ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘বিসিবি সংবর্ধনা বোঝে, ক্রিকেট বোঝে না’
অনলাইন প্রতিবেদক
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসানের দল।

‘নিউট্রন বোমা বোঝ, মানুষ বোঝ না’-‘অশ্লীল সভ্যতা’ কবিতায় কবি হেলাল হাফিজের এমন উচ্চারণ শুধু শুধু নয়। তিনি চরম হতাশা, আক্ষেপ, আফসোস নিয়েই এই কথা বলেছিলেন। কারণ, কোটি কোটি বছর মানুষ মানুষের মাঝে বসবাস করেও মানুষকে বুঝতে পারেনি। বুঝেছে মানব সভ্যতা বিনাশকারী পরমাণু বোমাকে। যে বোমায় কেবল ধ্বংস আর অনিবার্য বিপর্যয়। যে বোমায় ঝলসে গেছে হিরোশিমা, নাগাসাকি। এখনও যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে জাপানের লাখ লাখ মানুষ।

বাংলার ক্রিকেটেও বিসিবি তেমন। বছরের পর বছর ক্রিকেটের মাঝে থেকেও এই সংস্থা যেনো ক্রিকেট বোঝে না! বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হয়েও ক্রিকেটের চেয়ে অন্য দিকেই ঝোঁক বেশি বিসিবির। নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ড আবারও সমালোচনায় জড়িয়েছে! তবে তা ক্রিকেটের কারণে নয়, একটা সংবর্ধনা নিয়ে।

গণমাধ্যমের খবর বলছে, ব্রিসবেনে শুক্রবার একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পাঠানো হয়েছিল সাকিবদের। সেখানে গিয়ে প্রবাসীদের ভালোবাসার বদলে একরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই ফিরেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া সাকিব আল হাসানের দল। 

জানা গেছে ক্রিকেটারদের অনেকের আপত্তি থাকারও পরেও ওই সংবর্ধনায় যেতে তাদের একরকম বাধ্য করা হয়। আর সেখানে গিয়ে এমন কিছু কাণ্ডের মুখোমুখি হতে হয় সাকিবদের, যা সম্পর্কে তারা অবগত ছিলেন না।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, প্রবাসীদের অভিযোগটা সাকিবের বিরুদ্ধেই বেশি। দলীয় এবং আলাদাভাবে ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অটোগ্রাফ ব্যাট রাখা হয়েছিল। তাতে দলের অন্যসব ক্রিকেটার সই করলেও সাকিব কোনো ব্যাটেই সই করেননি। আলোচনা অনুষ্ঠানেও একবাক্যে নিজের বক্তব্য শেষ করেছেন। 

আর সাকিবের এমন কাণ্ডে নাকি আয়োজকরা বেশ অপমানিত বোধ করছেন। তাদের দাবি, সাকিবরা এমন আচরণ করতে পারেন না। আর সাকিবদের উল্টো অভিযোগ যে, ব্যাটে সই করা কিংবা আলাদা করে সবার সাথে সেলফি তোলার বিষয়টি তারা জানতেন না। আর ২৪ অক্টোবরের খেলা নিয়ে তারা ভাবছেন, ফলে অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ার মতো মানসিকতাও তাদের ছিল না।

সাকিবদের মন ভালো না থাকারই কথা। কারণ সফরটা যে মোটেও সুখকর কিছু দিয়ে শুরু হয়নি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা চার হার। প্রস্তুতি ম্যাচেও আফগানদের কাছে ১৬৩ রানের টার্গেটে ৬২ রানের বড় হার। সবমিলিয়ে সাকিবরা আছেন বড় চাপে।

তার মাঝে এমন সমালোচনা নিশ্চয়ই সাকিব আল হাসানের বাহিনীকে আরেকরকম চাপেই ফেলেছে। তারপর আছে হোবার্ট থেকে গেম ভেন্যু মেলবোর্নে যাওয়ার ধকল। ২৪ অক্টোবর সুপার টুয়েলভের খেলায় নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সবমিলিয়ে বিসিবির উচিত ছিল সাকিবদের অনুশীলন ও গেম প্ল্যান করার যথেষ্ট সময় দেওয়া। কারণ যে বিপর্যয় বাংলাদেশ শিবিরে, সেখানে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারদের ডাচ কিংবা জিম্বাবুয়েকে হারানোও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই সাধারণ ভক্তদের মনে উঠছে প্রশ্ন নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ড আসলে সংবর্ধনার বদলে ক্রিকেটটা বুঝবেন কবে? অনেকেই বলছেন সংবর্ধনা নয় এখন টাইগারদের সর্বনাশ এড়ানোর কৌশল সাজানোর সময়। মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে লড়াইয়ে ফেরার সময়। কারণ, নেদারল্যান্ডস কিংবা আফগানদের কাছে হারলেও তো ক্রিকেট বোর্ডের কেউ দায় নেবেন না, নেন না।

অস্ট্রেলিয়া গিয়েই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছেন, মাঠের খেলাটা ক্রিকেটারদেরই খেলতে হবে। যেকোনো ম্যাচে হারার পরই তো টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন ক্রিকেটারদের ওপরই ক্ষোভ ঝাড়েন। এমনিক স্বয়ং বিসিবি বসও পাশে দাঁড়ানোর বদলে ক্রিকেটারদের খেলার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। 

তাই বিসিবির সংবর্ধনা বোঝার চেয়ে ক্রিকেট বোঝাটা জরুরি নয় কী? আর যদি তারা এমন সংবর্ধনাই বুঝতে থাকে, তবে সেই সংবর্ধনাই ক্রিকেটকে ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কি?

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর