ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ভূগর্ভস্থ পানি পৃথিবীর কেন্দ্রে গিয়ে বদলাতে পারে ভূমিকম্পের গতিপ্রকৃতি!
অনলাইন ডেস্ক
ভূগর্ভস্থ পানি পৃথিবীর কেন্দ্রে গিয়ে বদলাতে পারে ভূমিকম্পের গতিপ্রকৃতি!

পৃথিবীর কেন্দ্রের পুরু আস্তরণের ওপরে থাকা একটি পাতলা স্তর গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় স্তরের নাম দিয়েছেন ‘ই-প্রাইম লেয়ার’।

কিন্তু কেন এই স্তর রহস্যময়? আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দল গবেষণা করে যা খুঁজে পেয়েছে, তাতে এই স্তরকে রহস্যময় বললেও কম বলা হবে।

‘নেচার জিওসায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ পানি চুঁইয়ে চুঁইয়ে অনেক গভীর অবধি যেতে পারে। এমনকি, পৃথিবীর একদম কেন্দ্রের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। তরল ধাতব কেন্দ্রের বাইরের অংশের গঠনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করতে পারে ভূগর্ভস্থ পানি।

পৃথিবীর তিনটি স্তর রয়েছে— সবচেয়ে বাইরের অংশ ‘ক্রাস্ট’, মাঝখানে ‘ম্যান্টল’ এবং একদম কেন্দ্রে ‘কোর’।

ওই গবেষণাপত্রে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ১০০ কোটি বছর ধরে টেকটোনিক প্লেটের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি পৃথিবীর কেন্দ্রে চলে যেতে পারে।

যখন সেই পানি চুঁইয়ে চুঁইয়ে ভূপৃষ্ঠের প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার নিচে কোর-ম্যান্টল সীমানায় পৌঁছায়, তখন সেটি পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা মূল উপাদানগুলোর সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। কোর-ম্যান্টলের সীমানার স্তরই পরিচিত ‘ই-প্রাইম লেয়ার’ নামে।

পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, পানি এবং কেন্দ্রে থাকা তরল লাভার বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ সিলিকনের স্তর তৈরি হয়।

এই বিক্রিয়ার কারণে কেন্দ্রের বাইরের দিকে একটি কাঠামো তৈরি হয়। আবার ম্যান্টলে সেটি সিলিকা দিয়ে তৈরি স্ফটিকের একটি আস্তরণ তৈরি করে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের কারণে কেন্দ্রের তরল ধাতব স্তরের ঘনত্ব কমে যেতে পারে। ভূমিকম্পের গতিপ্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে।

গবেষকদের দলের মধ্যে ড্যান শিম নামে শীর্ষস্থানীয় এক গবেষক ব্যাখ্যা করেছেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে মনে করা হচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্র এবং ম্যান্টলের মধ্যে উপাদানের আদান-প্রদান কম। কিন্তু, আমাদের পরীক্ষায় অন্য তথ্য উঠে এসেছে। আমরা খুঁজে পেয়েছি যে, ভূগর্ভস্থ পানি যখন কোর-ম্যান্টল সীমানায় পৌঁছায়, তখন এটি কেন্দ্রের সিলিকনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সিলিকা তৈরি করে।’’

শিম জানিয়েছেন, এই পরীক্ষা যে শুধু কোর এবং ম্যান্টলের মধ্যে সীমিত বিক্রিয়া সম্পর্কে চলা দীর্ঘস্থায়ী বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে না তা নয়। বরং উপাদান বিনিময়ের পাশাপাশি কোর-ম্যান্টলের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়েও অনেক তথ্য দেয়।

শিমদের দাবি, তাদের গবেষণা বিশ্বের ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে থাকা অনেক ধারণাও বদলে দিতে পারে।

বিজ্ঞানীদের দাবি, তাদের গবেষণা পৃথিবীর কেন্দ্রের গঠন সম্পর্কে মানুষের ধারণা বৃদ্ধি করবে। গ্রহের ভূগর্ভস্থ পানি এবং মাটির নিচের রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কেও নতুন ধারণা তৈরি করবে।

এই পরীক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানীরা দুটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এক, আমেরিকার ‘আর্গন ন্যাশনাল ল্যাব’-এর ‘অ্যাডভান্সড ফোটন সোর্স’ এবং জার্মানির ‘ডয়েশ ইলেকট্রোনেন-সিনক্রোট্রন’ ল্যাবের ‘পেট্রা-৩’।

এই দুই পদ্ধতিতে কোর-ম্যান্টল সীমানার যে গঠন, তার প্রতিলিপি তৈরি করা যায়।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর