ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নিউইয়র্কে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের মতবিনিময় সভা
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি:

নিউইয়র্কে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. এ কে এ মোমেন এমপি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সেই সোনার বাংলা, অসাম্প্রদায়িক, সম্প্রীতির স্থিতিশীল অর্থনীতির শান্তিপূর্ণ একটি দেশ গড়ে তুলতে চাই। যেখানে সকলের চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তা থাকবে, বাসস্থানের সংকট কেটে যাবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। 

১৮ জুলাই সন্ধ্যায় এই ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার ২০২৪-২০২৫ মেয়াদের নয়া কার্যকরী কমিটির সাথে মতবিনিময় সমাবেশে ড. মোমেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রসঙ্গে আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল সামাজিক-রাষ্ট্রীয় এবং সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার। তিনি বলেছেন, উন্নয়নের জন্যে শান্তির বিকল্প নেই। বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইডেন এবং বাংলাদেশ আশেপাশের দেশসমূহে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেবে। বঙ্গবন্ধু শান্তির জন্যে জুলিও কুরি পুরস্কার পেয়েছেন। সেই আলোকে আমরা অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করতে চাই বঙ্গবন্ধুর চরিত্র-বৈশিষ্ট আলোকে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শন আলোকে একটি ‘বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার’ প্রবর্তন করতে চাই, যেটি দু’বছর অন্তর প্রদান করা হবে।  

ড. মোমেন অবশ্য বলেছেন, তবে বর্তমান সমাজে সেই সোনার মানুষের বড় অভাব। আমি আশা করবো আমার বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিটি নেতা-কর্মী বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার মানুষ হিসেবে কাজ করবেন। সেজন্যে অবশ্য সকলকেই ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হতে হবে। জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোমেন বলেন, আমি দেখে খুশি হলাম যে, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নয়া কমিটিতে অনেকেই আছেন যারা প্রত্যেকেই নিজ কর্মগুণে বিশেষভাবে পরিচিত এবং মার্কিন সমাজে তারা বাঙালি তথা বাংলাদেশের জন্যে অত্যন্ত গৌরবময় অবদান রাখছেন। বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন নেতৃত্বে।

ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক কাঠামো প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের শাখা সক্রিয় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩৮টি দেশে ফাউন্ডেশনের শাখা আছে। গত নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু ফাইন্ডেশনের ভূমিকা ছিল খুবই আশাব্যঞ্জক। কারণ, এর সাথে জড়িত প্রায় সকলেই সমাজের অগ্রসরমান শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারি অর্থাৎ চিকিৎসক, অধ্যাপক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, লেখক-সাংবাদিক। কমিটিতে আরো আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারাও। আমরা খুঁজে খুঁজে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনে মুক্তিযোদ্ধাগণকে অন্তর্ভুক্ত করি। কারণ তারা অত্যন্ত কমিটেড বঙ্গবন্ধুর চেতনার প্রতি।  ড. মোমেন বলেন, ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের গোড়া পত্তন হয় নিউইয়র্কে। সে সময় ওপি ওয়ান এবং ডিভি ওয়ান লটারি জিতে অনেক বাংলাদেশী নিউইয়র্ক অঞ্চলে আসার পর নানা সমস্যায় নিপতিত হয়েছিলেন। অনেকে নিজ জেলা কিংবা উপজেলা সদর থেকেই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছিলেন, তখোন স্বজনের সংখ্যাও খুব একটা (বর্তমানের তুলনায়) ছিল না। ফলে তারা বাসস্থান, কর্মসংস্থা ইত্যাদি সংকটের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবাতেও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছিলেন। হতাশায় নিপতিত হয়েছিলেন স্বপ্নের সাগরে ভাসতে ভাসতে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরই। তেমন পরিস্থিতিতে আমরা বস্টনে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে সে সব অসহায় অভিবাসীগণের থাকার ব্যবস্থা করি। সেটির নাম দেয়া হয় ‘অতিথি ভবন’। সে ভবনে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৪৭ জনকে চাকরি খুঁজে দেই। বেশ কজন ডাক্তার সে সব প্রবাসীকে চিকিৎসা প্রদানেও এগিয়ে এসেছিলেন। এরপর ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম এক ধরনের স্থবিরতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। তবে ২০০২ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অত্যাচার-নিয্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে বাঁচার তাগিদে ছুটে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। যারা আসতে পারেননি তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় ঢালাওভাবে। সে সব নেতা-কর্মীকে আইনগত সহযোগিতার পাশাপাশি সে সব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে আবারো বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করা হয়।  ড. মোমেন বলেন, ইদানিং আমাদের ফাউন্ডেশনের অগ্রাধিকারে রয়েছে ‘দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার। ইতিমধ্যেই আমরা দেশ-বিদেশে একাধিক অনুষ্ঠান করেছি। কাজটি খুবই কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। তবুও আমরা সাহসের সাথে এগিয়ে চলছি। এর কারণ হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। কিন্তু সে সব প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে অনেক সময় লাগছে। এর মূলে একটি বড় কারণ হলো দুর্নীতি। প্রকল্পটিকে দীর্ঘায়িত করতে পারলে সংশ্লিষ্টরা অনেক ফায়দা হাতিয়ে নিতে পারে। এক সময় দক্ষিণ কোরিয়াতে প্রকল্প বাস্তবায়নে অকল্পনীয়ভাবে সময় ক্ষেপণ করা হতো। সে সময় সে দেশের প্রেসিডেন্ট একটি বিধি জারি করেছিলেন, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া যদি প্রকল্পকে দীর্ঘায়িত করা হয় তবে সেই প্রকল্পের পরিচালককে বরখাস্ত করা হবে। জরিমানাসহ কারাদন্ড প্রদান করা হবে। এই বিধি কার্যকর হবার পর দক্ষিণ কোরিয়া অনেক সুফল পেয়েছে। আমাদের দেশে জাপানিরা যেসব প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছে সেগুলো নির্দ্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন হওয়ায় অনেক টাকাও বেঁচে যাচ্ছে। ড. মোমেন উল্লেখ করেন, যারা দুর্নীতি করছে তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করতে চাই। দেশ-বিদেশে যেখানেই তারা থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করতে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনকে সক্রিয় থাকতে হবে।

এ সময় বিশেষ সম্মানীত অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় এবং সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহাবউদ্দিন চৌধুরী লিটন। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন যৌথভাবে সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিঠু এবং কম্যুনিকেশন ডাইরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার। সভায় কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোমেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং নয়া কমিটির কর্মকর্তাগণকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় বিপুল করতালির মধ্যে। কর্মকর্তরা হলেন- সভাপতি হাজী মো. আব্দুল কাদের মিয়া, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ফজলুল হক, সহ-সভাপতি-আবুল বি খান (নিউ হ্যামশায়ার), ড. মোস্তফা সারোয়ার (নিউ অর্লিন্স), বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার ভুইয়া, মো. জাফরউল্লাহ, আতিকুর রহমান (ফ্লোরিডা), শেরশাহ মিজান (হাডসন),  বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী হোসেন (আটলান্টা), জহিরুল ইসলাম ইরান, হাজী ইদ্রিস আলম, মাস্টার ইলিয়াস খান, আবু তাহের রহমান মামুন, মাহফুজুর রহমান দুলাল এবং সাহাবউদ্দিন চৌধুরী লিটন, সাধারণ সম্পাদক: কামাল হোসেন মিঠু, যুগ্ম সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ এবং আলিম খান আকাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক- মো. আলমগীর কবির, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক-মো. আবুল কাশেম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক-শাকিলা রুনা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক- সমিরুল ইসলাম বাবলু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক-হাজী আব্দুল জলিল, শিক্ষা সম্পাদক- মো. মোর্শেদ খান বদরুল, দফতর সম্পাদক-প্রিন্স মুরাদ, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক-নুরুন্নাহার খান নিশা, কোষাধ্যক্ষ : মো. নাঈম উদ্দিন এবং কম্যুনিকেশন্স ডাইরেক্টর লাবলু আনসার। 

সদস্যরা হলেন- নজরুল ইসলাম বাবুল, ড. প্রিয়লাল কর্মকার, জুনায়েদ আকতার, আবিদ রেজা, সবিতা দাস, আব্দুল মতিন পারভেজ, আবুল হাসান মহিউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিমউদ্দিন, মোহাম্মদ রাশেদ, এ টি এম মাসুদ, মো. সিরাজুল মাওলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাদির, মো. আহসান উল্লাহ শাকিল, রিদোয়ান বারি, নাজিমউদ্দিন, উইলি নন্দি, মো. আক্রামউদ্দিন, মো. নুরুল আবসার, মোবাশ্বের হোসেন, মাস্টার আকবর হোসেন, মো. মিনার, বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন চৌধুরী, এবং আব্দুল ওয়াহাব। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মনসুর। 

বিডি প্রতিদিন/এএম



এই পাতার আরো খবর