১৮ আগস্ট, ২০২৩ ১১:৩৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পরীক্ষায় জালিয়াতি করে শিক্ষার্থীর ভর্তি সম্পন্ন, জানে না প্রশাসন!

রাবি প্রতিনিধি

পরীক্ষায় জালিয়াতি করে শিক্ষার্থীর ভর্তি সম্পন্ন, জানে না প্রশাসন!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২২-২৩ সেশনে স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করার পর ভর্তিও সম্পন্ন করেছে এক শিক্ষার্থী। তবে এ ব্যাপারে জানে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন আরও শিক্ষার্থী আছে কিনা সেটারও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। প্রক্সির বিনিময়ে ভর্তি হতে করা চুক্তির টাকা পরিশোধকে কেন্দ্র করে বিষয়টি সামনে আসে। জালিয়াতি করে ভর্তির দায় স্বীকার করায় আহসান হাবীব নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তবে জালিয়াতি ও প্রশাসনের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

তারা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে সেই শিক্ষার্থী ভর্তিও হয়। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুই জানতে পারে না। এটা সত্যিই হতাশাজনক। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কেননা ভর্তি পরীক্ষার সেন্টারে বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং ভর্তির সময় মৌখিক পরীক্ষাসহ অনেক প্রক্রিয়া অনুসরণ তরা হয়। তারপরও এমন জালিয়াতি হলে সেটা অবশ্যই ভাববার বিষয়। এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম জানান, বিগত সময়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়ে মামলা হয়েছে এমন রেকর্ড নেই। আমরা এই বিষয়গুলো নজরদারিতে এনেছি। যারা এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এমনকি মামলা করার মাধ্যমে এই চক্রের মূলহোতাদের বের করার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদেরও দাবি এই চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। 

জানা গেছে, গত ৩১ মে রাবির সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী আহসান হাবীবের পরিবর্তে অন্যজন প্রক্সি দেয়। এই জালিয়াতির বিনিময়ে আহসানের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেন। চুক্তি হয় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার। পরীক্ষার পর ভর্তির সুযোগ পান আহসান। মেরিট অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার পপুলেশন সায়েন্সেস এন্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু চুক্তির টাকা বাকি থাকায় ক্যাম্পাস থেকে আহসানকে তুলে নিয়ে যান প্রাঙ্গণ ও তার সহযোগিরা। আহসানের ভাষ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলে আটকে রেখে তার পরিবারের নিকট আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেন প্রাঙ্গণ। সেখানে ছিলেন শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ। 

পরে রাজু টাকা দাবির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, প্রাঙ্গণ ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট তার নিকট টাকা পায় বলে হলে আনেন এবং এই টাকা তোলার জন্য আমাকেও জানায়। তখন তাদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। তবে প্রক্সি কিংবা টাকা নেয়ার ব্যাপারে আমি সম্পৃক্ত নই। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে প্রক্টরিয়াল টিম আহসানকে উদ্ধার করে এবং তাকে জিজ্ঞেসাবাদের পর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক জানান, ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধানের তত্ত্বাবধানে হয়। তারা কোন অসঙ্গতি পেয়ে জানালে তখন আমরা সেটা দেখি। জালিয়াতি করে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে আমি অবগত নই।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক শহিদুল আলম জানান, জালিয়াতি করে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে কেউ এটা করে থাকলে নিয়ম মাফিক শাস্তি পাবে। তাছাড়া খুবই সূক্ষ্মভাবে ছবি পরিবর্তন করে এসব শিক্ষার্থী জালিয়াতি করছে সেটা তৎক্ষণাৎ শনাক্ত করা মুশকিল। তাছাড়া মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর চাপ বেশি হওয়ায় কিছুটা ঘটাতি থাকে। কিন্তু বিষয়টি প্রথমবর্ষে পরীক্ষা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি কারো এমন অসঙ্গতি কিংবা জালিয়াতি প্রমাণিত হয়, তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর