১২ মে, ২০২৪ ১১:১৭

মধ্যরাতে রণক্ষেত্র রাবি: যে কারণে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ

দেশীয় অস্ত্রের মহড়া, ককটেল বিস্ফোরণ

রাবি প্রতিনিধি

মধ্যরাতে রণক্ষেত্র রাবি: যে কারণে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ

ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ককটেল বিস্ফোরণ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে  ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাতজন আহত হয়েছেন। শনিবার (১১ মে) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। পরে রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টিয়াল টিম ও দুই উপ-উপাচার্য উপস্থিত হন এবং এক পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে বিরত করেন। তিন ঘণ্টা পর পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। 

ছাত্রলীগের এই দুই পক্ষ হলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ। ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেস্ট রুমে বসা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি নিয়ে এই ঘটনার সূত্রপাত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহিদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান কর্মীদের নিয়ে অতিথিকক্ষে আলোচনা করছিলেন। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। আলোচনাকালে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও হলের বর্তমান সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও তার অনুসারীরা কক্ষে আসেন এবং তাদের চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে সভাপতি প্যানেলের শতাধিক নেতাকর্মী হলে আসেন এবং নিয়াজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। এদিকে নিয়াজের নেতাকর্মীরাও জড়ো হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। রাত ১২টার পর উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপক্ষ হলের ছাদে এবং অন্যপক্ষ হলের সামনে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল ও ককটেল ছুঁড়তে থাকে। এতে হাসিব, সনি ও তানভীর, জয়, তিশানসহ সাত জন আহত হন। তারা সবাই ছাত্রলীগকর্মী বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। 

এদিকে, ককটেলের বিস্ফোরণ ও রামদাসহ অস্ত্র হাতে আক্রমণ চলতে থাকায় হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন পুলিশসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আহ্বানে টানা দুই ঘণ্টা সংঘর্ষ শেষে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের নির্দেশে মাদার বখস হলের সামনে অবস্থান নেয় একপক্ষ। তখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ তোলেন, নিয়াজ মোর্শেদ বহিরাগতদের হলে ঢুকিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক। তখন পুলিশ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হলে তল্লাশি চালায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হলের সকল কক্ষে তল্লাশি করেছি। হলে বহিরাগত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া হলে সন্ত্রাসীদের কোনও জায়গা হবে না। এ ঘটনায় জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সুযোগে হলে বহিরাগত ও শিবির ঢুকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর এলোপাতাড়ি  ইট-পাটকেল ছুঁড়েছে। এতে ছাত্রলীগের সাত কর্মী আহত হয়েছে। পরিতাপের বিষয় এ ঘটনার নেপথ্যে ছাত্রলীগের কয়েকজন জড়িত। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। তারা প্রকৃত ছাত্রলীগের আদর্শ ধারণ করে কিনা প্রশ্ন থেকে যায়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, অতিথি কক্ষে সভাপতি প্যানেলের ১০/১৫ জন বসে ছিল। আমি পাঁচ মিনিটের জন্য কক্ষ থেকে তাদের বাহিরে যেতে অনুরোধ করি। সভাপতি প্যানেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আতিক ও অন্যান্য নেতাকর্মীরা আমার উপর চড়াও হন এবং এক পর্যায়ে মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করেন। তখন উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এ ঘটনায় জের ধরে বিভিন্ন হল থেকে সভাপতি প্যানেলের নেতাকর্মীরা হলে আসেন এবং হলে ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিশৃঙ্খলা কখনই কাম্য নয়। আমরা এসব কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন। ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা নিরসনে আমরা তৎপর রয়েছি। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসব এবং বিশৃঙ্খলায় সম্পৃক্তদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর