শিরোনাম
২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৮:৩৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে 'হিম উৎসব'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে 'হিম উৎসব'

প্রকৃতিতে জেঁকে বসেছে শীত। রুক্ষ তার রূপ। যেন সবুজেরা মরে গেছে। কিন্তু তাতে কি মায়ের দামাল ছেলেদের স্বপ্ন দেখা থেমে গেছে? না, একদম না! অতীত ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। বিষাদময় সেই রিক্ততার সুর যেন বারবার মনে করিয়ে দেয় স্বপ্ন দেখতে। আর সেই স্বপ্ন দেখা হয় এক অমলিন পৃথিবীর। যেখানে আর কোনো ফুল পায়ের নিচে পড়ে পিষ্ট হবে না। কোনো পাখির চোখে থাকবে না বন্দুকের আতঙ্ক। দাপ্তরিক নথিপত্রে লেখা হবে ভালোবাসার বর্ণমালা।

হ্যাঁ, বলছিলাম দেশের প্রয়োজনে, মানুষের অধিকারের প্রশ্নে বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কথা। প্রতিবছর যেখানে ঘটা করে পালিত হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

'পরম্পরায় আমরা' সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় তিন বছরের অচলায়তন শেষে 'হিম উৎসব' ফিরছে সকল প্রাণকে সাথে নিয়ে। কিন্তু এবারের আয়োজন হবে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন আঙ্গিকে। যাদের প্রাণের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে আজকের যান্ত্রিক সভ্যতা বিশেষকরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন হলের ছাদ থেকে পড়ে ২০২১ সালে নিহত নির্মাণ শ্রমিক শাহের আলীসহ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কোপে পড়ে নিহত সকল শ্রমিকদের স্মরণে এবারের আয়োজন।

'রূপান্তরের যাত্রাপথে শেকড় হোক সঙ্গী' স্লোগানকে ধারণ করে আগামী ২৪ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই হিম উৎসব।

তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে থাকছে ভাব গানের আসর, কবি গান, লাঠিখেলা, নৃত্যানুষ্ঠান, আর্ট ক্যাম্পসহ নানা আয়োজন।

অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে (২৪ জানুয়ারি) বিকাল ৪ টায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে। বিকাল পাঁচটায় থাকবে নৃত্যানুষ্ঠান ও রাত নয়টায় মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে আওয়াজ (বহুস্বরের গান) পরিবেশিত হবে।

দ্বিতীয় দিনে (২৫ জানুয়ারি) মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে বিকাল ৪ টায় লাঠিখেলা আর সন্ধ্যা ৬ টায় কবিগান পরিবেশিত হবে।

উৎসবের শেষ দিন (২৬ জানুয়ারি) চারুকলা বিভাগের বর্ধিত অংশে সকাল ১০ টায় দৃশ্যত হবে আর্ট ক্যাম্প ও সকাল ১১ টায় পরিবেশিত হবে কথা ও গান (তাই জানাই গানে) এবং সন্ধ্যা ৬ টায় ছবি চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ভাব সংগীতের আসর 'কোথায় পাবো তারে'। এছাড়াও অনুষ্ঠানের তিনদিন জুড়ে থাকছে জহির রায়হান মিলনায়তন সংলগ্ন পুকুরপাড়ে চিত্র প্রদর্শনী।

আয়োজকরা বলেছেন, "ঝড়ের দিন পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। নিজ শেকড়ের গন্ধ গায়ে জড়িয়ে বরণ করে নিতে চাই নতুনকে, উৎযাপন করতে চাই আমাদের গৌরবময় অতীত এবং স্বপ্নময় ভবিষ্যত, উদযাপন করতে চাই আমাদের হাসি-কান্না আর আমাদের শিল্পকলা।

এদিকে একদল জান্তব স্বৈরাচার যেন মুখিয়ে আছে আমাদের এইসকল অনুভূতিকে কেড়ে নিতে। তারা অর্থ আর ক্ষমতার জোরে প্রতিনিয়ত যন্ত্রের শেকলে বেঁধে মানুষকে করে তুলছে হাতের পুতুল। এই যান্ত্রিকতায় আমাদের সংস্কৃতির বহুত্ববাদীতা কর্তাকবলিত সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়ে হারাচ্ছে বৈচিত্র্যতা, সংকুচিত হয়ে পড়ছে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে। তবু আমরা স্বপ্ন দেখি। আমরা স্বপ্ন দেখি এক অমলিন পৃথিবীর।"

'পরম্পরায় আমরা' আয়োজক কমিটির সদস্য অমর্ত্য রায় বলেন, 'আমাদের দেশের নিজস্ব বিভিন্ন সংস্কৃতির বিকাশ, চর্চা, উপস্থাপন এবং সংরক্ষণ করার লক্ষ্যেই এই হিম উৎসব। এই উদযাপনের মাধ্যমে আমরা উপনিবেশবাদের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে, নির্মাণ শ্রমিক ও শ্রমজীবী-সংগ্রামীদের অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।'

প্রসঙ্গত, বাংলার হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে লালন করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশকিছু শিক্ষার্থী মিলে 'পরম্পরায় আমরা' নামে সামাজিক সংগঠনটি করে। সংগঠনের উদ্যোগে এর আগে চার বার হিম উৎসব আয়োজন করা হয়।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর