ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেই ক্লাব ক্যারিয়ারকে বিদায় জার্মান তারকার
অনলাইন ডেস্ক
টনি ক্রুস

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম টনি ক্রুসের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা নিয়েই থাকার কথা। ২০১৩ সালে ঐতিহ্যবাহী এই মাঠেই ক্যারিয়ারে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি; বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে জিতে। ভাগ্যের কী খেলা, ১১ বছর পর একই মাঠে, একই দলের বিপক্ষে আরেকটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে জিতে ট্রফির ছোঁয়া পেলেন আরেকবার। এবার তার গায়ে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি। যে জার্সিতে থেমে গেল তার পথচলাও। সমাপ্তি ঘটল তার বর্ণাঢ্য ক্লাব ক্যারিয়ারেরও।

নিজ দেশে আসছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ শেষে বুটজোড়া একেবারেই তুলে রাখার ঘোষণা গত মাসেই দিয়ে দেন ক্রুস। রিয়ালেই ক্লাব ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান, সেই ইচ্ছার কথা আগে অনেকবারই বলেছিলেন তিনি। সেই কথাও রাখলেন। ১০ বছরে এই ক্লাবের অনেক সাফল্যের নায়ক তিনি। গত সপ্তাহে রেয়াল বেতিসের বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচ দিয়ে রিয়ালের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেন জার্মান মিডফিল্ডার। সতীর্থ, ক্লাব ও সমর্থকদের স্মরণীয় আয়োজনে অশ্রুসিক্ত চোখে প্রিয় বের্নাবেউকে বিদায় জানান তিনি।

অপেক্ষা ছিল কেবল শেষ ম্যাচ খেলার। সেটি খেলে ফেললেন শনিবার (০১ জুন)। যেখানে ডর্টমুন্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় ১৫তম শিরোপা জিতে রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করল রেয়াল। ক্রুসও শেষটা রাঙালেন ট্রফি উঁচিয়ে। রিয়ালে বছরের পর বছর যে কাজটা করে গেছেন তিনি, শেষবেলায়ও সেটি করে দেখিয়েছেন আরেকবার। প্রথমার্ধে বিবর্ণ রিয়াল বিরতির পর ঘুরে দাঁড়ায় মূলত ক্রুসের একটি কর্নার এবং সেটি থেকে দারুণ হেডে দানি কারভাহালের গোলে। পরে ব্যবধান বাড়িয়ে জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেন ভিনিসিউস জুনিয়র।

৮৫তম মিনিটে ক্রুসকে যখন তুলে নেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি, গ্যালারিতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দুই হাত উঁচিয়ে উল্লাস করতে থাকেন এই তারকা। বুকে আঙুল দিয়ে দেখান ক্লাবের ব্যাজ। হয়তো বোঝাতে চাইলেন, কতটা ভালোবাসেন এই ব্যাজকে, এই ক্লাবকে। তাকে আলিঙ্গনে বাঁধেন ভিনিসিউস। দর্শকদের করতালির মাঝে তিনি ছেড়ে যান মাঠ, ক্লাবের হয়ে শেষবারের মতো, তার বদলি নামেন আরেক অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ। ম্যাচ শেষের পর সতীর্থদের সঙ্গে ক্রুস উদযাপন মাতেন আবার। তাকে শূন্যে ছুড়তে থাকেন সতীর্থরা। চলতে থাকে তাদের শিরোপা উল্লাস।

ক্রুসের ক্যারিয়ারের এটি ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা, যার পাঁচটি রিয়ালের জার্সিতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জমানায় এর ৬টি ট্রফি জেতা চার ফুটবলারের একজন তিনি। ইউরোপের সফলতম ক্লাবটির হয়ে ৪৬৫ ম্যাচ খেলে ২৩টি ট্রফি জিতে থামল তার পথচলা। এই লম্বা পথচলায় তিনি পাস দিয়েছেন ৩৪ হজার ৯১টি। সুযোগ তৈরি করেছেন ৯৭৪টি। নামের পাশে অ্যাসিস্ট ৯৩টি, গোল ২৮টি। বল পায়ে তার সৃষ্টিশীলতার পুরোটা যদিও শুধু সংখ্যায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। কত কত মুহূর্ত তিনি রাঙিয়ে তুলেছেন জাদুকরি পারফরম্যান্সে, তার কি হিসাব রাখা যায়!

বিদায়ী মৌসুমে শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগই নয়, তার আগে স্প্যানিশ সুপার কাপ ও লা লিগা জয়ের স্বাদও পেয়েছেন ক্রুস। সব মিলিয়ে লা লিগা জিতেছেন তিনি চারবার, স্প্যানিশ সুপার কাপও চারবার। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন পাঁচবার, উয়েফা সুপার কাপ তিনবার, কোপা দেল রে একবার। জার্মানির হয়ে জিতেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ। কখনও ইউরো জয়ের স্বাদ অবশ্য পাননি তিনি। ঘরের মাঠে আসছে আসরে সেই আক্ষেপ ঘোচাতে পারলে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে বড় সব শিরোপাই জেতা হয় যাবে তার। সেটি না হলেই বা কি, এই ক্রুসকে তো মনে রাখতেই হবে সবার!

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর