ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

স্তব্ধ বিশ্ব বিবেক
ড. বিদ্যুৎ বড়ুয়া

গত সেপ্টেম্বরে প্যারিস গিয়েছিলাম রাজনৈতিক সফরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। রাতের নগরী প্যারিসের সৌন্দর্য ও প্রাণ চঞ্চলতা   উপভোগ করেছিলাম প্রাণ উচ্ছলতা দিয়ে। আইফেল টাওয়ারের রাতের ঝলকানো আলোর ফোয়ারা দেখার জন্য হাজার হাজার  লোক,  মধ্যরাতের প্যারিস গেইটের আশেপাশে মানুষের ভীড় ঠেলে চলাচল করা আজ চোখে ভাসে। এবার প্যারিস ভ্রমণ করতে গিয়ে প্যারিসকে দেখে মায়া হল। কোথাও কোনো প্রাণ নেই, সবার মনে কেন জানি ভয় আর আতংক। আইফেল টাওয়ারের আলোর ফোয়ারা বন্ধ ছিল বলে পুরো প্যারিসকে অন্ধকারময় মনে হয়েছে। শিন নদীর পানিতেও আলোর প্রতিচ্ছবি না থাকায় শিন নদীকে  মনে হয়েছে জরাজীর্ণ। প্যারিস গেটের এলাকা যেন মরুভুমি তেমন কোন মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি। সব পানশালা বন্ধ। রাস্তা ও যানবাহনে ফ্রান্সের জনগণের মুখ দেখা গেছে খুবই কম। বেশির ভাগ ভয় ও আতঙ্কে গৃহবন্ধী। কেননা ১৩ নভেম্বর প্যারিস এ ঘটে  গিয়েছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ভয়াবহ হামলা। যাদের দেখা গেছে চলাচলে তাদের মধ্যে অভিবাসী মানুষের সংখ্যা বেশি। প্যারিসের মানুষের দেখা মিলেছে রিপাবলিক নামে জায়গায়, যেখানে প্যারিস ঘটনার প্রথম হামলা হয়। 

বিভিন্ন টিভি মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় তাদের অনুভূতি প্রকাশে বোঝা যায় কতটা বিমর্ষ ও অপ্রত্যাশিত এমন ঘটনা তাদের কাছে। নিজের ও ভয় হয়েছে কেননা এমন হামলার পর যে ধরনের নিরপত্তা বলয় থাকা দরকার তা অনুপস্থিত মনে হয়েছে। ডেনমার্ক থেকে বিমানে যাওয়ার সময় সতর্ক করা হল যেন ফটো আইডি ছাড়া কেউ যেন বের না হই।  কিন্তু বিমানের বোর্ডিং করার সময় কোন ফটো আইডি না দেখেই বিমানে চড়ে বসাল সবাইকে। আর ভাবছিলাম প্যারিস গিয়ে না জানি এয়ারপোর্টে কি বিড়ম্বনায় পড়তে  হয়। কিন্তু প্যারিস বিমানবন্দরে কোন রকম ঝামেলা হয়নি।  

রিপাবলিকে প্যারিস হামলায় নিহত অনেকের আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা হয়েছে।  তারা ভয়ে আতঙ্কে শোকে স্তব্দ হয়ে গেছে। শুধু  চোখের পানিতে ক্ষোভ ঝরে পড়রছে।  তাদের মধ্যে এমন আতংক বিরাজ করছে স্কুলে শিশুরা একা যেতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছে। এই ভয়  যে কবে কাটিয়ে উঠবে আর আদৌ উঠবে কিনা সেটা প্রশ্নাতীত। 

প্যারিস থেকে নিজের শহর কোপেনহেগেন ফিরে মনে হল এখান কার মানুষ ও অজানা আশঙ্কায় ভীত। তাদের মনে ভয় হচ্ছে কখন কোথাও এমন ঘটনা আবার ঘটে। ইউরোপের বর্ডারগুলো উন্মুক্ত হওয়ায় এখন ইউরোপের সব বড় বড় শহরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। প্যারিসে এও দেখেছি স্বনামধন্য পানশালাগুলোর বাইরে সেনাবাহিনী পাহারারত। কিন্তু এভাবে পাহারা দিয়ে মানুষের মনে সেই প্রাণখোলা আনন্দ ফিরিয়ে আনা যাবে কি? তবু প্রার্থনা করি জেগে উঠুক প্যারিস সমহিমায়।

লেখক: চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ

ই-মেইল: drbbaruabd@gmail.com

 

বিডি-প্রতিদিন/ ৩০ নভেম্বর, ২০১৫/ রশিদা



এই পাতার আরো খবর