১ আগস্ট, ২০২৩ ২২:২৮

লেগুনা থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

লেগুনা থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের

চাঁদা আদায়ের ফাঁস হওয়া ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

হেমায়েতপুর থেকে আশুলিয়া ও বিরুলিয়া রুটে চলাচলকারী লেগুনা থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া সম্প্রতি ২৪টি লেগুনা ৪ দিন ধরে আটকে রাখার ঘটনা মীমাংসা করতে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নম্বর সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদের বিরুদ্ধে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের (৪৩তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে সাজ্জাদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী বলে পরিচিত। চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও ফুটেজ বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হেমায়েতপুর থেকে আশুলিয়া ও বিরুলিয়া রুটে চলাচলকারী লেগুনাগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন গেইট দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে যেতে হয়। ফলে গত ১ বছর ধরে লেগুনাগুলোকে দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে চাঁদা দিতে হতো। তবে গত দুই মাস ধরে চাঁদা না দেওয়ায় ২৫ জুলাই ২৪টি লেগুনা আটক করে শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। তখন তারা দিনপ্রতি চাঁদা ১০০ টাকা করার দাবি জানান। ৪ দিন দেনদরবার শেষে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় লেগুনাগুলো ছেড়ে দেওয়ার চুক্তি হয়। এসময়, আটককৃত ২৪টি লেগুনা ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এক লেগুনা মালিক।

ফাঁস হওয়া ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের দুইতলায় মসজিদের সামনে আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে চাঁদার টাকা নিয়ে আসেন লেগুনা চলাচল নিয়ন্ত্রণকারীদের মধ্যে মিন্টু গাজী ও ফজা। সেখানে আরো এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মিন্টু গাজী সাজ্জাদের হাতে তিন বান্ডিল টাকা তুলে দেন। প্রথমে সাজ্জাদ লুঙ্গির ভাঁজে টাকাগুলো রাখার চেষ্টা করেন। পরে সিঁড়ির কোণা থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে তাতে টাকা মুড়িয়ে চলে যান।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাজ্জাদের হাতে মিন্টু গাজী ও ফজা মোট ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন। লেগুনা থেকে প্রাপ্ত চাঁদার টাকা ভাগাভাগিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পক্ষে দেনদরবার করেন এক নম্বর সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ এবং সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে দেনদরবার করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কার্যকরী সদস্য এসএম দিদারুল আলম দ্বীপ। এছাড়া চাঁদার একটি অংশ (২০ হাজার টাকা) মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ নেতাদের দেন।

চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিরক্ত হন লেগুনার মালিক ফজা। তিনি বলেন, ‘লেগুনা চালানো বাদ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দিতে হয়, এমনকি পুলিশকে টাকা দিতে হয়। এছাড়া আরো মানুষকেও টাকা দিতে হয়। এভাবে লেগুনা চালানো যায় না।’ তবে সাজ্জাদকে কত টাকা দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লেগুনার আরেক মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লেগুনা চলাচলে যেন বাধা না দেয় এজন্য গত ১ বছর ধরে জাবি ছাত্রলীগকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। তবে গত ২ মাস টাকা না দেওয়ায় তারা ২৪টি লেগুনা আটক করে পুনরায় চুক্তি করে। এবার মাসে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। ওইদিন লেগুনা ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় ছাত্রলীগকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

তবে ভিডিওটি গত বছরের নভেম্বরের দাবি করে সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মিন্টু গাজীর সাথে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছ,  সেই হিসেবে সে আমাকে ওই টাকা দেয়। যার তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আর যে ভিডিওটার কথা বলা হচ্ছে, সেটি গত বছরের। লেগুনা আটকে চাঁদা আদায়ের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এসএম দিদারুল আলম দ্বীপ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা মিথ্যা। আমি জড়িত থাকলেতো আমারও ভিডিও ফাঁস হতো। যেহেতু সাধারণ সম্পাদকের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক, সেহেতু আমাকে বিতর্কিত করতেই হয়তো মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ এনানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর