ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দেশ এভাবে চললে ভবিষ্যৎ অন্ধকার
মাহমুদ আজহার
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ‘তীব্র অভাব’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সদিচ্ছা দেখাতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে সদিচ্ছা দেখাতে হবে সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে। একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করতে সবারই ইচ্ছা থাকবে। তবে সেই সদিচ্ছার তীব্র অভাব অনুভূত হচ্ছে। এটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের আশা করার কিছু নেই। শুধুই অন্ধকার। সামনে জাতীয় নির্বাচনও একই পথে যাবে। এটা থেকে যা হবে, কিছু দুর্বৃত্ত, কিছু কালো টাকার মালিক ও কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক, সব কিছুই দখল করে নেবে।’ সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা। মোফাজ্জল করিম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বললেন, ইউপি নির্বাচনে কোনো গোলমাল হলে দায়দায়িত্ব আমরা নেব না। দায়দায়িত্ব পুলিশকে নিতে হবে। এ কথাটা তার বলা উচিত হয়নি। কারণ, নির্বাচনের সার্বিক দায়িত্বে তিনিই আছেন। বাংলাদেশের যে কোনো ব্যাপারে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যিনি থাকেন, তিনিই যদি বলেন, দায়িত্ব আমরা নেব না— সেটা মোটেই ঠিক নয়। এটা কোনো বক্তব্য হতে পারে না। বলা উচিত ছিল, কোথাও কোনো অনিয়ম হলে আমরা তা কঠোরভাবে দমন করব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি যেই হোন না কেন।’ নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আর কত প্রাণহানি ঘটলে বলা হবে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। দুঃখ লাগে— এত সন্ত্রাস ও অনিয়মের পাশাপাশি ৪০ জন লোক মারা যাওয়ার পরও বলা হচ্ছে, মোটামুটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। আমার প্রশ্ন, আর কত ভোট কেন্দ্র দখল হলে বা কতজন লোক মারা গেলে নির্বাচন কমিশন বলবে, ভোট সুষ্ঠু হয়নি।’ মোফাজ্জল করিম আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সামনে আরও চারটি ধাপ আছে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। তারা সত্যিকারার্থে নড়েচড়ে বসবে। সরকারকে তারা পরামর্শ দেবে, আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা যদি আমরা নিশ্চিতভাবে না পাই, তাহলে নির্বাচন বন্ধ করে দেব। নির্বাচন করব না। যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থগিত হওয়া ইউপিগুলোয় নতুন করে নির্বাচন দিতে হবে। নতুন করে আটঘাট বেঁধে নামতে হবে ইসিকে।’ দুঃখ প্রকাশ করে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ‘এ নির্বাচনকে কোনোভাবেই সুন্দর নির্বাচন বলা যাবে না। যেখানে সরকারের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীতুল্য নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সরকার জোটের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা খোলাখুলিভাবে এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপি ছাড়াও জাতীয় পার্টি, বাম দল, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সবাই এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সবাই বলছে, এটা খারাপ হয়েছে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। সেখানে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি বলে, চারদিকে আলো ঝলমল করছে— তাহলে এসব চোখ থাকতেও অন্ধ মানুষের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সাংবিধানিক পদে থাকার বৈধতা নিয়ে বিভিন্নজনের প্রশ্ন তোলাকে অযৌক্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেন মোফাজ্জল করিম। তার মতে, ‘এ কমিশনের সাংবিধানিক পদে থাকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, তাদের বেশ কিছু দিনের ভূমিকায় বিশেষ করে বিগত জাতীয় নির্বাচন থেকে ইউপি পর্যন্ত কোনোটাই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এটা নিয়ে প্রশ্ন যে কেউ তুলতেই পারে। তবুও আমি তাদের আরও দু-এক ধাপের জন্য সময় দিতে রাজি আছি। চারটি ধাপ সামনে রয়েছে। অতীতে যে ভুলত্রুটি হয়েছে বিশেষ করে নির্বাচন বন্ধ করতে হয়েছে, সন্ত্রাস হয়েছে, পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে, মানুষ মারা গেছে, এসব কারণ দূর করে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করে, তাহলে ভালো। তবে তা বোধহয় আর সম্ভব হবে না। তবে তারা ঘোষণা দিতে পারে, অনিয়ম হওয়া ইউপিগুলোর ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে।’ মোফাজ্জল করিম বলেন, ‘আগের নির্বাচনগুলো বিশেষ করে পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে একইভাবে অনিয়ম হয়েছে। বলা যেতে পারে নির্বাচনে পুরোপুরি অরাজকতা চলছে। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। অতীতে যে ভুলভ্রান্তি হয়েছিল, ব্যাপকভাবে যেগুলো সমালোচিত হয়েছিল, তা শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, বুদ্ধিজীবীসহ, সর্বোপরি গণমাধ্যম বিস্তারিত তুলে ধরেছে। সেখানে পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, তা বোধগম্য নয়। সর্বশেষ ইউপিতে দুই দফা হয়ে গেল। ১ হাজার ৩৫৬টি ইউপি নির্বাচন হলো। এগুলোয় কোথাও কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি।’ ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা তুলে ধরে সাবেক কূটনীতিক মোফাজ্জল করিম বলেন, ‘প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা নির্বাচনের সঙ্গে আছেন, নির্বাচনের সময় তারা কমিশনের অধীনে থাকেন বটে কিন্তু তারা ভালো করেই জানেন, যে কদিন নির্বাচন আছে, সে কদিনই। তার পরই তো তারা মুক্ত। তাদের প্রকৃত বস হচ্ছে সরকার ও মন্ত্রীরা। এ জন্য তারা ওই বসদের নির্দেশনাই মেনে চলেন।’

সদ্য সমাপ্ত ১ হাজার ৩৫৬ ইউপি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক এই সচিব বলেন, ‘ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৯৮৪ জন জিতেছেন। বিএনপির মাত্র ১০৮ জন বিজয়ী হয়েছেন। এটা অবিশ্বাস্য। কারণ, জনপ্রিয়তার দিক থেকে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি কোনো অংশেই কম নয়। বরং বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামেগঞ্জে বিএনপি অনেক এগিয়ে আছে। তার পরও সব কটি ইউপিতেই পুনর্নির্বাচন দিতে হবে, এমনটাও বলছি না। কারণ, সব কটিতে পুনর্নির্বাচন দিলে মামলা হবে। এসব মামলা শিগগিরই শেষ হবে না। দীর্ঘদিন চলতেই থাকবে। এর মধ্যে যেগুলোয় অধিক মাত্রায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছে, কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে, মানুষ মারা গেছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ছিল না; সেগুলোতেই নতুন করে নির্বাচন দেওয়া উচিত।’



এই পাতার আরো খবর