ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘ভয়ডরহীন ক্রিকেট’ সুজনদের গতিবিদ্যার গোড়াতেই গলদ
অনলাইন প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কথায় কথায় চার ছক্কা হাঁকাতে পারে না, তাই বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে তারা কিছুই করতে পারছে না। এবার হাতখুলে মারার চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের ভাষায় যেটা ‘ফিয়ারলেস বা ভয়ডরহীন’ ক্রিকেট।

বাংলাদেশ খারাপ খেললেই সুজন এই কথাই বারবার বলেন, ‘ছেলেরা ফিরারলেস ক্রিকেট খেলতে পারছে না।’ তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বলছে ভিন্ন কথা। চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে ‘ফিয়ারলেস ক্রিকেট’ তত্ত্বটা কার্যকর কিছু নয়। হাত খুলে মারাই শেষ কথা নয়। আসলে টি-টোয়েন্টি খেলতে হবে মাথা খাটিয়ে, পরিস্থিতি বুঝে।

যদি সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচ মানে নিউজিল্যান্ড বনাম স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার খেলাটায় নজর দেওয়া যায়, সেখানে দেখা যাবে খুব মারকাটারি ক্রিকেট, চার ছক্কার ফুলঝুরি। ওই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ওপেনার ফিন অ্যালেন ১৬ বলে ৪২ রান করেন। তার স্ট্রাইকরেট ছিল ২৬২! আরেক ওপেনার ডেভন কনওয়ে করেছিলেন ৫৮ বলে ৯২। স্ট্রাইকরেট ১৫৮! স্টাইকরেটই দুজনের খেলার পার্থক্য বলে দেয়। অ্যালেনের মারার সময়ে অনেকটা শীতের শান্ত নদীর মতো পড়েছিলেন কনওয়ে।

অ্যালেনের বিদায়ের পর তিনে আসেন কিউই কাপ্তান কেন উইলিয়ামসন। আর ঠিক তখই মারকাটারি রূপ নেন কনওয়ে, বিপরীতে কেন উইলিয়ামসন ঠুকে খেলতে থাকেন। মানে এ গোলার্ধে যখন ঝড় তখন ও গোলার্ধ শান্ত। খাঁটি বাংলায় ভারসাম্য। কেন উইলিয়ামসন হাল ধরেছেন আর কনওয়ে ঝড় তুলেছেন। আবার শেষটায় জিমি নিশাম ও কনওয়ে সমানতালে খেলেছেন। নিশাম শেষের দিকে ১৩ বলে করেছেন ২৬ রান। মানে তখন হাত খুলে মারলে দলের খুব একটা ক্ষতি হতো না। কারণ, দল তখন মোটামুটি লড়াই করার পুঁজি পেয়ে গেছে।

এবার ২৩ অক্টোবরের ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে চোখ দিলেও দেখা যাবে টি-টোয়েন্টিতে আসলে ভয়ডরহীন বলে তেমন কোনো শব্দ নেই। বরং আছে ভয়কে জয় করার সূত্র। 

৮ ওভার শেষে ১৬০ রানের টার্গেটে খেলতে নামা ভারতের রান ৩৮ উইকেট ৪! মাঠে তখন বিরাট কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়া। পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। নিশ্চিতভাবেই কোহলি-পান্ডিয়া ভয় পেয়েছেন, চাপে পড়েছেন। তাদের নাকমুখে সেই চাপের ছাপও ছিল পরিষ্কার। কিন্তু তারা ভড়কে যাননি। উল্টো ধীরে ধীরে ভয়কে জয় করেছেন। প্রথমে একশ’রও নীচে স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন দুই ব্যাটার। ধীরে ধীরে স্ট্রাইক রোটেট করে দলকে নিয়ে গেছেন স্থিতিশীল পর্যায়। 

এরপর বাড়িয়েছেন স্ট্রাইকরেট। এমনকি পান্ডিয়ার মতো হাত খুলে খেলা মারকাটারি ব্যাটারের এই ম্যাচে স্ট্রাইকরেট ১০৮! ৩৭ বলে ৪০ করেছেন তিনি। তার মানে এখানে ভয়ডরহীন ক্রিকেট নয় পান্ডিয়া খেলেছেন পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী। বিপরীতে কোহলি ১৫৪ স্ট্রাইকরেট পার করেছেন শেষ পর্যন্ত। এই টপ অর্ডার ব্যাটার পাকিস্তানের বিপক্ষে রীতিমতো অঙ্ক কষে কষে শট খেলেছেন। যে খেলায় ছিল না তেমন কোনো বাড়াবাড়ি, ছিল না মারদাঙ্গা খেলার তাড়না। উল্টো ক্ল্যাসিক ছন্দেই বিরাট পরিশীলিত ক্রিকেট খেলে দলকে জিতিয়েছেন।

বিপরীতে পাকিস্তানের ব্যাটিং বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ ছিল মারকাটারি খেলার ধান্ধা। শাদাব খান থেকে আসিফ আলি সবাই মুখ থুবড়ে পড়েছেন খালি পরিস্থিতি বুঝে মাথা খাটিয়ে খেলতে না পারার কারণে।

তাই সুজনদের এই কথিত ভয়ডরহীন ক্রিকেটের রকেট সায়েন্স থেকে বেরিয়ে মাথা খাটিয়ে ক্রিকেট খেলার দিকে জোর দেওয়া জরুরি। কারণ, মাথার খেলায় গায়ের জোরে টিকে থাকা যায় না। ভয়ডরহীন নয় বরং ভয়কে জয় করার কৌশল রপ্ত করা ক্রিকেট খেলার সময় এখন। তাই টাইগারদের কৌশল বদলানো এখন সময়ের দাবি।  

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর