ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ, বিশ্বকাপ এখন প্রস্তুতির মঞ্চ!
মেজবাহ্‌-উল-হক , দুবাই থেকে
ফাইল ছবি

এখনো বাংলাদেশের দুই ম্যাচ বাকি। কিন্তু তার আগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায়! কাগজে-কলমে ক্ষীণ যে আশাটুকু আছে তা কেবলই আসরের গাণিতিক ভ্রম! সুপার টুয়েলভে টানা তিন ম্যাচ হার। সামনের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কাগজে-কলমে জেগে থাকা আশা জিইয়ে রাখতে হলেও জিততে হবে পরের দুই ম্যাচ। শুধুমাত্র নিজেরা জিতলেই হবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর দিকে। ব্যাপারটা এমন যে, পীঠে ১ মণ বস্তা নিয়ে এভারেস্ট জয় করার পর কামনা করতে হবে অন্যরা যেন বেজক্যাম্পেও আসতে না পারে!

এমন অবস্থায় নতুন করে স্বপ্ন দেখে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার চেয়ে কী পরের সিরিজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াই  বুদ্ধিমানের কাজ নয়! বিশ্বকাপের ঠিক পর পরই বাংলাদেশে টি-২০ সিরিজ খেলতে যাচ্ছে পাকিস্তান দল। প্রথম ম্যাচ ১৯ নভেম্বর। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের (১৪ নভেম্বর) কয়েকদিন পরেই। তার আগে প্রস্তুতির ব্যাপার আছে, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয় আছে। তাই বাবর আজমরা যদি ফাইনালে ওঠেন সেক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সরাসরি চলে যাবেন বাংলাদেশে। মাহমুদুল্লাহদের হাতে সময় নেই। এর মাঝেই নিজেদের নতুন করে প্রস্তুত হতে হবে। নতুন করে চিন্তা করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বকাপে ভরাডুবির পরও কি এই দলকে নিয়েই নতুন পরিকল্পনা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড? নাকি নতুনদের নিয়ে নতুন করে কিছু ভাববে!

টি-২০ হচ্ছে পাওয়ার হিটারদের খেলা। কিন্তু বাংলাদেশ দলে কোনো পাওয়ার হিটার নেই। পাওয়ার হিটার তৈরির পরিবেশও নেই। বাংলাদেশের উইকেটগুলো হচ্ছে লো স্কোরিং। সেখানে কেবলই স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পান। ব্যাটসম্যানদের জন্য কোনো সহায়তা থাকে না। বড় শট করতে গেলেই ‘আউট’। পাওয়ার হিটিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য খেলার ব্যাপারে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আগ্রহীও নয়। যে কারণে বাংলাদেশে কোনো পাওয়ার হিটার তৈরিও হচ্ছে না। আর পাওয়ার হিটারবিহীন দল আইসিসির পর মতো ইভেন্টে ‘স্পোটিং’ উইকেটে খেলতে নেমেই বিপাকে পড়ছে। 

সব শেষ ম্যাচের কথাই ধরুন, প্রথম ১৫ ওভারে মাত্র ৮৪  রান করার পরও শেষের ৫ ওভারে সাত সাতটি ছক্কা হাঁকিয়ে স্কোর ১৪২ করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর বাংলাদেশ কিনা ৬ উইকেট হাতে থাকার পরও শেষ ৩ ওভারে মাত্র ৩০ রানও করতে পারেনি। এমনকি শেষ ওভারে ১৩ রানও নিতে পারেননি মাহমুদুল্লাহরা। শেষ ওভারে একটা বাউন্ডারি হলেই ফল আসতো বাংলাদেশের পক্ষে। বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করেও কেন বিসিবি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্লো উইকেট বানিয়েছিল সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। কেবলমাত্র সিরিজ জয়ের ‘সস্তা চিন্তা’ করতে গিয়ে বিশ্বকাপটাই মাটি হয়ে গেল বাংলাদেশের। 

তবে সব কিছু শেষ হওয়ার পরই যেন বিসিবির টনক নড়েছে। তাই এখন চিন্তা করছে স্পোর্টিং উইকেট বানানোর। গতকাল আমিরাতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি খুবই হতাশ। এখন নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। ঘরের মাঠে মন্থর উইকেটে খেলার কারণে আমাদের পাওয়ার হিটার তৈরি হচ্ছে না। সামনে স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করতে হবে।’ 

বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে স্লো উইকেটে স্পিন দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে কুপোকাত খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু সে আত্মবিশ্বাস যে ‘মিথ্যা আত্মবিশ্বাস’ ছিল তা বিশ্বকাপে ভরাডুবির পরই যেন প্রমাণ হয়ে গেল। এখন নতুন করে পরিকল্পনা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। উইন্ডিজের বিরুদ্ধে হারার পরই স্বপ্ন হয়ে গেছে দুঃস্বপ্ন। দুই ম্যাচ আগেই বিশ্বকাপ হয়ে গেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের জন্য পরের সিরিজের প্রস্তুতি মঞ্চ।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত



এই পাতার আরো খবর