ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

এমবাপ্পের ‘মূল্যহীন হ্যাটট্রিক’
অনলাইন ডেস্ক
সংগৃহীত ছবি

ফুটবল এখন মেসিময়। জীবনের শেষ বিশ্বকাপে ট্রফি জেতার এই আনন্দ চিরকাল ‘হল অব ফ্রেমে’ বন্দি থাকবে তার। আকাশের দিকে হাত তুলে পূর্বসূরি ম্যারাডোনাকে স্মরণ করার সময়টুকুও মেলেনি এলএম-১০ এর। জয়ের পর শুধু পারাদেসকে জড়িয়ে ধরে আবেগের নদীতে ভেসেছেন তিনি। তারপর তো সহ-ফুটবলারদের ভালোবাসার অত্যাচার। গ্যালারির শব্দব্রহ্ম তখন শুধু আকাশ নয়, ছুঁতে চায় বুয়েনস আইয়ার্স-রোজারিওকেও। কিছুক্ষণের মধ্যেই এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আট বছর আগে ঐতিহাসিক মারাকানায় অল্পের জন্য যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল। সোনালি ট্রফি ধরে ফিলিপ লামদের সেই আনন্দ কয়েক গজ দূর থেকেই দেখতে হয়েছিল বাঁ পায়ের জাদুকরকে। কিন্তু ধূসর অতীতকে ফেলে তিনি এখন উজ্জ্বল বর্তমানে।

ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফানতিনোর হাত থেকে তিনি বিশ্বকাপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা বিশ্বের রিংটোন যেন হয়ে যায়—মেসি, আই লাভ ইউ। 

আনন্দের ঢেউয়ে উথালপাতাল লুসাইলে স্টেডিয়ামে তখন কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ফরাসিদের দীর্ঘশ্বাস। গলার কাছে কী যেন একটা আটকে রয়েছে ফরাসি তারা এমবাপ্পের। চোখ ভেজা গ্রিজম্যানের। সমর্থকরাও নিশ্চুপ।

মন্টিয়েলের শট জালে জড়াতেই আনন্দে আত্মহারা আর্জেন্টিনা শিবির। টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে ফ্রান্সকে হারিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ ঘরে তুলল মেসির দেশ। এই পর্বে দুরন্ত হয়ে উঠলেন নীল-সাদা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কোম্যানের স্পটকিক রুখে দেন। বাইরে মারেন চৌমেনি। আর্জেন্টিনার বাকি তিন সফল গোলদাতা মেসি, দিবালা ও পারাদেস। তাই এমবাপ্পে ও কোলোর লক্ষ্যভেদ কাজে এল না।

প্রথম একাদশে মাত্র একটি পরিবর্তন করেছিলেন কোচ স্কালোনি। পারাদেসের জায়গায় তিনি খেলান ডি মারিয়াকে। শুরু থেকে ম্যাচে আর্জেন্টিনারই দাপট ছিল। ২২ মিনিটে বাঁ দিক থেকে বক্সে ঢুকে বিপজ্জনক হওয়ার আগে ডি মারিয়াকে ফাউল করেন দেম্বেলে। স্পটকিক থেকে লক্ষ্যভেদ মেসির (১-০)। ফুটবল ইতিহাসের প্রথম প্লেয়ার হিসেবে গ্রুপ থেকে ফাইনাল, সব পর্বে গোলের নজির এখন শুধুই লিওলেন মেসির। ৩৬ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান ডি মারিয়া। পাল্টা-আক্রমণে মেসির সুন্দর টোকায় বল পেয়ে আলভারেজ তা বাড়ান ম্যাক অ্যালিস্টারকে। তার সাজানো পাস পেয়ে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন ডি মারিয়ার (২-০)। দ্বিতীয়ার্ধে প্রারম্ভিক পর্বে ম্যাচের চিত্র পাল্টায়নি।  ৫৮ মিনিটে আলভারেজের শট দুরন্ত সেভ করেন লরিস। ৬৪ মিনিটে ডি মারিয়ার পরিবর্তে আকুনা নামার পরই ফ্রান্স খেলার রাশ হাতে তুলে নেয়। ৭৯ মিনিটে বক্সের মধ্যে কোলোকে ফাউল করে ফ্রান্সকে পেনাল্টি উপহার দেন ওটামেন্ডি। স্পটকিক থেকে ব্যবধান কমান এমবাপ্পে (২-১)।  

মিনিট দুয়েক পরে দলকে সমতায় ফেরান সেই এমবাপ্পেই (২-২)।  অতিরিক্ত সময়ে ১০৮ মিনিটে জাদুকরের ডান পায়ের গোল। লাওতারোর শট লরিস রোখার পর তা গোলে ঠেলে দেন মেসি (৩-২)। বিশ্বকাপে গোলের নিরিখে পেলেকে পিছনে ফেললেন তিনি (১৩)। ১১৬ মিনিটে এমবাপ্পের শট বক্সের মধ্যে মন্টিয়েলের হাতে লাগে। পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করতে ভুল হয়নি ফরাসি মহাতারকার (৩-৩)।

১৯৬৬’তে ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের পর তিনিই প্রথম ফাইনালে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন। কিন্তু সেই মূল্যহীন সেই হ্যাটট্রিক। শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতে নিল মেসির আর্জেন্টিনাই। ৩-৩ গোলের ড্র হওয়া ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। তাতে ৪-২ ব্যবধানে জয় পায় মেসির আর্জেন্টিনা। ইতিহাস গড়েন মেসি। অন্যদিকে, বৃথা হয়ে যায় এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক।

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর