ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

উজ্জ্বল ইতিহাস লিখতে চায় আফগানিস্তান
অনলাইন ডেস্ক
ফাইল ছবি

তালেবানের রক্তচক্ষুতে জর্জরিত আফগানবাসী। নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ পালাতে পারেনি। যারা পালাতে পেরেছেন, তারা জানেন ঘর-বাড়ি ছেড়ে আসার যন্ত্রণা। পরিবার আর পরিজনদের ফেলেই অনেকে পালিয়েছেন অন্য দেশে। শুধু মাত্র প্রাণ বাঁচানোর দায়ে। গত কয়েক মাসে আফগানিস্তান জুড়ে শুধুই আর্তনাদ আর মৃত্যু মিছিল। দূর থেকে দেশের জন্য প্রার্থনা করেছেন রশিদ খান, মোহম্মদ নবিরা । আফগানিস্তানের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়েও একটা সময় তৈরি হয়েছিল সংশয়। কিন্তু দেশবাসীর জন্য ২২ গজে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিচ্ছেন মোহম্মদ শাহজাদ, গুলবাদিন নায়েবরা।

বুধবার (৩ নভেম্বর) বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। এবারের আফগানরা অনেক ভয়ানক, ক্ষুধার্ত। ৩ ম্যাচে রশিদদের ঝুলিতে ৪ পয়েন্ট। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে হারলেও নবীনদের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। ইতিহাস তৈরি করতে নবিদের চাই আর একটা জয়। সঙ্গে ভালো রান রেট। তাহলেই ভারত, নিউজিল্যান্ডকে ছাপিয়ে শেষ চারে চলে যেতে পারে আফগানিস্তান। ক্রিকেটীয় বুদ্ধিতে খাতায় কলমে বিরাট কোহলিরা অনেক এগিয়ে জাজাইদের থেকে। কিন্তু এই আফগানিস্তান অন্য গল্প তৈরি করছে। রূপকথা সৃষ্টির স্বপ্ন দেখাচ্ছে। 

বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নেমে জাতীয় সঙ্গীতের সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছেন নবি-রশিদরা। তালেবানের ফতোয়া, ২২ গজে অতিরিক্ত দেশাত্মবোধ না দেখানো। কিন্তু জাজাই-শাহজাদরা জানেন নিজেদের ঘর বাড়ি ছেড়ে থাকার যন্ত্রণা কি। তালেবানের প্রতিটা চাবুকের প্রতিঘাত হিসেবে শাহজাদ-রশিদরা বেছে নিয়েছেন বাইশ গজকেই। বিপক্ষের বোলারের ডেলিভারিকে মাঠের বাইরে পাঠানোর মধ্যে মিশে আছে সেই জবাব। বিপক্ষ ব্যাটারদের উইকেট নেওয়ার মধ্যে লুকিয়ে আছে সেই জবাব। আফগানরা ক্রিকেটাররা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়ে যাচ্ছেন বিশ্বকাপে।

এবার আসা যাক দলের কথায়। পাকিস্তান ম্যাচ হারের পরই ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন আজগর আফগান। তাই নামিবিয়ার বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেন আফগান। সাবেক এই আফগান অধিনায়ক বলেন, তরুণদের জায়গা করে দিতেই নিজে সরে দাঁড়িয়েছেন। এই আফগানিস্তান দলে সতীর্থের জন্য রয়েছে সহানুভূতি আর টিমের প্রতি রয়েছে দায়বদ্ধতা। 

বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের নেট রান রেট +৩.০৯৭। গ্রুপের বাকি সব দলের চেয়ে অনেকটা বেশি। শাহজাদ-জাজাইরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলে বেড়ান। কেউ খেলেন পাকিস্তান সুপার লিগ। কেউ আবার আমিরাতের জনপ্রিয় টি-টেন লিগ। সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ভয়ডরহীন ক্রিকেটই এই আফগানিস্তানের অস্ত্র। ফর্মে থাকলে বিপক্ষ বোলারদের রীতিমতো শাসন করতে পারেন শাহজাদ-জাজাইরা। নাজিবুল্লাহ জাদরান, রহমনুল্লাহ গুরবাজ, গুলবাদিন নায়েব, মোহম্মদ নবিদের কেউ কেউ খেলেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, আবার কেউ খেলেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি লিগে। ফলে ভারতের পক্ষে ম্যাচ বের করার কাজ মোটেও সহজ হবে না।

স্কটল্যান্ড আর নামিবিয়াকে উড়িয়ে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন নবিরা। তারা জানেন, আর দুইটি ম্যাচের একটাতে জিতলেই হয়তো ইতিহাস তৈরি হয়ে যেতে পারে। অঘটন নয়, বরং হেভিওয়েটদের হারিয়ে ক্রিকেট মানচিত্রে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চান নবি, রশিদরা। তালেবানের চোখ রাঙানির জবাব হিসেবে নিজেদের পারফরম্যান্সকে মেলে ধরতে চান শাহজাদ-হামিদরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ নয়, বরং বিশ্বকে নিজেদের অন্য পরিচয়ে বন্দিত করতে চান নবিরা। যেখানে বিদ্বেষের আগুন নিভিয়ে দেশের পতাকাকে শিখরে তুলে অন্য আফগানিস্তান নামে বাঁচতে চান ক্রিকেটাররা।

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত



এই পাতার আরো খবর