ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পিছিয়ে পড়েও বড় জয়ে বিশ্বকাপ শুরু ফ্রান্সের
অনলাইন ডেস্ক
সংগৃহীত ছবি

শিরোপা ধরে রাখার মিশনে ‘ডি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় মাঠে নামে ফ্রান্স। আল জানুব স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের শুরুতেই ফরাসিদের স্তব্ধ করে উল্লাসে ভাসে অস্ট্রেলিয়া শিবির। কিন্তু সেই উল্লাস মলিন করে গোল উৎসবে মেতে দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

ম্যাচটি ৪-১ ব্যবধানে জিতেছে দিদিয়ে দেশমের দল। শুরুতে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন রাবিও। এরপর জিরুদের গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় তারা। আর দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পে ব্যবধান বাড়ানোর পর শেষ গোলটি করেন জিরুদ।

শক্তি-সামর্থ্যে প্রতিপক্ষ অনেক এগিয়ে থাকলেও আগের দিন প্রত্যয়ী কণ্ঠে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া গোলরক্ষক ম্যাট রায়ান। মাঠে নেমে শুরুটাও তারা করে আত্মবিশ্বাসী। দারুণ এক আক্রমণে এগিয়ে যায় নবম মিনিটে। ডান দিক থেকে ডি-বক্সে ম্যাথু লেকির বিপজ্জনক জায়গায় বাড়ানো বল প্রথম ছোঁয়ায় বাঁ পায়ের শটে গোলটি করেন ক্রেইড গুডউইন।

এবারের বিশ্বকাপে এটাই সবচেয়ে দ্রুততম গোল। দিনের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে লিওনেল মেসির দশম মিনিটের গোলকে পেছনে ফেললেন গুডউইন। পিছিয়ে পড়ে চাপ বাড়ায় ফ্রান্স। সাফল্য মেলে ২৭তম মিনিটে। থিও এরনঁদেজের ছয় গজ বক্সের মুখে বাড়ানো ক্রসে হেডে সমতা টানেন জুভেন্টাস মিডফিল্ডার রাবিও। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ২৭ ম্যাচে মাত্র একটি গোল করা রাবিও এই নিয়ে সবশেষ তিন ম্যাচে করলেন দুটি।

এরপর আরও চাপ বাড়ায় ফ্রান্স। একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে ফেলে তারা। অস্ট্রেলিয়া অবশ্য দ্বিতীয় গোলটি হজম করে কিছুটা নিজেদের ভুলে। প্রতিপক্ষের একটি ধারহীন আক্রমণের পর গোলরক্ষক রায়ান ছোট করে পাস দেন সামনের সতীর্থকে। তিনি বাড়ান ডান দিকে। ওখানে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেন রাবিও, এরপর এমবাপ্পের ছোট্ট ব্যাকহিল পাস পেয়ে বক্সে ঢুকে তিনি বাড়ান পেনাল্টি স্পটের কাছে। আর ওখানে অনায়াসে প্লেসিং শটে ঠিকানা খুঁজে নেন জিরুড।

২৪ বছরে ফ্রান্সের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ অভিষেকে গোল করলেন ও করালেন রাবিও। এর আগে সবশেষ এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন সাবেক ফরোয়ার্ড ক্রিস্তোফ, ১৯৯৮ সালের জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।

প্রথমার্ধের শেষ কয়েক মিনিটে দারুণ সব সুযোগ তৈরি হয়। ৩৯তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে এমবাপ্পের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় উড়িয়ে মারেন উসমান দেম্বেলে। খানিক পর এমবাপে মিস করেন আরও সহজ সুযোগ। ডান দিক থেকে গ্রিজমান ছয় গজ বক্সের মুখে পাস দেন। এমবাপ্পের সামনে একমাত্র বাধা ছিল গোলরক্ষক; কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে সাইড ফুটে উড়িয়ে মারেন তিনি। এমন সুযোগ হাতছাড়া করার খেসারত ফ্রান্স দিতে বসেছিল বিরতির ঠিক আগে। তবে জ্যাকসন ইরভিনের হেড পোস্টে বাধা পেলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় দেশমের দল।

৬১তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ শাণায় ফ্রান্স। জিরুডকে বল বাড়িয়ে এগিয়ে যান এমবাপ্পে, ফিরতি পাস পেয়ে তার শট দুর্দান্ত ট্যাকলে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান ডিফেন্ডার কাই রোলেস। অনেক প্রচেষ্টার পর ৬৮তম মিনিটে তৃতীয় গোলের দেখা পায় ফ্রান্স। প্রথমে বাঁ দিক থেকে এমবাপ্পের কোনাকুনি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে অন্য পাশে বল ধরে দেম্বেলে ক্রস বাড়ান ছয় গজ বক্সে। প্রতিপক্ষের দুজনের মধ্যে লাফিয়ে হেড করেন পিএসজি তারকা, বল পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়।

২০১৮ সালের বিশ্বকাপে অভিষেক আসরে ৪ গোল করে দেশের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এমবাপ্পে। ২৩ বছর বয়সে বিশ্ব সেরার মঞ্চে তার গোল হলো ৫টি। ২৪ পূরণের আগে বিশ্বকাপে তার চেয়ে বেশি গোল করার কৃতিত্ব আছে কেবল পেলে (৭), মারিও কেম্পেস (৬) ও হামেস রদ্রিগেসের (৬)। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালের দুদিন পর ২৪ পূর্ণ হবে এমবাপের।

তিন মিনিট পরই ব্যবধান বাড়ান জিরুদ। এখানেও জড়িয়ে আছে এমবাপ্পের নাম। বাঁ দিক দিয়ে গতিতে ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে তিনি ক্রস বাড়ান বক্সে, আর হেডে স্কোরলাইন ৪-১ করেন ৩৬ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। জাতীয় দলের হয়ে এসি মিলান ফরোয়ার্ডের গোল হলো ৫১টি। বসলেন দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা থিয়েরি অঁরির পাশে।

বাকি সময়েও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে ফ্রান্স। প্রথম ১৫ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে তিনটি শট নেওয়া অস্ট্রেলিয়া বাকি সময়ে নিতে পারে মাত্র একটি। লক্ষ্যে যদিও ওই একটি শটই ছিল।

বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন মূল তারকাদের একজন করিম বেনজেমার চোট পেয়ে ছিটকে পড়ার ধাক্কা যে ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে ফ্রান্স, তা তাদের পারফরম্যান্সে স্পষ্ট। এখন শুরুর এই দাপুটে পারফরম্যান্স ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার পালা দুবারের চ্যাম্পিয়নদের সামনে।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর