ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

'অধিক উন্নয়ন, কম গণতন্ত্র আত্মঘাতী তত্ত্ব'
বাদল নূর

ঐক্য ন্যাপের আহ্বায়ক ও প্রবীণ রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য বলেছেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য অনুষ্ঠিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ভিত্তিভূমি দৃঢ় করার জন্য একটি স্বশাসিত ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন অপরিহার্য। এ ছাড়াও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। মনে রাখা দরকার অধিক উন্নয়ন, কম গণতন্ত্র এক আত্মঘাতী তত্ত্ব। বোদ্ধা চিন্তকরা  বলেন, দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। অথচ কার্যত দেশ চালায় আমলারা। বঙ্গবন্ধু ’৭৪ সালে বলেছিলেন, পাকিস্তানি আমলা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র চালানো ভুল ছিল। তিনি বলেন, বর্তমানে এই ভুলপথে হাঁটা অব্যাহত আছে। 

গতকাল শাহবাগে নিজ দলীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে পংকজ ভট্টাচার্য আরও বলেন, অধিক উন্নয়ন কম গণতন্ত্র তত্ত্ব আমলা রাষ্ট্রে পর্যবসিত হতে পারে। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মধ্যে পাকিস্তানি ধাঁচের বাংলাদেশ সহাবস্থান করতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত জোট পাকিস্তানি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত হানতে চায়। এটি বন্ধ না করলে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘণ্টা বাজবে। এ জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। অবশ্য বিএনপির এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে এক সময় মুসলিম লীগের ভাগ্য বরণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের দল কি না বিষয়টি জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।

প্রবীণ এই রাজনীতিক নেতা বলেন, বিষধর সাপও খোলশ বদলায় অথচ পাকিস্তান তাদের খাসিলত বদলায়নি। একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাইতে হবে। ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনার মানবতাবিরোধী অভিযোগে বিচার করতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। একই সঙ্গে রুখতে হবে সব স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তিকে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের ২২ পরিবার বনাম সাড়ে সাত কোটি তত্কালীন পূর্ব বঙ্গীয় জনগণের সংগ্রামে বিজয়ী বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ ১০ লাখ দুর্বৃত্তের হাতে জিম্মি। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা তাদের সাধের পাকিস্তানকে ট্রোজান হর্স বানিয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের উর্বর ঘাঁটিতে পরিণত করে এদেশে হস্তক্ষেপ করার হুমকি দিচ্ছে। ওরা অতীতের মতোই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আক্রমণ করে চলেছে। এদের রুখে দাঁড়াতে হবে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা ও জাতীয় পতাকাসহ রাষ্ট্রের দখল নেন জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনার ছায়ায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা উন্নয়ন প্রকল্পের সিংহভাগ গ্রাস করছে। দেশে কালো টাকার পাহাড় হয়েছে। যার একাংশ বিদেশে পাচার হচ্ছে নিয়মিত। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দুটি প্রধান লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজের একটি রাষ্ট্রগঠন এবং অসাম্প্রদায়িক কাঠামো নির্মাণ। যা অর্জন করবার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোনোটার বিকাশ ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে অর্থনীতি দুর্বৃত্তায়নের সৃষ্টি হয়েছে। এক সমান্তরাল কালো টাকার অর্থনীতি গড়ে উঠেছে।

পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের মতে মৌলবাদের অর্থনীতি ও রাজনীতি গড়ে উঠেছে। জঙ্গিবাদী শক্তিরা ক্ষমতা দখলে নিতে চায়। সাম্রাজ্যবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এদের উত্থান ঘটেছে। তিনি বলেন, তার পরেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। মানুষের গড় আয় ও গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে। তবে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন আজ সংকটগ্রস্ত। সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও অর্পিত সম্পত্তি ফেরত পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। ১৮ বছর পরেও বাস্তবায়িত হয়নি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। ফসলি জমি অধিগ্রহণ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামে চা শ্রমিকদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। শিক্ষকদের মর্যাদা-সম্মান কেড়ে নেওয়ার নীতিনির্ধারণের পেছনে আমলাদের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা আজ মহাদুর্নীতিতে লিপ্ত। স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংক কেলেঙ্কারী, ব্যাংক ডাকাতি, অর্থমন্ত্রীর অসহায়ত্ব প্রকাশের কথা করা যাচ্ছে। এ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে বাজার নিয়ন্ত্রণ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা চালু জরুরি।

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা



এই পাতার আরো খবর