ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’র সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

১৯৩৫ সালে বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণকারি এবং পরবর্তীতে ভারতে বসতি গড়া লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (৮৮) পেলেন এবারের ‘মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার’। 

নিউইয়র্কে ৪দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার তৃতীয় দিন হোস্ট কমিটির পক্ষে এই নাম ঘোষণা করেন সাহিত্যামোদি ও শিল্পপতি গোলাম ফারুক ভূইয়া। এ সময় তার পাশে ছিলেন বইমেলার আয়োজক ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’র চেয়ারপার্সন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ড. নুরুন্নবী। 

বয়সের কারণে খ্যাতনামা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মেলায় আসতে পারেননি, তবে ভিডিও-বার্তায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের এই বইমেলায় ইতিপূর্বে যোগদানের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি বহুজাতিক সমাজে বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের এই প্রয়াসকে অভিনন্দিত করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এ সময় মেলায় অংশগ্রহণকারি স্টলসমূহের মধ্যে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা পুরস্কার’ গ্রহণ করেন ‘সময় প্রকাশ’র ফরিদ আহমেদ।

এ সময় প্রদত্ত বক্তব্যে সাহিত্য পুরস্কারের স্পন্সর-প্রতিষ্ঠান ‘জিএফবি গ্রুপ’র সিইও এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা গোলাম ফারুক ফারুক ভূইয়া বলেন, প্রবাসে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নিরন্তরভাবে কাজ করছে। বিগত ৩৩ বছর ধরেই আন্তরিকতার সাথে ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যকে সঠিকভাবে এগিয়ে আজকের পর্যায়ে উন্নীত করার নেপথ্যে অন্যতম প্রধান প্রেরণাশক্তি হচ্ছে আপনাদের সহযোগিতা ও ভালবাসা। জাতিসংঘের সামনে রাস্তার পাশে ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হওয়া এই বইমেলা দীর্ঘ পথপরিক্রমায় আজ আন্তর্জাতিক মেলায় উপনীত হয়েছে। এই মেলা এখন প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে পথিকৃতে পরিণত হয়েছে। নিউইয়র্কের বইমেলাকে অনুসরণ করে এখন লন্ডন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বইমেলা হচ্ছে। আমরা তাদের সকলের সহযোগী এবং সহযাত্রী। আমরা অত্যন্ত আনন্দচিত্তে তাদেরকে সহযোগিতা দিয়ে আসছি। 

গোলাম ফারুক ভূইয়া উল্লেখ করেন, ২০১৬ সাল থেকে আমরা এই সাহিত্য পুরস্কারের সংযোজন ঘটিয়েছি বইমেলার সাথে। সেটি শুরু হয় ‘মুক্তধারা- চ্যানেল আই সাহিত্য পুরস্কার’। ২০১৮ সালে নাম পরিবর্তন করে হয়েছে ‘মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার’। গত কয়েক বছরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অশেষ অবদানের জন্যে যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা হলেন : কবি নির্মলেন্দু গুণ (২০১৬), লেখক শামসুজ্জামান খান (২০১৭), অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ (২০১৮), লেখক দিলারা হাশেম (২০১৯), ওপন্যাসিক সেলিনা হোসেন (২০২০), লেখক সমরেশ মজুমদার (২০২১), লেখক গোলাম মুরশিদ (২০২২) এবং কবি আসাদ চৌধুরী (২০২৩)।  মেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকদের উৎসাহিত করতে নগদ এক হাজার ডলারের ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার’ জিতেছে ‘সময় প্রকাশ’। এর কর্ণধার ফরিদ আহমেদ বিপুল করতালির মধ্যে পুরষ্কারটি গ্রহণ করেন ড. নুরুরন্নবীর কাছে থেকে। 

এবার ‘শহীদ কাদরী শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পুরস্কার’ কে পাচ্ছেন তা এ অনুষ্ঠানে জানানো সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে গোলাম ফারুক ভূইয়া জানান, এ বছর প্রবাস থেকে প্রকাশিত সমস্ত গ্রন্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। প্রাপ্ত বইগুলোর ওপর পর্যালোচনা-বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আমরা পুরস্কার প্রাপ্ত লেখকের নাম ঘোষণা করবো। 

উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় পারফর্মিং আর্টস সেন্টারের ভেতরে বাইরে ‘যত বই তত প্রাণ’ স্লোগানে এই বইমেলা ২৭ মে সোমবার শেষ হলো। বিপুলসংখ্যক লেখক-কবি-সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠকের সমাগম ঘটেছিল। নতুন প্রজন্মের বিশাল উপস্থিতি ও পারফর্মের ঘটনা সকলকে আশান্বিত করেছে। সমাপনী দিবসে অপরাহ্ন ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ‘তারুণ্যের উৎসব’এ ছিল যেমন খুশী আঁকো-যেমন খুশী গাঁও, ধর্ম বর্ণ জাতির উর্দ্ধে জাগোরে নবীন প্রাণ, নবীন কবিদের আসর, নতুন প্রজন্মের লেখক, খাতা থেকে বই, বিকল্প তথ্য-মাধ্যম কেন গুরুত্বপূর্ণ, রন্ধন যখন সংস্কৃতি, সাফল্যের পেছনে, মুক্তিযুদ্ধ ও নতুন প্রজন্ম ইত্যাদি নানা পর্ব। 

নতুন বইয়ের প্রকাশনা উৎসব ও পাঠক-লেখক-প্রকাশক ফোরাম মেলাকে বিশেষ এক অভিধায় নিয়ে যায়। বিশেষ করে ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনের প্রাণবন্ত কথকতা মেলা প্রাঙ্গণকে মুখরিত রেখেছিল। এ পর্বের পরিচালনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান লেখক ফাহিম রেজা নূর এবং লেখক জসিম মল্লিক। এবারও মেলায় এসেছিলেন জার্মানী থেকে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক নাজমুননেসা পিয়ারি। 

মেলার প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা মনখোলা আড্ডায় প্রাত:রাশ গ্রহণ করেন লেখক-সাহিত্যামোদিরা। সমগ্র অনুষ্ঠানের মঞ্চ ব্যবস্থাপনা ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা-পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সাবিনা হাই উর্বি, মিহির চৌধুরী, সুস্বণা চৌধুরী, চন্দ্রিমা দে, সউদ চৌধুরী ও সেমন্তী ওয়াহেদ। 

মেলার প্রতিটি রাত শেষ হয় সুর ও বাণীর মালা দিয়ে। অংশ নেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নিরুপমা রহমান, নাজু আকন্দ, নাহিদ নাজিয়া, শবনম সায়েলা তনুকা, জাফর বিল্লাহ, লিলি ইসলাম ও শাহ মাহমুদ। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর