ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

হাত বাড়ালেই স্বপ্নের ট্রফি
শিরোপার খুব কাছে লিওনেল মেসি। এখন হাত বাড়ালেই স্বপ্নের ট্রফি। আর মাত্র একটি ম্যাচ। দরকার একটি মাত্র জয়। শত কোটি ভক্তের চোখ জাদুকরের পায়ের দিকে। মেসি কি পারবেন তার পায়ের জাদুতে বিশ্বকে মুগ্ধ করে শিরোপার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে?
মেজবাহ্-উল-হক

তুলনা করাটা যেন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কে সর্বকালের সেরা ফুটবলার? দিয়েগো ম্যারাডোনা নাকি লিওনেল মেসি! ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়ায় কিংবদন্তি পেলে আপাতত এই আলোচনার বাইরে! অন্য তারকাদের নিয়েও হই চই নেই। আর্জেন্টিনাকে দুবার ফাইনালে তুলেছেন ম্যারাডোনা। মেসিও আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে নিয়ে গেছেন। কিন্তু ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনাকে একটি বিশ্বকাপের ট্রফি উপহার দিয়েছেন, আর মেসি শিরোপা জয় থেকে আর মাত্র এক পা দূরে।

২০১৪ বিশ্বকাপে মেসি আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বজয়ের মঞ্চটা তৈরি করেই দিয়েছিলেন। কিন্তু ফুটবল তো আর একজনের খেলা নয়। ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে গঞ্জালো হিগুয়েন গোলের সহজতম সুযোগগুলো নষ্ট না করলে এখন মেসির প্রাপ্তির ঝুড়িতেও একটি বিশ্বকাপ শিরোপা থাকত। থাকত আরও একটি কোপা আমেরিকার (২০১৬ সাল) শিরোপা। দুই দুটি ফাইনালেই ভিলেন সেই হিগুয়েন।

আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও মেসি ঠিকই আসরের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছেন। কোপার সেই আসরেও সেরা ছিলেন মেসি। আর এবার কোপার শিরোপা (২০২১ সাল) এবং সেরা খেলোয়াড় হয়েই বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন মেসি। এই বিশ্বকাপের মেসি এবং আর্জেন্টিনা দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। প্রতিটি ম্যাচেই নতুন নতুন চমক দেখাচ্ছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর। ইতিমধ্যেই চার চারবার ম্যাচসেরা হয়েছেন। ৫ গোল ও তিন অ্যাসিস্ট করে গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বলের লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

ম্যারাডোনার সঙ্গে ছিলেন ক্যানিজিয়া ও বুরুচাগার মতো সুপারস্টার। তবে খুশির খবর হচ্ছে, এবার মেসিও সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন হুলিয়ান আলভারেজের মতো তারকাকে। এই তরুণ তুর্কি দারুণ পারফর্ম করছেন। ম্যানচেস্টার সিটির এই তারকা ফুটবলার ইতিমধ্যেই চার চারটি গোল দিয়েছেন। আলাদা করে বলতে হবে আরেক তরুণ তুর্কির কথা -এনজো ফার্নান্দেজ। এবারের আসরে যিনি উদীয়মান তারকার পুরস্কারও জিততে পারেন। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে দুই দুটি গোল আটকে দেওয়া গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজও আছেন আলোচনায়। এবারের দলটি যেন আর্জেন্টিনার এক ‘কম্পিলিট প্যাকেজ’।

যদিও ফাইনালে প্রতিপক্ষ ভয়ংকর দল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। এমবাপ্পে, জিরু, গ্রিজমান, দেম্বলের মতো বিশ্বসেরা তারকাদের নিয়ে গড়া এক দল। এমবাপ্পে ৫টি গোল করেছেন এবং তিনটি অ্যাসিস্ট। জিরু চার গোল করেছেন। আর গ্রিজমান তো মাঝমাঠের ভরসা। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে হলে তো সব দলকে হারানোর সক্ষমতা থাকতেই হবে। বিশ্লেষকদের দাবি, ফ্রান্সকে আটকে দেওয়ার সক্ষমতা এই আর্জেন্টিনার আছে!

আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে যে দলই খেলেছে, তাদের কোচদের একটাই মন্তব্য -ছন্দে থাকা মেসিকে আটকানোর সাধ্য কারোর নেই! মেসি -দ্য গ্রেট। প্রতিপক্ষ যত ভয়ংকরই হোক না কেন, খুদে জাদুকর যদি জাদুর বাক্স খুলে বসেন তাহলে আর কারও করার কিছু নেই। কোনো বাধাই তার সামনে দেয়াল হতে পারে না!

আগের ম্যাচে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে মেসি যে জাদু দেখিয়েছেন তাতে বিশ্বমাত। এই আসরে অঘোষিত সেরা ডিফেন্সের স্বীকৃতি পাওয়া ক্রোয়েট ডিফেন্সকে যেভাবে পায়ের জাদুতে বোকা বানিয়েছেন তা ছিল অবিশ্বাস্য, অসাধারণ। ফুটবলপ্রেমীরা হয়তো যুগ যুগ তা মনে রাখবেন। মেসির এমন জাদু দেখে এখন সমালোচকরাও যেন ভক্ত হয়ে গেছেন। যারা আর্জেন্টিনাকে দুচোখে দেখতে পারেন না তারাও চাচ্ছেন মেসির হাতেই উঠুক সোনালি ট্রফি।

আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকরকে নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা ইংলিশ কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকার। তিনি বলেন ‘সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে, সে বিষয়ে কি আর কারও এখন কোনো প্রশ্ন আছে?’

আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি মারিও কেম্পেসের মতে মেসির সেরা হতে বিশ্বকাপ জয়ের প্রয়োজন নেই। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বকে তা দেখিয়ে দিয়েছেন।এমন আলোচনার মধ্যে যদি ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে সোনালি ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। শিরোপার খুব কাছে লিওনেল মেসি।  এখন হাত বাড়ালেই স্বপ্নের ট্রফি। আর মাত্র একটি ম্যাচ। দরকার একটি মাত্র জয়।   শত কোটি ভক্তের চোখ জাদুকরের  পায়ের দিকে। মেসি কি পারবেন তার পায়ের জাদুতে বিশ্বকে মুগ্ধ করে  শিরোপার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে?

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর