ঢাকা, রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পান্তের দাপুটে শতরানে সিরিজ জয় ভারতের
অনলাইন ডেস্ক
সংগৃহীত ছবি

দুই দলের শুরুটা প্রায় একই। প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে উইকেট নেই ২টি, একশ রানের আগে ৪টি। মিডল ও লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় ইংল্যান্ড পেল লড়াইয়ের পুঁজি। তবে যথেষ্ট হলো না তা। দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও জ্বলে উঠলেন হার্দিক পান্ডিয়া। রিশাভ পান্ত উপহার দিলেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। সিরিজ জয়ের আনন্দে মাতল ভারত।

তৃতীয় ওয়ানডেতে রবিবার (১৭ জুলাই) ভারতের জয় ৫ উইকেটে। ম্যানচেস্টারে ২৬০ রানের লক্ষ্য সফরকারীরা পেরিয়ে যায় ৪৭ বল বাকি থাকতে।  তিন ম্যাচের সিরিজ রোহিত শর্মার দল জিতল ২-১ ব্যবধানে। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ১১৩ বলে অপরাজিত ১২৫ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন পান্ত। কিপার-ব্যাটসম্যানের ইনিংসটি গড়া ১৬ চার ও ২ ছক্কায়।

বোলিংয়ে ২৪ রানে ৪ উইকেটের পর ৫৫ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলেন পান্ডিয়া। পান্তের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে তার ১১৫ বলে ১৩৩ রানের জুটি গড়ে দেয় ব্যবধান। ২৫ বল বাকি থাকতে অলআউট হওয়া ইংল্যান্ডের ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেন কেবল জস বাটলার। ৮০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৬০ রান করেন ইংলিশ অধিনায়ক।

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে জোড়া ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। জাসপ্রিত বুমরাহর পিঠের সমস্যায় এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ সিরাজ চার বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন জনি বেয়ারস্টো ও জো রুটকে। রানের খাতা খুলতে পারেননি দুজনের কেউই।

প্রথম ওভারে তিনটি চার মারা ওপেনার জেসন রয় এগিয়ে যান দারুণভাবে। চারে নামা বেন স্টোকসও শুরুটা করেন ভালো। দশম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসেই কোনো রান না দিয়ে রয়ের উইকেট তুলে নেন পান্ডিয়া। ভাঙে ৪৭ বলে ৫৪ রানের জুটি। ৩১ বলে ৭ চারে রয় করেন ৪১। টেস্ট অধিনায়ক স্টোকস এরপর আর বেশিক্ষণ টেকেননি। ২৯ বলে ২৭ রান করে তিনিও পান্ডিয়ার শিকার।

৭৪ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড পথে ফেরে বাটলার ও মইন আলির ব্যাটে। দুই জনে গড়েন ইনিংস সেরা ৭৫ রানের জুটি। প্রথমবার বল হাতে নিয়ে মইনকে ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা। সুইপ করার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান (৪৪ বলে ৩৪)।

এরপর লিয়াম লিভিংস্টোনের সঙ্গেও যখন জমে উঠছিল বাটলারের জুটি, দৃশ্যপটে আরেকবার হাজির পান্ডিয়া। একই ওভারে চার বলের মধ্যে তিনি ফিরিয়ে দেন দুই ব্যাটসম্যানকেই। দুজনই ক্যাচ দেন জাদেজার হাতে। লিভিংস্টোন ৩১ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় করেন ২৭ রান। পরে ডেভিড উইলির ১৮ ও ক্রেইগ ওভারটনের ৩২ রানের সুবাদে আড়াইশ ছাড়াতে পারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ।

বোলিংয়ে রিস টপলির হাত ধরে ইংলিশদের শুরুটা হয় দারুণ। এই পেসার ভারতের ৩৮ রানের মধ্যে ফিরিয়ে দেন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান (১), রোহিত শর্মা (১৭) ও বিরাট কোহলিকে (১৭)। ওভারটনের বলে সূর্যকুমার যাদব যখন ক্যাচ দিয়ে ফেরেন, ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে ভারত। এমনকি উইকেট সংখ্যা পাঁচও হতে পারত। আগের ওভারে মইনের বলে পান্তকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন বাটলার। তখন ১৮ রানে খেলছিলেন পান্ত। এরপর পান্ডিয়ার সঙ্গে জমে ওঠে পান্তের জুটি। দুই জনের দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় ভারত। পান্ডিয়া ফিফটি করেন ৪৩ বলে।

স্টোকসের দুর্দান্ত ক্যাচে পান্ডিয়ার বিদায়ে যখন জুটি ভাঙল, ম্যাচ অনেকটাই ভারতের মুঠোয়। জাদেজাকে নিয়ে বাকিটা সারেন পান্ত। ৫৬ রানের জুটিতে জাদেজার অবদান কেবল ৭, পান্ত ৪৮ রান করেন মাত্র ২৫ বলে।  শুরুতে অবশ্য আগ্রাসী ছিলেন না পান্ত। ফিফটি করতে তার লাগে ৭১ বল। পরের পঞ্চাশ করেন স্রেফ ৩৫ বলে। সেঞ্চুরির পর উইলির একই ওভারে মারেন টানা পাঁচটি চার। রুটকে চার মেরেই দলের জয়ে তুলির শেষ আঁচরটা দেন তিনি।

পান্ত ইংল্যান্ড সফর শুরু করেছিলেন এজবাস্টন টেস্টে সেঞ্চুরি দিয়ে। ম্যানচেস্টারে সেঞ্চুরি দিয়েই শেষ করলেন যাত্রা। ক্যারিয়ারের প্রথম ৩১ টেস্টে তিনি পাঁচটি সেঞ্চুরি করে ফেললেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তার বড় ইনিংস খেলতে না পারা নিয়ে নানা সময়েই উঠেছে প্রশ্ন। ওয়ানডের এই সেঞ্চুরিতে ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান হয়তো বার্তা দিলেন, আরও আসছে। ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে পান্তের হাতেই। ব্যাটিংয়ে ১০০ রান ও হাত ঘুরিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হয়েছেন পান্ডিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৪৫.৫ ওভারে ২৫৯ (রয় ৪১, বেয়ারস্টো ০, রুট ০, স্টোকস ২৭, বাটলার ৬০, মইন ৩৪, লিভিংস্টোন ২৭, উইলি ১৮, ওভারটন ৩২, কার্স ৩*, টপলি ০; শামি ৭-০-৩৮-০, সিরাজ ৯-১-৬৬-২, প্রসিধ ৯-০-৪৮-০, পান্ডিয়া ৭-৩-২৪-৪, চেহেল ৯.৫-০-৬০-৩, জাদেজা ৪-০-২১-১)

ভারত: ৪২.১ ওভারে ২৬১/৫ (রোহিত ১৭, ধাওয়ান ১, কোহলি ১৭, পান্ত ১২৫*, সূর্যকুমার ১৬, পান্ডিয়া ৭১, জাদেজা ৭*; টপলি ৭-১-৩৫-৩, উইলি ৭-০-৫৮-০, কার্স ৮-০-৪৫-১, মইন ৮-০-৩৩-০, ওভারটন ৮-০-৫৪-১, স্টোকস ২-০-১৪-০, লিভিংস্টোন ২-০-১৪-০)

ফল: ভারত ৫ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত

ম্যান অব দা ম্যাচ: রিশাভ পান্ত

ম্যান অব দা সিরিজ: হার্দিক পান্ডিয়া

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর