ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চার্জিং বল ‘আল রিহলা’র কারিশমাতেই কি বিশ্বকাপের পরবর্তী রাউন্ডে গেল জাপান?
অনলাইন ডেস্ক

এবারের ফুটবল বিশ্বকাপে প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেক উন্নতি ঘটিয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। এসব প্রযুক্তির সুবাদে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সিদ্ধান্তও নিখুঁতভাবে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। পর্তুগাল-উরুগুয়ের বিতর্কিত গোল হোক ও একাধিক অফসাইডের সিদ্ধান্ত এর বড় প্রমাণ। এই সবই সম্ভব হয়েছে অ্যাডিডাসের তৈরি ‘আল রিহলা’ বলের কারিশমায়। শুধু তা-ই নয়, এই বলের প্রযুক্তির কারণেই স্পেনের বিরুদ্ধে জাপানের দ্বিতীয় গোলটিও বৈধ বলে গণ্য করা হয়। এতে পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত হয় জাপানের, ছিটকে যায় জার্মানি।

বিশ্বকাপে বরাবরই ফুটবল সরবরাহ করে থাকে অ্যাডিডাস। তবে এবারের বিশ্বকাপে যে বল দিয়ে খেলা হচ্ছে, তা ফুটবল খেলাটাকেই বদলে দিয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞের মত। এর আগে বহু সময় গোল নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। তবে এখন থেকে এসব বিতর্কে আর হবে না।

অফসাইড গোল তো বটেই, অনেক সময় বল গোললাইন পার করলেও দেওয়া হয়নি গোল। ২০১০ সালে জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের সেই গোলটি এর উদাহরণ। তবে এবারের বিশ্বকাপে এই বলের প্রযুক্তির বদৌলতে খুব সূক্ষ্ম সিদ্ধান্ত নির্ভুলভাবে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতেও স্পেনের বিপক্ষে জাপানের দ্বিতীয় গোলটি তারই উদাহরণ।

এবারের বিশ্বকাপে যে বল দিয়ে খেলা হচ্ছে, তাতে রয়েছে একটি সেন্সর, যা সেকেন্ডে সেকেন্ডে তথ্যের ঝড় বইয়ে দিয়েছে। কার পায়ে বল লেগে তা বাইরে গেছে, অফসাইড থেকে শুরু করে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে ফুটবল থেকেই। তবে এই সেন্সর যাতে ঠিকভাবে কাজ করে সেজন্য এই বলকে মোবাইল-ল্যাপটপের মতো চার্জ দিতে হয়।

ম্যাচ চলাকালীন সেকেন্ডে ৫০০ বার তথ্য পাঠাচ্ছে অ্যাডিডাসের তৈরি আল রিহালা ফুটবলটি। কিছু স্পর্শ হলে নির্ভুল তথ্য চলে যাচ্ছে সার্ভারে। ফুটবলের ভেতরে থাকা সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ১৪ গ্রাম ওজনের একটি ব্যাটারি। একবার চার্জ দিলে এই ব্যাটারি চলে ৬ ঘণ্টা।

পর্তুগাল-উরুগুয়ে ম্যাচে এই বলের তথ্যের ভিত্তিতেই বিতর্কিত গোলটি ব্রুনো ফের্নান্দেসের নামে দেওয়া হয়েছিল। খেলার সময় রোনালদো গোলের দাবি জানালেও পরে অ্যাডিডাস জানায়, রোনালদোর সঙ্গে বলের স্পর্শই হয়নি।

জাপানের ম্যাচে কী ঘটেছে?

খেলার ৫১ মিনিটে গোল করে জাপানকে এগিয়ে দেন তানাকা। তবে কাওরু মিতোমার যে পাস থেকে তানাকা গোল করেন, সেটা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। একাধিক মহলের দাবি, মিতোমা যখন বল পাস করেন, ততক্ষণে সেটি লাইন পেরিয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ গোলটা বৈধ নয়। নিজেদের দাবির স্বপক্ষে একটি ছবিও দেখাতে থাকেন তারা। যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে, তাতে দেখে মনে হবে যে বলটা লাইন পেরিয়ে গেছে।

কিন্তু এখানেই লুকিয়ে আছে নিয়মের মাহাত্ম্য। নিয়ম অনুযায়ী, যদি ‘এরিয়াল ভিউ’ (উপরের দিক থেকে ভিউ) থেকে বলের কোনও অংশ লাইনের মধ্যে থাকে, তাহলে সেই বল মাঠের মধ্যে আছে বলে ধরা হবে এবং খেলা চালিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ গোললাইন টেকনোলজিতে যেভাবে ‘এরিয়াল ভিউ’ থেকে দেখে নির্ধারণ করা হয় যে বল গোললাইন পেরিয়েছে কি না, ঠিক সেভাবেই বল মাঠের বাইরে গেছে কি না, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেহেতু ‘এরিয়াল ভিউ’-তে বলের পুরো ১০০ শতাংশ লাইন পার করেনি, তাই জাপানের পক্ষে সিদ্ধান্ত গেছে।

ফুটবলে থাকা সেন্সরও এই গোল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অ্যাডাডিডাসের ফুটবলে সেন্সর প্রযুক্তি না থাকলে এই গোল নিয়ে সংশয় থেকেই যেত।

ফিফার আইন কী বলে?

বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার ৯ নম্বর আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনও বল লাইন পেরিয়ে গেছে বলে তখনই ধরা হবে, যখন সেই বল মাটিতে ঠেকা বা শূন্যে থাকা অবস্থায় গোললাইন বা টাচলাইনের পুরোটা (১০০ শতাংশ অর্থাৎ বলের কোনও অংশ লাইনের এপার বা লাইনের উপরে থাকবে না) পেরিয়ে গেছে। 

এই নিয়মের কারণেই স্পেনের বিরুদ্ধে যখন মিতোমা বল পাস করেন, তখনও খেলার মধ্যেই ছিল বল।

গোললাইন টেকনোলজিতে যেভাবে ‘এরিয়াল ভিউ’ থেকে দেখে নির্ধারণ করা হয় যে বল গোললাইন পেরিয়েছে কি না, ঠিক সেভাবেই বল মাঠের বাইরে গেছে কিনা, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেহেতু ‘এরিয়াল ভিউ’-তে বলের পুরো ১০০ শতাংশ লাইন পার করেনি, তাই জাপানের পক্ষে সিদ্ধান্ত গেছে।

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর