ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বাঙালির শোকের দিন ১৫ আগস্ট
অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ
অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। 

পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবনেতা ও সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

খুনিরা ১৫ আগস্টের কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে তার স্বপ্নকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো এবং দেশকে ব্যর্থ রাষ্টে পরিণত করতে চেয়েছিলো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলো। খুনিরা বঙ্গবন্ধুর সবস্মৃতি মুছে ফেলতে চেয়েছিলো। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একজন নেতা, যাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সম্পর্ক গভীর। ঘাতকের বুলেট তাঁকে হত্যা করলেও সে সম্পর্ক মোটেই ছিন্ন করতে পারেনি। যত দিন যাচ্ছে, ততই ইতিহাসে তাঁর নাম সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু তার আদর্শ আছে, তার স্বপ্ন-প্রত্যাশা আছে, আছে তার প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তার আদর্শ তার জীবন ও কর্মের মধ্যেই বিধৃত হয়ে আছে। তার স্বপ্নের কথা, প্রত্যাশার কথাও কারো অজানা নেই। কী ধরনের দেশ ও সমাজ তিনি কামনা করতেন, তার আত্মজীবনী পড়লে তা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। তিনি স্বাধীন দেশ এবং শান্তি প্রত্যাশা করতেন। এ প্রত্যাশা পূরণের জন্যই তিনি জীবনব্যাপী রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনিই আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার কাজ শুরু করেছিলেন, যা শেষ করে যেতে পারেননি। ঘাতকচক্র সে সুযোগ তাকে দেয়নি। 

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন-প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হলে একনিষ্ঠভাবে সেই আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। দৃঢ়তার সঙ্গে সেই স্বপ্ন-প্রত্যাশা হৃদয়ে লালন করতে হবে এবং কর্মের মাধ্যমে তার বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন-প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ, সহনশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এই সঙ্গে জরুরি সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। আরো প্রয়োজন ব্যাপক অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, তার মূলোৎপাটনও অত্যাবশ্যক। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক। জনপ্রত্যাশা পূরণে তিনি সফলকাম হবেন, এই কামনা সকলের। আমরা আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্য যারা সেদিন শহীদ হয়েছিলেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর