ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

হাওয়াইয়ে ভয়াবহ দাবানল : শনিবারও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি
লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র
দাবানলে পুড়ে ছাই পর্যটন সিটি লাহাইনার মাউই। ছবি-সংগ্রহীত

আমেরিকার হাওয়াই রাজ্যের মাউই দ্বীপে ভয়াবহ দাবানলের আগুন শনিবারও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। তবে নিহত ও নিখোঁজদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি নেই বলে শুক্রবার জানিয়েছেন সেখানকার অনরারি কন্সাল জেনারেল জান রুমি। 

বাংলাদেশের এই কন্সাল জেনারেল জানান, সিংহভাগ বাংলাদেশি আমেরিকান বাস করছে হনলুলু সিটির ওয়াহো দ্বীপে। দাবানল ছড়িয়ে পড়া অপর দ্বীপ বিগ আইল্যান্ডেও দু’তিনটি পরিবারের বসতি ছিল। তারাও নিরাপদে অন্যত্র সরে গেছেন বলে জেনেছি। আমরা এই ভয়ংকর দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করছি। লাহাইনা সিটির মাউই দ্বীপে সর্বশান্ত হওয়া পরিবারের মধ্যে বিতরণের জন্যে শিগগিরই সেখানে যাব।

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে শুরু হওয়া এ দাবানলের প্রাদুর্ভাব ঘটে ১১০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া হারিকেন ডোরার প্রভাবে। সেই হারিকেন তীব্র গতিতে সাগরের উপর দিয়ে অতিবাহিত হওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী এই দ্বীপে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

সিটির মেয়র রিচার্ড বিসেন জুনিয়র এবং স্টেট গভর্নর যশ গ্রিন যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, আগে থেকেই প্রচণ্ড খরায় অনেক বৃক্ষ এবং সবুজ ঘাস শুকিয়ে গিয়েছিল। সহজেই সেগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আগুনের সেই লেলিহান শিখা শনিবার ভোর রাতেও অব্যাহত ছিল।

স্টেট প্রশাসন সূত্রে শনিবার ভোর রাতে জানানো হয়েছে যে, এখন পর্যন্ত ৮০ জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। পুড়ে ছাই হওয়া এলাকার আবর্জনা সরানোর পর নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। নিখোঁজ রয়েছে এক হাজারের অধিক মানুষ। দমকল বাহিনীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নিরাপত্তা রক্ষীরা হেলিকপ্টার, জাহাজ, ছোট নৌকায় সমুদ্রবেষ্টিত এই দ্বীপে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। বিমান থেকে পানি ছিটানো হচ্ছে আগুন নেভানোর জন্যে। কিন্তু কোনো কিছুই কাজে লাগছে না বলে জানান জান রুমি। আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় পশ্চিম উপকূলীয় শহর লাহাইনা। এই সৈকত শহরের ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি, হোটেল-মোটেল, অন্যান্য স্থাপনাসহ প্রায় দুই হাজার ভবন পুড়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। স্টেট গভর্নর এই দাবানলকে হাওয়াইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

কন্সাল জেনারেল উল্লেখ করেন, হনলুলুতে বেশ কয়েক ডজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও রয়েছেন। তারাও ভালো আছেন বলে জেনেছি।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে যে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমন কোনো পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি।

১৯৫৯ সালে হাওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট হিসেবে অন্তর্ভুক্তির পর এমন ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর কখনো দেখা যায়নি।

মাউই কাউন্টি মেয়র রিচার্ড বিসেন জুনিয়র আরও বলেছেন, এখনো লেলিহান শিখা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর নামানো হয়েছে হতাহতদের সন্ধানে।

মেয়র আশপাশের সকল হোটেল মালিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, গৃহহারা মানুষদের ঠাঁই দেওয়ার জন্যে। বাসা-বাড়িতেও আশ্রয় প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে মেয়রের পক্ষ থেকে।

হেলিকপ্টার পাইলট রিচার্ড ওলস্টেন গণমাধ্যমকে শুক্রবার বলেন, অবস্থা ভয়ংকর। ৫২ বছর ধরে আমি হাওয়াইয়ের আকাশে উড়ছি। এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। সত্যি খুবই ভয় পাচ্ছি অপরিচিত পরিবেশ দেখে। আগুনের আঁচ আর ধোঁয়া থেকে বাঁচতে উপকূলের অনেকে সাগরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৪ জনকে উদ্ধার করেছে উপকূলীয় রক্ষীরা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর