ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল
ভিনিসিয়ুসের জোড়া গোলে বায়ার্নকে রুখে দিলো রিয়াল
অনলাইন ডেস্ক
সংগৃহীত ছবি

বায়ার্ন মিউনিখের ভীষণ চাপ সামলে প্রথম সুযোগ পেয়েই জালে বল পাঠায় রিয়াল মাদ্রিদ। বিরতির পর চার মিনিটের ঝড়ে পাল্টা এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। কিন্তু শেষ দিকে আবার ঘুরে দাঁড়ায় রেয়াল। ভিনিসিউস জুনিয়রের জোড়া গোলে বায়ার্নের মাঠ থেকে ড্র করে ফিরল কার্লো আনচেলত্তির দল।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে প্রথম লেগের ম্যাচটি ২-২ ড্র হয়েছে। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে চমৎকার গোলে সমতা টানেন লেরয় সানে। হ্যারি কেইনের গোলে জয়ের সম্ভাবনাও জাগে স্বাগতিকদের, কিন্তু তাদের আশা গুঁড়িয়ে দেন ভিনিসিউস। 

এই প্রতিযোগিতায় রেকর্ড শিরোপা জয়ের মতো রিয়াল মাদ্রিদ ফাইনালও খেলেছে সবচেয়ে বেশি, মোট ১৭ বার। প্রতিপক্ষের মাঠে এই ফলে অন্তত মানসিকভাবে আরেকটি ফাইনালে ওঠার পথে কিছুটা এগিয়ে রইল রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা।

ম্যাচ শুরুর ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই আন্দ্রি লুনিনের কঠিন পরীক্ষা নেয় বায়ার্ন। তবে রিয়াল গোলরক্ষক ছিলেন প্রস্তুত, কেইনের পাস বক্সে পেয়ে ওয়ান-অন-ওয়ানে সানের নেওয়া শট পা দিয়ে রুখে দেন তিনি।

খানিক বাদে পরপর দুই মিনিটে আরও দুটি শট নেয় বায়ার্ন। কেইনের দুর্বল প্রচেষ্টা সহজেই ঠেকান লুনিন, আর ভালো পজিশন থেকে উড়িয়ে মারেন সানে।

প্রথম ২০ মিনিটে প্রতিপক্ষের একচেটিয়া আধিপত্যের সামনে দু-একবার আক্রমণে উঠলেও প্রতিবারই বক্সের বাইরে বল হারিয়ে ফেলে রিয়াল। এই অংশের শেষ মুহূর্তেই প্রথম কর্নার পায় তারা। তবে টনি ক্রুসের ছোট করে নেওয়া কিকে বল পেয়ে উড়িয়ে মারেন ভিনিসিউস।

অবশ্য চার মিনিট পর এই দুইজনের দারুণ বোঝাপড়াতেই এগিয়ে যায় রিয়াল। প্রতিপক্ষের রক্ষণের সামান্য ফাঁক পেয়ে দারুণ এক থ্রু পাস বাড়ান জার্মান মিডফিল্ডার ক্রুস, আর বক্সে ছুটে গিয়ে প্রথম ছোঁয়ায় নিচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ভিনিসিউস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে সেমিফাইনালে টানা তিন মৌসুমে গোল করলেন ভিনিসিউস। এর আগে এই কীর্তি আছে ইয়ারি লিটমেনেন, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও কেভিন ডে ব্রুইনের।

গোলের সঙ্গে ছন্দও যেন কিছুটা ফিরে পায় রিয়াল। পরের ১০ মিনিটে চাপ ধরে রাখে তারা, যদিও আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি এই সময়ে। বিরতির আগে দুই দলই একটি করে বিপজ্জনক পজিশনে ফ্রি কিক পায়, কিন্তু কেউ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিতেও পারেনি।

প্রথমার্ধে গোলের উদ্দেশ্যে সাত শট নিয়ে একটিও কাজে লাগাতে পারেনি বায়ার্ন, সেখানে রিয়াল এক শটেই সাফল্য খুঁজে নেয়। বিরতির পর অবশ্য চার মিনিটেই দুইবার জালে বল পাঠিয়ে ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেয় স্বাগতিকরা।

৫৩তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে সমতা টানেন সানে। বাঁ দিক থেকে এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে বক্সে ঢুকে জোরাল শটে কাছের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেন জার্মান ফরোয়ার্ড।

ওই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই দ্বিতীয় গোল হজম করে রিয়াল। বক্সে জামাল মুসিয়ালাকে ফাউল করে বসেন লুকাস ভাসকেস, সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। নিখুঁত স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন দারুণ ছন্দে থাকা কেইন।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কেইনের মোট গোল হলো আটটি; কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। প্রতিযোগিতাটিতে এর আগে কখনোই এক আসরে এত গোল করেননি এই ইংলিশ তারকা। বায়ার্নের জার্সিতে চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে কেইনের গোল হলো ৪৩টি।

তৃতীয় গোলের আশায় আরও চাপ বাড়ায় বায়ার্ন। পরপর দুই মিনিটে দারুণ দুইটি সুযোগ পায় তারা; তবে কেইনের শট রুডিগারের পায়ে প্রতিহত হওয়ার পর এরিক ডায়ারের সোজাসুজি হেড ঠেকিয়ে দেন লুনিন। ৭৮তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে ভীতি ছড়ান ভিনিসিউস। খানিক আগে ক্রুসের বদলি নামা লুকা মদ্রিচের থ্রু বল বক্সে বুক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোনাকুনি শট নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, রুখে দেন মানুয়েল নয়ার।

৮৩তম মিনিটে ভিনিসিউসের সফল স্পট কিকে সমতায় ফেরে রিয়াল। বক্সে আরেক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রদ্রিগোকে ডিফেন্ডার কিম মিন-জায়ে ফাউল করলে পেনাল্টিটি পায় সফরকারীরা। ২০২১-২২ মৌসুমের শুরু থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই নিয়ে ৩১টি গোলে সরাসরি জড়িয়ে ভিনিসিউসের নাম (১৫টি করে গোল ও অ্যাসিস্ট), যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখন পর্যন্ত অপরাজিত রিয়াল এ নিয়ে ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে সাতটি গোল করল, যা করতে পারেনি আর কোনো দল। এই পরিসংখ্যান দলটির হার না মানা মানসিকতারও প্রমাণ।

আগের ১০ মৌসুমে নকআউট পর্বে তিনবার মুখোমুখি হয় দল দুইটি এবং প্রতিটিতেই জয়ী রিয়াল; প্রতিবার দুই লেগের হিসাবে মোট ৬ ম্যাচ, যার পাঁচটিতে জেতে রিয়াল, অন্যটি ড্র। বায়ার্নের জন্য এবারের লড়াইটি তাই প্রতিশোধের। সম্ভাবনা জাগিয়েও তা এ যাত্রায় করতে পারল না তারা। আগামী বুধবার রিয়ালের মাঠে হবে ফিরতি লেগ। 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর