ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জাতিসংঘে বিজয় সমাবেশে রাষ্ট্রদূত মুহিত
‌‘একাত্তরে বাংলাদেশে এবং বর্তমানে গাজায় গণহত্যায় মদদ দিচ্ছে একই শক্তি’
লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

৫২ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ এবং গাজায় গণহত্যায় একটি মিল রয়েছে। যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় মদদ দিয়েছিল, গণহত্যা বন্ধে যারা সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়নি, তারাই আজকে গাজায় গণহত্যা চলতে দিচ্ছে। তা বন্ধের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একই পৈশাচিকতা দৃশ্যমান হচ্ছে সভ্যতাকে কালিমালিপ্ত করে।

মানবাধিকারের সবক দিতে অভ্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এম এ মুহিত শনিবার বিজয় দিবসের সমাবেশে এসব কথা বলেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আজকে গাজায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। সেখানে গত ২ মাসে ২৫ হাজারের মতো নিরস্ত্র মানুষ মারা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরাও রেহাই পাচ্ছে না ইসরায়েলি নৃশংসতা থেকে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মেধাশূন্য করার নীলনকশার অংশ হিসেবে একাত্তরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথিতযশা ৯৯১ শিক্ষক, ৯৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ বিজ্ঞানী ও দার্শনিককে হত্যা করে ঘাতকের দল। পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড হিসেবে একটি দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি হায়েনার দল ও তাদের দোসর আলবদর-রাজাকারের সদস্যরা সম্ভ্রমহানী ঘটায় ৪ লাখ নারীর, যার মধ্যে শহীদ হয়েছেন অন্তত ৪০ হাজার।

মুহিত বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাক হায়েনাদের বর্বরতার অনেক তথ্যই পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যমে তেমনভাবে স্থান পায়নি বলে বিবেক জাগ্রত হতে সময় লেগেছে। গাজার পরিস্থিতিও সঠিকভাবে পশ্চিমা মিডিয়ায় তেমনভাবে আসছে না। আল জাজিরার মতো সংবাদ মাধ্যম না থাকলে হয়তো আমরা প্রকৃত চিত্র কখনোই জানতে পারতাম না।

এ সময় সমাবেশে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন প্রবাসীরা নির্বিচার গণহত্যার নেপথ্য শক্তির উদ্দেশ্যে ঘৃণাবোধক ধ্বনি তোলেন। অনেকে চিৎকার করে বলতে থাকেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভয়ংকর গণহত্যায় মদদ দিচ্ছে, অথচ তারাই মানবাধিকারের সবক দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। এমন সবিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশের স্লোগান ছিল বঙ্গবন্ধুর উক্তি ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সেই গণতন্ত্র-যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে’। জাতির পিতা এবং ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা  জানিয়ে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে আহলুল বায়ত মিশন মসজিদের ইমাম ড. সাঈয়েদ মুতাওয়াক্কিল বিল্লাহ রাব্বানীর নেতৃত্বে বিশেষ দোয়া-মাহফিলের মধ্য দিয়ে শুরু সমাবেশে রাষ্ট্রদূত মুহিত ৫২ বছরের উন্নয়ন-অগ্রগতির একটি ধারা বিবরণী দিয়েছেন।

একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা, মাথা পিছু আয়, আমদানি-রফতানি, মানুষের গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার, শিশু মৃত্যুর হার, মাথা পিছু জাতীয় আয় কত ছিল এবং ৫২ বছর পর পাকিস্তানের তুলনায় সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত। এসব অভূতপূর্ব উন্নয়ন-অগ্রগতির সিংহভাগই ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন মুহিত।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছি, যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর। বিগত কয়েক বছরে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন, মেট্রো রেল ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণসহ নানাবিধ মেগা প্রজেক্টের বাস্তবায়ন আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম নির্দেশক।

দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রসঙ্গে টেনে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৫ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল ১১.২ শতাংশ। রাষ্ট্র হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী সকলের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরণে দিয়েছেন বিশেষ অগ্রাধিকার। প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো উদ্যোগ আজ জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া অতিমারি কোভিড-১৯ এর ধাক্কা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে যখন পৃথিবীর সকল দেশ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন, অর্থনীতির এমন প্রতিকূল সময়েও বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে।

বিজয় দিবসের চেতনায় আরও বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়্যার ভেটারন্স’৭১ এর প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সেক্রেটারি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের কিংবদন্তি শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মঞ্জুর আহমেদ, জেনোসাইড একাত্তর ফাউন্ডেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. প্রদীপ কর, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি আজিজুল হক খোকন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাসুদুল হাসান খান। শেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া নৃত্য-গীতে অংশ নেন সবিতা দাসের নেতৃত্বে বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতনের শিল্পীরা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর