সিডনি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’র (সুবসা) বার্ষিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা কভার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানিং হাউস থেকে রেডফার্ন স্টেশনে ফিরছি। রাত তখন প্রায় দশটা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটা ফাঁকা। কিছুদূর যাওয়ার পর মনে হল উল্টা পথে হাঁটছি।
কাউকে জিজ্ঞেস করবো ভাবছি এমন সময় দেখলাম একজন মাথায় হুডি আর কানে হেড ফোন গুজে হন হন করে আমাকে অতিক্রম করছে। আমি একটু বিব্রত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম,
-এক্সকিউজ মি, আমি রেডফার্ন স্টেশনে যাওয়ার পথ হারিয়ে ফেলেছি। তুমি কি আমাকে অনুগ্রহ করে বলবে এখন কোন দিকে যাবো?
আগন্তক মাথার হুডি আর কান থেকে হেড ফোন নামিয়ে হাসিমুখে বলল,
-তুমি ঠিক মানুষটাকেই জিজ্ঞেস করেছো। আমি স্টেশনের কাছে একটি ফ্লাটে থাকি। আমাকে অনুসরণ করতে পার।
-বাই দ্যা বাই, তুমি কি ল্যাব শেষ করে বেরুলে?
-না না আমি ইউনিভার্সিটির ছাত্র না। ম্যানিং হাউস থেকে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কভার করে ফিরছি।
আমরা পরিচিত হলাম। তাইওয়ানীজ মেয়েটির নাম বিয়াঙ্কা চেন। তাইওয়ান থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ব্যাচেলর করে সিডনি ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজমে পোস্ট গ্রাজুয়েট করছে। তার খুব শখ অস্ট্রেলিয়ার মেইন স্টিমে জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করা।
আমাকে বলল, তুমি কি পেশায় জার্নালিস্ট?
-আরে না, আমি এখানকার একটা ব্যাংকে কাজ করি। জার্নালিজম আমার সখ কিংবা নেশা বলতে পার। আসলে আমি আমাদের কমিউনিটিকে প্রমোট করি।
-তার মানে তোমরা এখানে যা কিছু করো তা তুমি এখানে এবং তোমার দেশে পৌঁছে দেও।
-ঠিক তাই, এটাকে তুমি এককথায় কমিউনিটি জার্নালিজম বলতে পার।
-কিন্তু আমিও কমিউনিটি জার্নালিজমের পাশাপাশি মেইন স্টিম জার্নালিস্টদের সাথে কাজ করতে চাই।
-সেটাও তুমি করতে পারবে। তবে আমার ধারনা তুমি কমিউনিটি জার্নালিজম দিয়ে শুরু করলে সেটা সহজ হবে।
-সেটা কিভাবে, একটু বুঝিয়ে বলবে?
-এই ধর, আমি কিংবা আমরা যারা বেশ কিছুদিন ধরে কমিউনিটি জার্নালিজম করছি তারা এই কিছুদিন আগে এখানকার এবিসি ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় কি জান? তারা আমাদের সাথে সংবাদ আদান প্রদানে পাশাপাশি কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
-সত্যি বলছো?
কথা বলতে বলতে আমরা কখন প্রায় স্টেশনের কাছে চলে এসেছি টের পাইনি। বিয়াঙ্কা অদূরে একটি বহুতলা ফ্লাট দেখিয়ে বলল, আমি ঐ ফ্লাটে থাকি। চল, আমার সাথে এক কাপ কফি খাবে।
-আমি বিয়াঙ্কাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেয়ার আগে নিওন লাইটের আবছা আলোয় তার চোখে মুখে আশার আলো দেখতে পেলাম।
লেখক: সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
বিডি প্রতিদিন/হিমেল