ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

স্বপ্ন দেখছে সেনেগালও
রাশেদুর রহমান
শিষ্য ফেইতাকে রণকৌশলের তালিম দিচ্ছেন ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগালের অধিনায়ক আলিউ সিসে। এবার তিনি কোচের ভূমিকায় —এএফপি

সেনেগাল। নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠত গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা একটি দেশের ছবি। শান্তি শান্তি করে চিৎকার করতে থাকা একটি জাতি। যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত একটি দেশ। কিন্তু হঠাৎ করেই সেনেগাল সম্পর্কে সব ধারণা বদলে যায়। ২০০২ সালে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির হঠাৎ জ্যান্ত হওয়ার মতোই লাফিয়ে উঠে সেনেগাল। সমস্বরে ঘোষণা দেয়, আমরাও আছি। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে অনুষ্ঠিত ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগালের আগমন ধূমকেতুর চেয়ে কম ছিল না।

২০০২ সালের ৩১ মে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নামল আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা সেনেগাল। একদিকে থিয়েরি অঁরি, প্যাট্রিক ভিয়েরাদের মতো বিশ্বজয়ীরা। অন্যদিকে হাজী দিওফদের মতো অপরিচিতের দল। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় সেনেগাল। পাপা বুবা দিওপের করা সেই গোলটা আজও নিশ্চয়ই সেনেগালের মানুষ বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে স্মরণ করে। ফুটবলের উঠুনে সেনেগালের সেই চিৎকারটা সবাই শুনেছিল। চোখ কপালে তুললেও ভেবেছিল, ওখানেই শেষ! কিন্তু সেনেগাল পরের দুই ম্যাচে ডেনমার্ক ও উরুগুয়ের সঙ্গে ১-১ এবং ৩-৩ গোলে ড্র করে উঠে যায় শেষ ষোলতে। সেখানে সুইডেনের মতো দলকেও ছিটকে দেয় বিশ্বকাপ থেকে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেই স্পর্শ করে আফ্রিকান রেকর্ড। অবশ্য কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে তুরস্কের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল সেনেগাল।

সেনেগালের সেই দলটার নেতৃত্বে ছিলেন আলিউ সিসে। তিনিই এখন সেনেগালের কোচ। দলটাকে খুব গভীর থেকে জানেন বলেই সম্ভবত তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রমাণ দিলেন, কথায় নয় কর্মে। ২০০২ সালের পর আরও একবার সেনেগালকে নিয়ে এলেন বিশ্বকাপের মহামঞ্চে।

রাশিয়া বিশ্বকাপে এইচ গ্রুপে কলম্বিয়া, পোল্যান্ড এবং জাপানের মুখোমুখি হবে সেনেগাল। পরিসংখ্যান বলছে, এই তিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে অতীত সম্পর্কটা বেশ ভালো সেনেগালের। পোল্যান্ডের বিপরীতে কখনো মাঠে নামেনি সেনেগাল। তবে কলম্বিয়া এবং জাপানের মুখোমুখি হয়েছে তারা। ২০১৪ সালে এক প্রীতিম্যাচে কলম্বিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে সেনেগাল। জাপানের বিপক্ষে তিনবার মাঠে নেমেছে তারা। এর মধ্যে জিতেছে দুবার, ড্র করেছে একবার। বিশ্বকাপেও এই রেকর্ডটা ধরে রাখতে পারলে সেনেগালের নকআউট পর্ব অনেকটা নিশ্চিতই বলা যায়! সেক্ষেত্রে আরও একবার সেনেগালের বিস্ময়কর ফুটবল দেখার জন্য আড়মোড়া ভেঙে বসতে হবে ফুটবলভক্তদের।

হাজী দিওফ অনেকদিন আগেই বিদায় নিয়েছেন ফুটবলের আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে। তবে তার পরিবর্তে যারা এসেছেন তারাও কম নন। লিভারপুল তারকা স্যাডিও মানে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেন।

একজন উইঙ্গার হিসেবে ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। মোহাম্মদ সালাহ তাকে পরম বন্ধু মনে করেন ফুটবলীয় জ্ঞানের কারণেই। স্যাডিও মানের বেশ কয়েকজনই আছেন সেনেগাল দলে। এভারটনের ইদ্রিসা, মোনাকোর কেইতা কিংবা তুর্কী ক্লাব বুরসাস্পরের মুসা সউকে দিয়ে আক্রমণভাগ সাজাবেন আলিউ সিসে। ডিফেন্স সুরক্ষিত করতে থাকবেন নেপোলির কালিদু, হ্যানেভারের সালিফ, ওয়েস্ট হ্যামের শেইখো কোয়াতে। এবার সেনেগাল দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিফেন্ডার কোয়াতে। ২৮ বছরের এই যুবক ৪৬টা ম্যাচ খেলেছেন জাতীয় দলের জার্সিতে। নিজের দায়িত্বটা বেশ বুঝেন। সতীর্থদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নেতৃত্ব দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। আর তাকে সমর্থন দিতে সদা প্রস্তুত স্যাডিও মানের মতো তারকা ফুটবলাররা। এই সেনেগাল ভয় পাওয়ার মতোই।



এই পাতার আরো খবর