ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

যেভাবে ছোট্ট বস্তি থেকে মাইক্রোসফটের বড় কর্মকর্তা শাহিনা! (ভিডিও)
অনলাইন ডেস্ক
শাহিনা আত্তারওয়ালা

নাম তার শাহিনা আত্তারওয়ালা। বড় হয়েছেন বস্তি এলাকায়। এক সময় ঘুমাতে হত রাস্তায়। দু’বেলা ঠিকমতো খাবারও জুটতো না। নিজের একটি কম্পিউটার কেনা? সে তো ছিল স্বপ্নাতীত! সেই তরুণী এখন বিশ্বের অন্যতম বড় সফটওয়্যার কোম্পানি মাইক্রোসফটের ডিজাইন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা।

সম্প্রতি টুইটারে তার জীবন কাহিনি তুলে ধরা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ যেন স্লামডগ বিলিওনিয়ার্সের গল্প!

ভিডিওতে শাহিনা নিজের মুখে তার জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের সঙ্গে লড়াই করে উঠে দাঁড়ানোর কাহিনি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের ‘ব্যাড বয় বিলিওনিয়ার্স: ইন্ডিয়া’ ওয়েবসিরিজে ভারতের মুম্বাইয়ের বস্তি এলাকার একটি দৃশ্যে নিজের পুরনো বাড়ি দেখার পরে আপ্লুত হয়ে তিনি টুইট করেন।

শাহিনা লেখেন, “ওই ওয়েবসিরিজে মুম্বাইয়ের বস্তি এলাকার যে বাড়িগুলো দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি বাড়ি আমার। আমি ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই বাড়িতেই ছিলাম।”

বান্দ্রা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে দরগা গলি বস্তিতে থাকতেন শাহিনা। তার বাবা বাড়িতে বানানো তেল ফেরি করে বিক্রি করতেন। তার পরিবার উত্তরপ্রদেশ থেকে মুম্বাই পাড়ি জমায়।

প্রথমবার স্কুলে কম্পিউটার দেখার পর থেকেই কম্পিউটার নিয়ে তার আগ্রহ জন্মায়। আগ্রহ দেখে, বাবা টাকা ধার করে মেয়েকে স্থানীয় কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি করেন।

নিজের কম্পিউটার কিনতে শাহিনা না খেয়ে দুপুরের খাবারের টাকা জমাতে শুরু করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্কুলছাত্রীকে।

এক সাক্ষাত্কারে শাহিনা বলেন, “বস্তির জীবন খুব কঠিন ছিল এবং আমাকে যৌন হয়রানির মুখোমুখিও হতে হয়েছিল।”

শাহিনার কথায়, “১৫ বছর বয়সের মধ্যেই আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি আমার চারপাশে অনেক নারীকে অসহায়ভাবে নির্যাতিত হতে দেখেছি। বেশিরভাগ বিষয়েই স্বাধীনতা ছিল না।”

তবে এই জীবন মেনে নিতে চাননি শাহিনা। সেই জেদ সম্বল করেই এগিয়ে যেতে থাকা। শেষে মাইক্রোসফটে চাকরি হয়।

তবে নিজের সাফল্যের জন্য বরাবর বাবাকেই ধন্যবাদ জানান শাহিনা।

মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমে বি.কম-এ স্নাতক পাস করেন শাহিনা। পরে তিনি এনআইআইটি থেকে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেন।

ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনো শেষ করে তিনি বিভিন্ন সংস্থার পণ্যের ডিজাইন শুরু করেন।

এরপরই গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে তার ঝুলিতে আসে মাইক্রোসফটের চাকরি। ধীরে ধীরে ডিজাইন বিভাগের প্রধান হন।

নিম্নবিত্ত বা বস্তি এলাকার নারী, যারা জীবনের প্রতিকূলতাকে হার মানাতে চান, সেই মেয়েদের অনুপ্রেরণা জোগাবে শাহিনার জীবনের গল্প।

সম্প্রতি শাহিনা বলেছেন, “ভারতে লাখ লাখ পরিবার আমারই মতো দারিদ্রের মধ্যে বাস করে। যে দারিদ্র আপনাদের চোখে পড়ে না। আশার আলো এটাই যে, ক্ষমতায় যারা রয়েছেন, তাদেরকে একজন গড়পড়তা শিক্ষিত ভারতবাসীও প্রশ্ন করতে পারেন এবং এর ফলে তাদের জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে।”

শাহিনা বিয়ে করেছেন। গোছানো সংসার। সঙ্গী, স্বামী এবং বছর খানেকের এক সন্তান।  তথ্যসূত্র: এনডিটিভি, ট্রিবিউন ইন্ডিয়া

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর