ঢাকা, সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নিজের আত্মজীবনীতে বর্ণবাদের 'বোমা' ফাটালেন টেইলর
অনলাইন ডেস্ক
রস টেইলর।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর নিজের আত্মজীবনী ‘রস টেইলর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ বইয়ে বড় এক বোমা ফাটিয়েছেন রস টেইলর। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে তিনি এবং আরও কিছু ক্রিকেটার বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির সাবেক এই ব্যাটসম্যান।

গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া টেইলর তার মায়ের দিক থেকে পলিনেশিয়ান (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের। তিনি লিখেছেন, নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেট যেন সাদা বর্ণের মানুষের খেলা এবং ড্রেসিংরুমে বর্ণবাদী মন্তব্যের ঘটনাগুলো অনেকের কাছে নিছক মজা মনে হতো।

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন টেইলরের বইয়ের কিছু অংশ বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) প্রকাশ করেছেনিউ জিল্যান্ড হেরাল্ড। টেইলর জানান, নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেট অনেকটাই সাদাদের খেলা। ক্যারিয়ারে বেশিরভাগ সময়ই আমি অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিলাম, যেন ভ্যানিলা (সাদা অর্থে) লাইনআপে একটা বাদামি মুখ।

তিনি আরও বলেন, এটা খুব চ্যালেঞ্জিং, এর অধিকাংশই আবার আপনার সতীর্থ বা ক্রিকেটীয় গোষ্ঠীর কাছে দৃশ্যমান নয়। ক্রিকেটে পলিনেশিয়ান সম্প্রদায়ের খুব কম লোক প্রতিনিধিত্ব করেছে। এটা সম্ভবত তেমন অবাক করা বিষয় ছিল না, লোকেরা অনেক সময় মনে করত আমি মাওরি কিংবা ভারতীয়।

ড্রেসিংরুমে বর্ণবাদের শিকার হলেও সেটি আন্তর্জাতিক নাকি ঘরোয়া কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে, তা উল্লেখ করেননি ৩৮ বছর বয়সী টেইলর। তিনি বলেন, ড্রেসিংরুমে অনেক সময় মজার ছলেই বিদ্রুপ করা হতো। এক সতীর্থ আমাকে বলত, ‘রস, তুমি অর্ধেক ভালো মানুষ। কিন্তু কোন অর্ধেকটা ভালো? আমি কী বোঝাচ্ছি সেটা তুমি জানো না। আমি সেটা বুঝে নিতাম। জাতিগত বিষয় নিয়ে এমন সব মন্তব্য অন্য খেলোয়াড়দেরও শুনতে হতো। একজন পাকেহা (নিউ জিল্যান্ডের সাদা বর্ণের মানুষ) এসব শুনে ভাবত, ‘ওহ, এসব তো মাত্র ঠাট্টা মশকরা। কিন্তু তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা সাদা চামড়ার মানুষ হিসেবে, আর তাদের তো এসব কথা শুনতে হয় না। তাই কোনো প্রতিবাদ হতো না, কেউ শুধরে দিত না।

এসব নিয়ে অভিযোগ করে ঝামেলা বাড়াতে চাননি টেইলর। তাই মুখ বুজে সহ্য করে গেছেন সব। তিনি বলেন, আপনি হয়তো পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা ভাববেন। একই সঙ্গে দুশ্চিন্তাও করবেন যে এতে হয়তো বড় সমস্যা তৈরি হবে অথবা আপনার বিরুদ্ধেই মজা করে বলা কথাকে বর্ণবাদের আখ্যা দেওয়ার অভিযোগ উঠবে। এর চেয়ে সহ্য ক্ষমতা বাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সহজ। কিন্তু এটা কি ঠিক?

নিউজিল্যান্ড দলের পরিবেশের অভিজ্ঞতার কথাও লিখেছেন টেইলর। সেখানেও বর্ণবাদী বিষয়গুলো ছিল। টেইলরের বর্ণবাদের শিকার হওয়ার ঘটনা শুনে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) এক মুখপাত্র নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেছেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

এনজেডসি বর্ণবাদের নিন্দা করে তিনি জানান, রসের এই ধরনের আচরণের শিকার হওয়ার ঘটনা হতাশাজনক। আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে অবশ্যই তার সঙ্গে যোগাযোগ করব।’

প্রসঙ্গত, ক্রিকেটে বর্ণবাদ সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। স্কটল্যান্ডের সাবেক এক ক্রিকেটারের অভিযোগের পর তদন্তে গত মাসে স্কটল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের প্রমাণ মিলেছে। ইয়র্কশায়ার কাউন্টি দলে থাকাকালীন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার আজিম রফিক বর্ণবাদের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন গত বছর। যেটি নাড়িয়ে দেয় ইংলিশ ক্রিকেটকে।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর