শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

গণমানুষের পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইমদাদুল হক মিলন

গণমানুষের পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন

শিল্পী শাকীর এহসানুল্লাহ

একটি পত্রিকা কখন গণমানুষের পত্রিকা হয়ে ওঠে? উত্তরটা খুব সহজ। যখন সেই পত্রিকাটি দেশের সর্বস্তরের মানুষ হাতে তুলে নেন। যখন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে থাকে সেই পত্রিকার নাম। বাংলাদেশ প্রতিদিন দেশের মানুষের অন্তর স্পর্শ করেছে। অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে। এজন্য পত্রিকাটি গণমানুষের পত্রিকা। দেশের কোটি মানুষের পত্রিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। এই মানুষগুলোর সকাল শুরু হয় বাংলাদেশ প্রতিদিন হাতে নিয়ে। বাংলাদেশ প্রতিদিনে চোখ বুলিয়ে অতিদ্রুত তারা জেনে নেন দেশের খবর, পৃথিবীর খবর।

কেন বাংলাদেশ প্রতিদিন এত জনপ্রিয়? কেন পত্রিকাটি গণমানুষের পত্রিকা, কোটি মানুষের পত্রিকা? কী থাকে এই পত্রিকায়? মাত্র তো ১২ পৃষ্ঠার পত্রিকা। কোন জাদুতে পত্রিকাটি কোটি মানুষের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছে? এই উত্তরটি সহজ। পত্রিকাটির ১২ পৃষ্ঠাজুড়ে শুধুই সংবাদ। ছোট ছোট অজস্র সংবাদে ভর্তি বাংলাদেশ প্রতিদিন।

একটি সংবাদও মিস হয় না এই পত্রিকায়। অতিদ্রুত চোখ বুলিয়ে দেশ এবং পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলো মুহূর্তে পড়ে ফেলতে পারছেন পাঠক। সংবাদ পরিবেশনে কোনো বাগাড়ম্বর নেই। কোনো বাড়তি শব্দের ব্যবহার নেই।

সংবাদ অযথা দীর্ঘ করার প্রবণতা নেই। সংবাদকে সংবাদের মতোই পরিবেশন করা। সংবাদকে সাহিত্যের আবরণে ধারণ করার প্রবণতা নেই। সংবাদ পরিবেশনই যে একটি পত্রিকার সবচেয়ে বড় শক্তি বাংলাদেশ প্রতিদিন তার প্রমাণ। পত্রিকাটির লোগোর তলায় নতুন আঙ্গিকে পরিবেশন করা হয় তিনটি সংবাদ কিংবা তিনজন বিশিষ্ট মানুষের মতামত। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যে সংবাদ বা মতামতটি ওই কলামে ছাপা হয় সেই তিনজন মানুষের ছবিও ছাপা হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই অংশটি পত্রিকাটির বাড়তি আকর্ষণ।

‘রকমারি’ নামে একটি পাতা আছে। এটা আসলে ফিচার পাতা। দেশ এবং সারা পৃথিবীর আকর্ষণীয় ও পাঠকপ্রিয় বিষয়গুলো অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয় এই পাতায়। আমি এমন বহু পাঠকের কথা জানি যারা শুধু এই পাতাটি পড়ার জন্যই বাংলাদেশ প্রতিদিন কেনেন। গোয়েন্দা কাহিনী, হত্যা-খুনের দুর্ধর্ষ ঘটনা, ব্যাংক ডাকাতি, প্লেন হাইজ্যাক, ভৌতিক ঘটনা, পৃথিবীবিখ্যাত মানুষের অজানা নানারকম তথ্য— এ রকম অজস্র বিষয় এত সুন্দর করে পরিবেশন করা হয়, না পড়ে পাঠকের কোনো উপায় থাকে না।

এডিটরিয়াল পাতাটিতে গত আট বছরে বেশ কয়েকজন নতুন কলামনিস্ট তৈরি করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। যেমন কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। তাঁর কলামটির জন্য আমি নিজেই উন্মুখ হয়ে থাকি। এত সরল আঙ্গিকে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁর লেখা পড়ি। মুক্তিযুদ্ধের কত অজানা কথা যে তাঁর লেখা পড়ে জানতে পেরেছি, কত তথ্য যে তিনি তাঁর লেখায় দিয়ে যান আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকি।

বিনোদন, ক্রীড়া, মফস্বল সংবাদ, সংস্কৃতি সংবাদ, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রতিটি ক্ষেত্রে আশ্চর্য রকমের ভিন্নতা প্রকাশ করে চলেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন।

এই পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজাম আমার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন। তাঁকে চিনি প্রায় ৩০ বছর হতে চলল। সেই অল্প বয়সেই নঈমকে দেখেছি টগবগ করে ফুটছেন। সাংবাদিকতার জগতে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন। অসাধারণ যোগাযোগ সমাজের বহু স্তরের মানুষের সঙ্গে। যোগাযোগটা তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে মেইনটেইন করেন। মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ আছে, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ আছে। মানুষকে অবহেলা করার প্রবণতা নেই। যে কোনো বিপদে মানুষের পাশে নঈম নিজাম আছেন। একসময় ছাত্ররাজনীতি করতেন। ছাত্রলীগের দুরন্ত কর্মী ছিলেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশের বহু অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতা করে গেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। লেখালেখি করেছেন। টিভি সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকতা নিয়ে বই লিখেছেন। ইদানীং নিয়মিত তাঁর পত্রিকায় কলাম লিখছেন। তাঁর কলামের বই বেড়িয়েছে বেশ কয়েকটি। এ বছর একটি উপন্যাসও লিখেছেন। দেশ-বিদেশে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন সাংবাদিকতার কাজে। নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। ভারতের বাঘা বাঘা সাংবাদিক তাঁর বন্ধু। রাজনৈতিক নেতারা তাঁর বন্ধু। মন্ত্রীরা তাঁর বন্ধু। যেমন প্রবীণ সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার, এম জে আকবর প্রমুখ।

নঈম নিজাম আমার জন্য এক বিস্ময়। একজন মানুষ কী করে এত কাজ করেন? কেমন করে এত মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন? কোন মন্ত্রে এত কাজ করতে পারেন তিনি? একবার নঈম তাঁর নাঙ্গলকোট এলাকা থেকে ইলেকশন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁর এলাকায়, গিয়ে দেখি দশ-পনেরো হাজার লোকের সমাবেশ। নঈম বক্তৃতা দিয়ে কাঁপিয়ে দিলেন। সেদিন প্রথম খেয়াল করলাম মানুষ তাঁকে কত ভালোবাসে। তাও তো বোধহয় বছর পনেরো আগের কথা।

নঈম এখন আরও পরিণত, আরও চিন্তাশীল মানুষ। তাঁর ধ্যান জ্ঞান প্রেম বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২৪ ঘণ্টা এই পত্রিকা মাথায় নিয়েই আছেন। কী করে পত্রিকাটিকে আরও আকর্ষণীয় করা যায়, আরও মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় অবিরাম সেই চেষ্টা করে চলেছেন। যুক্ত হয়েছেন আরও দুটি প্রতিষ্ঠানে। নিউজ টোয়েন্টিফোর এবং রেডিও ক্যাপিটাল। নঈম নিজাম এই দুটো প্রতিষ্ঠানেরও সিইও। তাঁর দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় অত্যন্ত চমৎকারভাবে এগিয়ে চলেছে মিডিয়া দুটো।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান নঈম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন। যেখানে তাঁর হাত সেখানেই সাফল্য। দুজন মানুষ আছেন আমাদের মাথার ওপর। বসুন্ধরা এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং এই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। তাঁদের সুচিন্তিত পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা আমাদের সঠিকভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই এখন স্বনামধন্য। মিডিয়া জগতে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপই এখন নাম্বার ওয়ান। এই কৃতিত্ব মাননীয় চেয়ারম্যান এবং এমডি মহোদয়ের। তাঁরা মাথার ওপরে আছেন বলেই আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারছি।

একটি ছোট্ট ঘটনা বলে এই লেখা শেষ করতে চাই। মোংলায় বসুন্ধরা সিমেন্টের কারখানায় গিয়েছি। কয়েক বছর আগের কথা। ফেরার দিন আমরা তিনজন এক গাড়িতে। বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক আলমগীর হোসেন, নঈম নিজাম এবং আমি। পথের পাশে ছোট্ট একটি বাজারের মতো জায়গায় গাড়ি থামানো হলো। আমরা চা খাব। একটা চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম তিনজন। দোকানের ভিতর বসে একজন লোক পত্রিকা পড়ছেন। পত্রিকাটির নাম বাংলাদেশ প্রতিদিন। কিশোর ছেলেটি চা বানিয়ে দিল আমাদের হাতে। চায়ে চুমুক দিয়ে আমি সেই ভদ্রলোকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞেস করলাম, এত পত্রিকা থাকতে আপনি বাংলাদেশ প্রতিদিন কেন পড়ছেন?

ভদ্রলোক আমার দিকে না তাকিয়ে, পত্রিকার পাতায় চোখ রেখেই বললেন, এত ভালো ভালো খবর আর কোনো পত্রিকায় থাকে না।

আমি নঈম নিজামকে দেখিয়ে বললাম, এই ভদ্রলোক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক।

মানুষটা এমনভাবে চমকালেন, এমনভাবে লাফিয়ে উঠলেন, এমন ব্যতিব্যস্ত হলেন নঈম নিজামকে নিয়ে, কী রেখে কী করবেন বুঝতে পারছেন না। একজন সম্পাদকের জন্য একজন সাধারণ পাঠকের এরকম আকুতি আমি আর কখনো দেখিনি। চায়ের দাম দিতে যাওয়ার সময় তিনি জোড়হাত করলেন। দামটা তিনি নেবেন না। নঈম নিজামকে বললেন, আপনার মতো একজন মানুষকে এক কাপ চা খাওয়াতে পেরেছি এটা আমার জীবনের অনেক বড় গৌরবের ঘটনা। বাংলাদেশ প্রতিদিন দেশের মানুষের এই ভালোবাসা চিরকাল ধরে রাখুক, নবম বর্ষে পদার্পণে পত্রিকাটির জন্য পরম করুণাময়ের কাছে এই আমার প্রার্থনা।

 

লেখক : সম্পাদক, কালের কণ্ঠ।

সর্বশেষ খবর