ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মোহনীয় আয়ারল্যান্ডে কয়েকদিন
ফারজানা সুমনা
জায়ান্ট কসওয়েতে লেখক

বেশ কিছুদিন ধরেই ইচ্ছা করছিল ব্যস্ত শহুরে জীবন ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়ে একটু প্রাণভরে দম নিতে। বন্ধুকে কথাটা বলতেই সেও রাজি। পরিকল্পনামতো দুজনে তিনদিনের জন্য চলে গেলাম মোহনীয় আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে। 

মাঝরাতে লন্ডনের স্থানীয় সময় সাড়ে চারটায় কনকনে শীতে কাঁপতে কাঁপতে লোকাল বাস ধরে একা অবলা আমি (!) স্ট্রাটফোর্ডের সিটি সেন্টারে পৌঁছলাম স্ট্যানস্টেড এয়ারপোর্টগামী ন্যাশনাল এক্সপ্রেস ধরার জন্য, সেখান থেকে বন্ধুকে নিয়ে এক ঘণ্টার উড়াল পথে সোজা বেলফাস্ট ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।   হোটেলে চেক ইন করে ব্রেকফাস্ট সেরে প্রথমদিনেই বেলফাস্টের চমৎকার হপ অন-হপ অফ সিটি ট্যুর বাসে করে দেখে নিলাম শহরটাকে। হপ অন-হপ অফ বাস সার্ভিসের চমৎকার দিক হলো এক টিকেটে এক নাগাড়ে ৪৮ ঘণ্টা শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাসে ওঠা যাবে, আবার যেখানে খুশি বাস থেকে সেখানে নেমে পড়া যাবে। কোনো এক ট্যুরিস্ট স্পটে এসে বাস থামে, যাত্রীরা পছন্দমত স্থানে নেমে যায়; বাসের কন্ডাকটার এবং একইসঙ্গে ধারাভাষ্যকার জানিয়ে দেয় এই বাসস্টপ থেকে পরের বাসটা কখন ধরা যাবে।   টাইটানিক কোয়ার্টার, বেলফাস্ট সিটি হল, নর্দান আয়ারল্যান্ড পার্লামেন্ট বিল্ডিংস, আলস্টার মিউজিয়াম, বোটানিক গার্ডেন, কুইন্স ইউনিভার্সিটি কিছুই বাদ দেইনি ঘুরতে। টাইটানিক কোয়ার্টার বেলফাস্টের পর্যটকদের খুব প্রিয় একটি স্থান। বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিকের নির্মাণ স্থান বেলফাস্ট। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, টাইটানিকের বড় ও ছোট আরো দুটো বোন আছে; মানে টাইটানিকেরা তিন বোন। এরা হলো: অলিম্পিক বড়, মেজ টাইটানিক আর কনিষ্ঠ ব্রিটানিক। ২০০৩ সাল পযর্ন্ত এই একই ইয়ার্ডের অজস্র জাহাজ নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলো সমুদ্রে বিনা দুঘর্টনায় ভেসে চলেছে। কিন্তু কেন যে এই ইয়ার্ডটা ডুবে যাওয়া জাহাজটার নামে 'টাইটানিক কোয়ার্টার' নামেই পরিচিত তা জানা নেই।

যাত্রার ক্লান্তিতে সে রাতে আগেভাগেই ডিনার শেষে হোটেলে ফিরে গেছি। পরের দিন সকাল থেকে গোটা দিনের ভ্রমণই ছিল 'গেইম অব থ্রোনস'-এর শুটিং স্পটগুলোতে। একপাশে পাহাড় আর অন্য পাশে আইরিশ সাগর নিয়ে মাঝখানে ছুটে চলে পথ, এক কথায় অসাধারণ অনুভূতি!  'গেইম অব থ্রোনস'-এর সব এক্সট্রা কলাকুশলীকে অবশ্যই নর্দান আয়ারল্যান্ডের হতে হবে, এমন শর্তেই নাকি শুটিংয়ের অনুমতি দিতে রাজি হয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড সরকার। ফলশ্রুতিতে স্থানীয় জনগণের কিছুটা বাড়তি আয়ের উৎস হয়ে গেছে এই সিরিজ। আমাদের ট্যুর গাইড মেয়েটা গর্ব করেই জানালো তার পেইন্টার চাচা, কার্পেন্টার বন্ধু সবাই 'গেইম অব থ্রোনস'-এর অভিনেতা। এক একটা শুটিং স্পটের উদ্দেশ্যে আমরা যাত্রা করি আর সেখানে পৌঁছানোর আগে এই সিরিয়ালের ওই স্থানে করা ছোট্ট একটা ক্লিপিং দেখিয়ে দেওয়া হয় আমাদেরকে বাসের টিভিতে। চমৎকার পরিকল্পনা! 

দুপুরের লাঞ্চ করলাম জায়ান্ট কসওয়ের কাছে এক লোকাল আইরিশ পাব-এ।  স্থানীয় গোট চিজ, লাল পেঁয়াজ আর আইরিশ সাগরের প্রন দিয়ে করা কী অসম্ভব সুস্বাদু সেই স্যান্ডউইচ! কেইভ, রোপ ব্রিজ, কসওয়ে কোস্টাল এরিয়া, জায়ান্ট কসওয়ে আর সবশেষে ডার্ক হেজেস দেখে যখন বাড়ি ফিরছি তখন বাইরে সূর্য ডুবছে আর বাসের মধ্যে চলছে আইরিশ কান্ট্রি মিউজিক। ততক্ষণে সারাটা দিনে প্রায় মাইল দশেক পাহাড়ী পথে হাঁটাহাঁটি হয়ে গেছে আমাদের। আয়ারল্যান্ড এতোই মোহময়ী যে টিপিক্যাল আইরিশ ঠাণ্ডা আর বৃষ্টিতেও ভ্রমণে ক্লান্তি ছিল না এতোটুকু। 

ট্যুর শেষে সন্ধ্যায় বেলফাস্ট ফিরে রাতের আলোকিত শহরটা ঘুরেফিরে দেখলাম। পরদিন সকালবেলা ব্রেকফাস্ট শেষে বেলফাস্টের বিখ্যাত সেইন্ট জর্জসে লোকাল মাকের্টে ঘুরেফিরে স্থানীয় মানুষের সাথে গল্পগুজব কর; তাদের তৈরি হস্তশিল্প দেখে আর লাইভ মিউজিকের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দিলাম। এভাবেই কোথা থেকে যেন উবে গেল তিনটে দিন।  রাত গড়ালেই বাড়ির পথে দুটো দস্যি মেয়েকে নিয়ে উড়ল এক নারী বৈমানিক। 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা



এই পাতার আরো খবর