ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখেও ইসি চুপ কেন
জুলকার নাইন
ড. তোফায়েল আহমেদ

মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের হিড়িকের পর নির্বাচন কমিশনের চুপচাপ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, প্রথমদিনই যদি এমন হয় তাহলে ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া একেবারেই অযৌক্তিক নয়। এমন চলতে থাকলে মানুষ নির্বাচনের প্রতি অনীহা দেখাতে পারে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনে আইনের শাসন গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী যেসব আইনকানুন আছে তা নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী, রাজনৈতিক দল সবাইকে মানতে হবে। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক দেখা গেল। দেখা গেল, সাভারে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে সংসদ সদস্য গেলেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে। রিটার্নিং অফিসারও কোনো রকম বাধা না দিয়ে তা গ্রহন করলেন। ফেনীতে দেখা গেল ৩৩ জন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন। ধামরাইয়েও সংসদ সদস্য গেলেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে। বরগুনায়ও একই ধরনের ঘটনা ঘটল। এমন ঘটনা হয়ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষ্ময়কর নয়, কিন্তু উদ্বেগজনক হলো নির্বাচন কমিশনের চুপচাপ থাকা। ক্ষমতা নিয়ে বসে থেকেও কমিশন কেন চুপচাপ তা একটি প্রশ্ন। সংসদ সদস্যরা নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবেন না, তা কেন্দ্রীয়ভাবেই রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নিয়েছে। আবার সরকারি গাড়ি ব্যবহার সব সময়ই নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন। তাই কমিশনের চুপচাপ থাকা সংশয়ের সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক উদাসীনতা কাজ করছে। এরপর যদি এমন আচরণবিধির লঙ্ঘন দেখেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে মানুষ আবারও মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারে। কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানে গণ অনীহা দেখা যেতে পারে। মানুষ বলবে, ভোট দিয়ে আর কী হবে, নির্বাচিত যে হওয়ার সে হয়েই গেছে। এক্ষেত্রে ফেনীর ৩৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আইনগতভাবে খুবই সুনির্দিষ্ট। যেখানেই ব্যত্যয় ঘটবে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ অভিযোগ করেনি, এমন বক্তব্য দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এখনকার পরিস্থিতিতে কেউ অভিযোগ করবে না। গণমাধ্যমে সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশিত হলো, টেলিভিশনে ভিডিও দেখানো হলো, তারপর আর কী প্রমাণ লাগে। এখন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবই তো নির্বাচনী কর্মকর্তাদের হাতে। তাই জনআস্থা সৃষ্টি করতে হলে সুস্পষ্ট ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে কমিশনকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা ছিল পুরো পৌর কাউন্সিলের সব পদেই হবে। সেটি না হয়ে শুধু মেয়র পদে হচ্ছে। এতে পৌরসভা বা পৌর কাউন্সিলকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু এক ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট একটি পদকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত জগাখিচুড়ি চেহারা পেয়েছে। তিনি বলেন, সরাসরি কোনো মেয়র নির্বাচন না করে দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে কাউন্সিলর নির্বাচিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ পদ্ধতিতে কাউন্সিলররা পরবর্তীতে মেয়র পদে একজনকে নির্বাচিত করতেন। একজন মেয়রের বিপরীতে অন্য দলের একজন বিরোধী নেতাও থাকতে পারবেন। তাহলে স্থানীয় পরিষদ নতুন মাত্রা পেত এবং গুণগতমান উন্নত হতো। বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচিত মেয়র আর স্থানীয়ভাবে দ্বায়বদ্ধ থাকছেন না, তিনি তার রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দ্বায়বদ্ধ থাকছেন। অবশ্য নির্বাচন কমিশন এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের বিষয়টি যেহেতু প্রবর্তন করেছে, তারা হয়তো এটিকে টেস্ট কেস হিসেবে নিচ্ছে। নির্বাচনের পর উপলব্ধি হলে, পরবর্তীতে হয়ত পরিবর্তনও করতে পারে।

 

বিডি-প্রতিদিন/ ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা



এই পাতার আরো খবর