মাসের শুরুতেই মোবাইলে চলে যায় পড়ার খরচ। সেই টাকায় হলে থাকা ও শিক্ষা উপকরণ কেনার পাশাপাশি ভাবনাহীন পড়ালেখা। প্রতি মাসে বৃত্তি দিয়ে অতিদরিদ্র পরিবারের মেধাবী দুই হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে তাঁদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখছে দেশের শীর্ষ শিল্পপরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল কলেজ কিংবা নার্সিং ইনস্টিটিউটে পড়া এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে মহানুভবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। বৃত্তি পাওয়া কয়েকজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী ও নার্সিং পড়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অনুভূতি তুলে ধরেছেন জাকারিয়া জামান
মায়ের স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ
ছামিয়া আক্তার, তৃতীয় বর্ষ, গুলশানারা নার্সিং কলেজ
নার্সিং একটি মহৎ পেশা। সেবামূলক এই পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের তিন ভাই-বোনের মধ্যে আমি মেজো।
মায়ের অনেক ইচ্ছা ছিল আমি একজন নার্স হব। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর কোনো রকম কোচিং ছাড়াই বিএসসি ইন নার্সিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সরকারিতে হয়নি। মা আর বোনের ইচ্ছায় ভর্তি হয়ে গেলাম প্রাইভেট নার্সিং কলেজে।
টিউশনি করে বেতন দিতাম, বাবা কোনো রকমে দিতেন বাসাভাড়া আর বোন টিউশনি করে দিতেন সেমিস্টার ফি। এভাবেই মিলেমিশে পড়াশোনার খরচ চলছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে আমার মায়ের লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে। এই ঝড়ে আমার পরিবার ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। বলে রাখা ভালো, আমার বাবার হাত ও পা ভেঙে গিয়েছিল একটি অ্যাকসিডেন্টে, যখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি।
কিন্তু আমার বাবার ইচ্ছাশক্তি উনাকে আবার দাঁড় করিয়েছে। মায়ের ক্যান্সারের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। চতুর্থ কেমোথেরাপি দেওয়ার আগে মা শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মায়ের চিকিৎসায় খরচ করে আমরা পুরো নিঃস্ব হয়ে যাই। আমার পড়ার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় আল্লাহ পাকের অশেষ দয়ার অসিলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা শুভসংঘ। আমার বিপদে অসিলা হয়ে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘ ও বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, যারা আমার মায়ের স্বপ্নপূরণে আমার পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে মানুষের সেবা করব
মারিয়া আক্তার, তৃতীয় বর্ষ, গ্রীন লাইফ কলেজ অব নার্সিং
আমি অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের মেয়ে। যখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ি, বাবা আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যান। ছোট ছিলাম বলে এত কিছু বুঝতাম না। বাবা না থাকার কষ্ট কেমন জানতাম না। যখন বড় হলাম, চারদিকের পরিবেশ বুঝতে শিখলাম, তখন বাবার জন্য মন খারাপ হতো। আমার লাইফের সুপার উওম্যান হলেন আমার মা। কারণ বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাকে ছেড়ে কোথাও যাননি, বরং পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। মা না থাকলে হয়তো আমি কখনোই এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। মা আমাকে নার্সিং পড়ার স্বপ্ন দেখান। নার্সিং পড়ার বিষয়টি ভালোই মনে হয়েছিল। কেননা এর থেকে আমার স্বপ্নপূরণ ও মায়ের পাশে দাঁড়ানো দুটিই করতে পারব। সিদ্ধান্ত নিই যে আমি নার্সিংই পড়ব। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে নিজের স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে অচেনা শহরে পা রাখি। নার্সিং অ্যাডমিশন দিই। গভর্নমেন্টে সুযোগ আসেনি। আমার মন ভেঙে যায়। কিন্তু আমার স্বপ্নপূরণের জন্য পাশে দাঁড়ান শ্রদ্ধেয় ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ স্যার। তিনি আমাকে প্রাইভেট নার্সিং কলেজে অ্যাডমিশন করিয়ে দেন এবং আমার পড়াশোনায় সাহায্য করেন। বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে পাওয়া বসুন্ধরা গ্রুপের এই বৃত্তি আমার পড়াশোনায় অনেক সাহায্য করে। আমার এই পর্যন্ত আসার পেছনে অবদান রয়েছে আবদুল্লাহ স্যার ও বসুন্ধরা শুভসংঘের। তারা যদি আমার পাশে না দাঁড়াত, তাহলে আমার স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যেত। কখনোই নার্সিং পড়া হতো না।
নৈশপ্রহরী থেকে আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
উহ্লাচিং মারমা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বৃত্তি পাওয়া একজন ছাত্র আমি। আমার এই সংক্ষিপ্ত জীবনের সঙ্গে বসুন্ধরা শুভসংঘ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পড়ালেখার অধ্যায় শুরু হয়েছিল নানুর বাড়ি থেকে। আমার জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি আমার বাবা। হঠাৎ বাবার শরীরে ধরা পড়ে এক মারাত্মক রোগ। বাবার কিছু ফসলি জমি ছিল, সেটি বিক্রি করে এবং মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ভারতে চিকিৎসা করে মোটামুটি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। এরপর আমাদের পরিবারে প্রচুর অর্থসংকট দেখা দেয়। বাবা আবার চাকরি করতে শুরু করেন। যখন কলেজে পড়ি, বাবা স্ট্রোক করে প্যারালাইসড হয়ে পড়েন। বাবার চাকরিটা আমাকে দেওয়া হয়। সারা রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আবার সকালে এসে ঘুমিয়ে যেতাম। কারণ আমি একজন নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করতাম। সারা রাত কাজ করার পর যখনই সময় পেতাম, যেকোনো জায়গায় বসে পড়াশোনা করতাম। এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। মা-বাবাকে বললাম আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। মা বললেন, ‘আমি জানি তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাও। তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে তোমার বাবার চিকিৎসার খরচ কে চালাবে?’ আমি থেমে থাকিনি। অক্লান্ত পরিশ্রম আর চাকরির প্রেসার, কষ্ট সহ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিই। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে চান্স পাই। আমার জীবনসংগ্রামের গল্প শুনে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাশে দাঁড়ায়। বসুন্ধরা শুভসংঘ ও বসুন্ধরা গ্রুপকে আমার মতো ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে বসুন্ধরা গ্রুপ
চাইওয়াপ্রু মারমা, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার বাবা একজন কৃষক এবং মা গৃহিণী। তাঁরা উভয়েই খুবই পরিশ্রমী, সৎ ও নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের প্রতীক। আমরা চার ভাই-বোন। সবাই পড়াশোনা করছি। বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আমাদের চার ভাই-বোন যত বড় হচ্ছি, তত আমাদের পড়াশোনা ও ভরণ-পোষণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের পরিবার আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। এসব আর্থিক সংকটের কারণে আমার পড়াশোনার পথ কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পথচলায় অর্থনৈতিক সমস্যা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবু থেমে যাইনি। পড়াশোনা করেছি নানা অভাব-অনটনের মাঝেও। দায়িত্বশীল মা-বাবার উৎসাহ ও ভালোবাসা এবং নিজের স্বপ্ন ধরে রাখার চেষ্টা আমাকে আজ এখানে এনে দিয়েছে। আমি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গর্বিত শিক্ষার্থী। আমার এই কঠিন পথচলার মাঝে স্বস্তি জুগিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
বসুন্ধরা শুভসংঘ বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আমাকে প্রতি মাসে পড়ার খরচ দিচ্ছে। তাদের দেওয়া এই বৃত্তি শুধু আমার পড়াশোনার খরচ সামলাতেই সাহায্য করেনি, এটি আমার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এ জন্য আমি বসুন্ধরা শুভসংঘের কাছে, বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, ছোট জায়গা থেকে বড় স্বপ্ন দেখা যায়, যদি পাশে থাকে সঠিক মানুষ আর নিজের অটুট ইচ্ছাশক্তি।
পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা
জান্নাতুল ফেরদৌসী, তৃতীয় বর্ষ, ময়মনসিংহ নার্সিং কলেজ
স্বাস্থ্যসেবার প্রতি গভীর আগ্রহ ও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন আমাকে ছোটবেলা থেকেই আকৃষ্ট করে। তবে আর্থিক সংকট আমার পড়াশোনা এবং পরিবারের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। কভিড-১৯ মহামারির কারণে আমার পরিবার উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। বাবা এনজিওতে চাকরি করতেন, কিন্তু করোনার পর সেটিও হারিয়ে ফেলেন। তাঁর অসুস্থতা ও আর্থিক সংকট আমার পড়াশোনা এবং ছোট ভাইয়ের শিক্ষাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। প্রচণ্ড চাপে থাকা আমাকে ও আমার বাবাকে চিন্তামুক্ত করেছে বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া স্কলারশিপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে পাওয়া এই স্কলারশিপ আমার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হয়ে উঠেছে। আমার টিউশন ফি, বই এবং অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রীর ব্যয় বহন করতে সাহায্য করছে। পরিবারের আর্থিক চাপ কমাচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া এই সহায়তা আমাকে একাডেমিক ক্ষেত্রে মনোযোগী হতে এবং বিদেশে উন্নত শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করছে। পরিবারের একমাত্র ভবিষ্যৎ উপার্জনকারী হিসেবে আমার শিক্ষা সম্পন্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আমার পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতা নয়, আমার ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে আমি অবদান রাখতে চাই। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। বসুন্ধরা শুভসংঘের এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে আমি আমার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারব। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আমার আজীবন কৃতজ্ঞতা। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্তিম মুহূর্তে আমাকে আশার আলো দেখানোর জন্য আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার ভাইও নিশ্চিন্তে পড়তে পারছে
রাইফানা নিশাত, চতুর্থ বর্ষ, রেইস নার্সিং ইনস্টিটিউট
আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে। তাদের সহযোগিতায় আমি আমার পড়াশোনা ভালোভাবে করতে পারছি। বাবা নেই। পরিবারের বড় মেয়ে আমি। যখন নার্সিংয়ে ভর্তি হই, তখন হঠাৎ করেই বাবা মারা যান। মা একজন গৃহিণী। ছোট একটি ভাই আছে। সে দশম শ্রেণিতে পড়ে।
বাবা না থাকায় পরিবারের খরচ এবং দুজনের পড়াশোনার খরচ চালানো মায়ের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। মা অনেক কষ্ট করে আত্মীয়দের কাছে সাহায্য চেয়ে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। এমনকি একসময় আমাদের কাছে বই কেনার টাকাও ছিল না, তখন সবার কাছ থেকে
সাহায্য নিয়ে বই কিনতে পেরেছি। শুধু বই কিনলেই তো হয় না। কলেজে যাওয়ার জন্য যাতায়াত খরচ লাগত। সব মিলিয়ে কী করব, তা নিয়ে আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম। এমন অবস্থায় প্রকৃত বন্ধুর মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
প্রতি মাসে যে টাকা তারা দেয়, সেই টাকা দিয়ে আমার পড়াশোনা এবং যাতায়াত খরচ খুব ভালোভাবে চালাতে পেরেছি। এখন আমার কোনো অসুবিধা হয় না পড়াশোনা করতে। আমার ভাইও পড়াশোনা করতে পারছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে আমি এই উপকারটা পেয়েছি। এই উপকারের জন্য আমি সারা জীবন
কৃতজ্ঞ থাকব। বসুন্ধরা গ্রুপের সাহায্যের জন্যই আজ আমি স্বপ্নটা একটু একটু করে পূরণ করতে পারছি।
হাজারো নিভে যাওয়া স্বপ্ন জিইয়ে রাখে বসুন্ধরা গ্রুপ
ফাতেমা জান্নাত, প্রথম বর্ষ, গ্রীন লাইফ কলেজ অব নার্সিং
আমার জীবনের শুরুটা খুবই সংগ্রামের, অভাবের এবং একাকিত্বের। আমার খুব ছোটবেলায় মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। সে সময়টা আমার শিশুমনের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না, শুধু টের পেতাম জীবনটা হঠাৎ বদলে গেছে। এর পর থেকে বড় হয়েছি শুধু মায়ের হাতে। মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে থাকা শুরু করি। বাবা ছেড়ে যাওয়ার পরও মা আমাকে ছেড়ে কোথাও যাননি। অনেক যুদ্ধ করে নানা প্রতিকূল পরিবেশ সামলে আমাকে বড় করে তুলেছেন। মা না থাকলে আমি কখনোই এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কষ্টটা অনুভব করেছি। চেয়েছি একদিন বড় হয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াব। সেই ইচ্ছা থেকেই নার্সিংয়ে ভর্তি হই, কিন্তু অভাবের সংসার থেকে উঠে আসা আমার পড়ার খরচ আসবে কোথা থেকে সেটা কখনো ভাবিনি। দেবদূতের মতো আমার পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। আমার স্বপ্নপূরণের জন্য আরেকজন মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি শ্রদ্ধেয় ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ স্যার। তিনি শুধু একজন চিকিৎসক নন, একজন মহানুভব মানুষ, যাঁর সহানুভূতি আর আর্থিক সহায়তা আমার এই পথচলাকে অনেক সহজ করেছে। স্যারই আমাকে বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন। বসুন্ধরা শুভসংঘের এই বৃত্তি পেয়ে আমি নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করতে পারছি। এমন করে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো বসুন্ধরা শুভসংঘ
সত্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাথমিকে পড়ার সময়টা বেশ আমার সুন্দরভাবে কেটেছে। সেখানে কোনো ফি দিতে হতো না। এ জন্য মা-বাবার টাকা-পয়সার জন্য কোনো হিমশিম খেতে হয়নি। যখন মাধ্যমিকে ভর্তি হলাম, তখন থেকেই শুরু হলো টাকা-পয়সার জন্য হিমশিম খাওয়া। এসএসসি পাস করলাম নিজ উপজেলার একটি স্কুল থেকে। মা-বাবা আর দিদির প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল আমাকে শহরের কলেজে পড়াবেন। তাঁরা আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন রাঙামাটি সরকারি কলেজে। অনেক কষ্টে আমাকে টাকার জোগান দিয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। আমার আর পরিবারের সবার ইচ্ছা ছিল আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব, কিন্তু টাকা-পয়সা না থাকায় কোচিং করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক বড় ভাই আমাকে চবিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত একটি ফ্রি কোচিং সেন্টারের কথা বললেন। আমি সেখানে কোচিং করি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর উপলব্ধি করতে পারি, আমাদের মতো হিমশিম খাওয়া পরিবারের পক্ষে মাসে এত টাকার খরচ চালানো কঠিন। ভগবানের দূত হিসেবে এই চিন্তার অবসান করে দিল বসুন্ধরা শুভসংঘ। তারা আমার পড়ালেখার খরচ বহন করার দায়িত্ব নিল। আমি সত্যি এই খুশিটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া বৃত্তির কারণে আজ আমার চিন্তার ভার লাঘব হয়েছে। আমি বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব
তাপসী রানি রায়, তৃতীয় বর্ষ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, মাগুরা
দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার মুর্শিদাহাট গ্রামে আমাদের বাড়ি। বাবা একজন দিনমজুর। পরিবারে সদস্যসংখ্যা চার। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের অভাব-অনটন দেখে এসেছি। ২০১৮ সালে এসএসসি, ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করি। এরপর শুরু হয় আরেক নতুন জীবনযুদ্ধ। ভর্তি পরীক্ষা। কোথাও চান্স পাইনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হইনি। অনেকে বলত আমার দ্বারা আর পড়াশোনা সম্ভব নয়। ২০২২ সালের মার্চ মাসে আমি দিনাজপুর মহিলা অধিদপ্তরে সেলাইয়ের কাজ শেখার জন্য যাই। মূলত সেখান থেকে আমার নতুন জীবনের সূচনা হয়েছিল। সেলাইয়ের কাজ শেখার পাশাপাশি আমি নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই। মাগুরা নার্সিং ইনস্টিটিউটে চান্স পাই। নার্সিং জীবনে এসেই বসুন্ধরা শুভসংঘের সঙ্গে আমার পথচলা শুরু হয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমি, পড়ালেখার খরচ চালাতে পারব না—এটি বসুন্ধরা শুভসংঘ কেন্দ্র থেকে জানত। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যার সারা দেশের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেন। আমার পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করি। আবেদনটি বসুন্ধরা শুভসংঘ গ্রহণ করে। সেই সুবাদে আমি প্রতি মাসে শিক্ষাবৃত্তি পেতে থাকি, যার জন্য আমার পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারছি। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি এবং বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রত্যেক সদস্যের জন্য আমার অন্তর থেকে অভিনন্দন ও ভালোবাসা। বসুন্ধরা শুভসংঘ এভাবেই সবার পাশে থাকুক।
হাজারো শিক্ষার্থীর জীবনে আশার আলো বসুন্ধরা গ্রুপ
কেন্টন চাকমা, নৃত্যকলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বসুন্ধরা শুভসংঘ শুধু আমার জীবনযুদ্ধের সারথি নয়, বরং আমাকে শেখাচ্ছে কিভাবে আরেকজন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা যায়। ছোটবেলা থেকে জেনেছি দরিদ্রতা কী এবং দরিদ্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বহু কষ্টে পড়াশোনা করেছি। আমার প্রাইমারি, হাই স্কুল ও কলেজ—সব কিছু খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায়। মা-বাবার দুই সন্তানের মধ্যে আমি ছোট। শিশুকাল থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। যখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাই, মা-বাবার আশা আরো বেড়ে যায়। তাঁরা চাইতেন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। একসময় আসে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সেই পরীক্ষা। অ্যাডমিশন টেস্ট দিয়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করি। বাবা খুব খুশি হন আবার খুব চিন্তিতও হন। আমি এর আগে কখনো উপজেলার বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করিনি। বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় পড়া মানেই থাকা-খাওয়ার খরচ। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাবার আশা-ভরসার ভিতটা যতটা শক্ত হয়েছিল, খরচের চিন্তায় সেটা নিভে যেতে লাগল। আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে দরিদ্রতা। শুরু হয় আমার লড়াই। এই লড়াইয়ে আমার সারথি হয় বসুন্ধরা শুভসংঘ। দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পাশে দাঁড়ায়। আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর জীবনে আশার আলো হয়ে আসে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি আমাকে নিশ্চিন্তে পড়ার সাহস জোগায়। আমি এখন নির্বিঘ্নে পড়ছি। বাবাও এখন চিন্তামুক্ত।
এই উপকারের জন্য সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব
ফারজানা আক্তার, দ্বিতীয় বর্ষ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, জয়পুরহাট
আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে আমার খারাপ সময়ে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আপনাদের সহযোগিতার জন্যই আমি পড়াশোনা ভালোভাবে করতে পারছি। আমার বাবা দিনমজুর, মা গৃহিণী। আমি আর আমার ভাই পড়াশোনা করি। ভাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। মা-বাবা আমার পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট করেন। এমনও হয়েছে, বাসায় রান্না হবে কিন্তু রান্নার জন্য ঘরে কোনো চাল নেই। বাবা ভাবছেন ওই দিনের কাজের টাকা দিয়ে চাল কিনবেন। আমি বাবাকে বললাম, আমার বই লাগবে। বাবা কোনো কিছু না ভেবেই সেই টাকায় আমাকে বই কিনে দিয়েছেন। ২০২৪ সালে সব খারাপ সময় একসঙ্গে আসতে লাগল। মা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক দিনে ৩০০ টাকার ওষুধ লাগত। বাবা যেহেতু দিনমজুর, তাঁর কাছে প্রতিদিন ৩০০ টাকার ওষুধ কেনা অনেক কষ্টসাধ্য। বাজারে জিনিসপত্রের দামে আগুন। আবার বাসাভাড়া। আমাদের দুই ভাই-বোনের পড়ার খরচ তো আছেই। এত কিছু বাবা কেমন করে সামলাবেন? চিন্তায় চিন্তায় বাবা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে কল করলে কেউ ধরত না। কল করলেই মনে করত টাকার জন্য কল করেছি। আমার সেই খারাপ সময়ে প্রকৃত বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সেই থেকে প্রতি মাসে আমাকে বৃত্তি দিয়ে সহায়তা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। মাসে মাসে যে বৃত্তিটা পাই, সেই টাকা দিয়ে খুব ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি। আমার আর কোনো অসুবিধা হয় না পড়াশোনা করতে। আপনাদের এই উপকারের জন্য সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে না এলে পড়াশোনা এখানেই শেষ হয়ে যেত
সচিব কান্তি চাকমা, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন সদস্য হিসেবে এই পর্যন্ত আসতে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ছোট শিশু থাকাকালে মাকে হারিয়েছি। এরপর দাদা-দাদি আমাকে দেখভাল করেছেন। আমার দাদু নিতান্তই দরিদ্র মানুষ। নিজের সংসার চালাতেই হিমশিম খান। অনেক কষ্ট করে আমাকে এত দিন পড়িয়েছেন। আমি নিজেও খুব কষ্ট করেছি। এখন আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ দাদু কিভাবে দেবেন? এটা চালানো দাদুর কাছে সাতসমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতো। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও আমার পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তখনই কালের কণ্ঠ আমার জীবনসংগ্রামের গল্প তুলে ধরে। আমার সংগ্রামের গল্প জানতে পেরে বসুন্ধরা শুভসংঘ এগিয়ে আসে। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়া হয়। প্রতি মাসে আমাকে পড়াশোনা ও হলে থেকে খাওয়ার খরচ দেওয়া হয়। এর আগে আমি খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। কিভাবে আমার পড়াশোনা চালাব? একপ্রকার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সময় মন খারাপ করে থাকতাম। এখন আনন্দের সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। এতে দাদু-দাদা, বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সবাই অনেক খুশি। অনেক অনেক কৃতজ্ঞ কালের কণ্ঠের প্রতি। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে না এলে হয়তো আমার পড়াশোনা এখানেই শেষ হয়ে যেত। আমি সবার কাছে আশীর্বাদপ্রার্থী, ভবিষ্যতে যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারি। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো আমিও যেন ভবিষ্যতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারি।