মাননা ও ৪ জনকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। মরণোত্তর সম্মাননা প্রাপ্ত গুণীজন হলেন- তাসাদ্দুক আহমেদ, নেছার আলী, নবাব আলী, হাফিজ মজির উদ্দিন ও খন্দকার ফরিদ উদ্দিন এবং আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত গুণীজনরা হলেন- সালেহ আহমদ খান এমবিই, হাফিজ শামছুল হক, ইসহাক আলী ও আতাউর রহমান খান।

এ ছাড়া ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সফলতার জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় তিন জনকে। তারা হলেন- স্টক অন ট্রেন্ট এর ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন, আকলু মিয়া ও গোলাম রাব্বানী চৌধুরী। 

প্রথমবারের মতো সার্বজনীন গোলাপগঞ্জ উৎসবের মাধ্যমে এ সম্মাননা প্রদান করায় তা সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং শুভেচ্ছা জানান টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। তিনি বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে গোলাপগঞ্জের গুণীজনদের গুরুত্ব অপরিসীম। গোলাপগঞ্জবাসীর ইতিহাস গৌরবের। সকলের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ উৎসব এটা অন্যান্য উপজেলার মানুষের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে উৎসবে যোগ দিতে আসা দৈনিক শুভ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সারওয়ার হোসেন বলেন, আমি গর্বিত আমার নানাবাড়ি গোলাপগঞ্জে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসী গোলাপগঞ্জবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম। আজ লন্ডনের এ উৎসব যেন একখণ্ড গোলাপগঞ্জে পরিণত হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কেবিনেট মেম্বার ও সাবেক ডেপুটি মেয়র আ ম অহিদ আহমদ, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ-এর সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক নবাব উদ্দিন, কবি ও সাহিত্যিক আহমেদ ময়েজসহ গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ ছিল গোলাপগঞ্জ এর প্রতিটি গ্রাম নিয়ে জারীগান এবং সিলেটের জনপ্রিয় নাট্যকার ও অভিনেতা বেলাল আহমদ মুরাদ, এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি, বিপ্লব এষ -এর পরিবেশনায় নাটিকা। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন ব্রিটেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ফারহান মাসুদ খান ও বিশিষ্ট আবৃতিকার মুনিরা পারভীন।

সিলেটি কবিতা পাঠ ও আবৃতি করেন জনপ্রিয় আবৃতিকার মুনিরা পারভীন, ছড়াকার দিলু নাসের, কবি মাসুক ইবনে আনিস, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি মুজিবুল হক মনি, শতরুপা ও সাহেরা খাতুন। তরুণ বাশী বাদকের বাশির টানে মাতিয়ে রাখে সারা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের ফাকে ফাকে গান পরিবেশন করেন বিলেতের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী গৌরী চৌধুরী, আলাউর রাহমান, হাসি রানি, মিতা তাহের, শতরুপা দিলরুবা, মৃদুল ও মহিমা।

নিত্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন সনিয়া সুলতানা, নন্দিনি, প্রেরণা, রিয়া। এছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠান পর্বে ছিলেন ক্ষুদে শিল্পীরা। তবলা, অক্টোপেড, কিবোর্ড পরিচালনায় ছিলেন বিলেতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মানুষে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেক পরিবার হলে ঢুকতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশকরে বলেন আগামীতে এ উৎসব যেন বৃহৎ পরিসরে পালন করা হয় যাতে সবাই সপরিবারে উপভোগ করতে পারেন। সবশেষে রাফেল ড্র এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর



এই পাতার আরো খবর