৬ জুলাই, ২০২৪ ০৬:৫৭
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার ছয় যুগে পদার্পণ করলো রাবি

রায়হান ইসলাম, রাবি

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার ছয় যুগে পদার্পণ করলো রাবি

ফাইল ছবি

গৌরব ও প্রত্যাশার ছয় যুগে পদার্পণ করলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই মতিহারের সবুজ চত্বরে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠ শিক্ষা ও গবেষণার আলোকবর্তিকা হিসেবে সুপরিচিত। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের ক্রান্তিলগ্নে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্থাপত্য ও সৌন্দর্য বর্ধনে এ ক্যাম্পাসের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। তবে প্রাপ্তির পাশাপাশি দীর্ঘ পথ চলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সমস্যার মতো সংকট রয়েই গেছে। 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আবাসন সমস্যা মতো বেশকিছু সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। শিক্ষা ও গবেষণায় যুগান্তকারী পরিবর্তনে ৫০ বছরের মেগাপ্রকল্প ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। সামনের দিনে এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।'

অবিভক্ত বাংলায় রাজশাহী ছিল উত্তরাঞ্চলের রাজা-জমিদারদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। নাটোর, পুঠিয়া ও তাহেরপুর রাজা-জমিদারেরা নিজেদের প্রয়োজনেই রাজশাহীতে গড়ে তোলেন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকমূলক নানা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা নগরে পরিণত হয় রাজশাহী। তবে ’৪৭-এ দেশভাগের পর উন্নতির চরম শেকড় পৌঁছে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা। দেশের মানুষ ক্রমশই ঢাকামুখী হতে থাকে। রাজধানীর সঙ্গে দূরত্ব বেশি থাকায় শিক্ষা-দীক্ষাসহ ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ে এই অঞ্চল। এরমধ্যেই সরকার এক নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে।

এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাজশাহীবাসী একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন দারুণভাবে উপলব্ধি করে। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিলেতের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম ই স্যাডলার নেতৃত্বে কমিশন গঠন করে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণাকর্ম স¤প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে  রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ ছিল। রাজশাহীর মানুষ কমিশনের ওই সুপারিশকে বাস্তবায়নে তৎপর হলে সেটা একপর্যায়ে  আন্দোলন রূপ নেয়। ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ রাজশাহীর কিংবদন্তী আইনজীবী মৌলভি মাদার বখ্শ  ও রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ ড. ইতরাৎ হুসেন জুবেরির যৌথ প্রচেষ্টায় প্রাদেশিক পরিষদে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পাস হয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই ড. ইতরাৎ হুসেন জুবেরিকে উপাচার্য নিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। 

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাঙালির মুক্তচিন্তার প্রসার ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। গণঅভ্যুত্থানে ড. শামসুজ্জোহার আত্মাহুতি দেশ স্বাধীনের পথ প্রসস্থ করেছিল। পরবর্তীতে বহু জ্ঞানতাপস এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আলোকিত করেছে। বর্তমানে নিউক্লিয় পদার্থ বিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক। বাঙালির হারানো ঐতিহ্য মুসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার করে বাণিজ্য সফলতা দিয়েছে অধ্যাপক মনজুর হোসেন। এমন বহু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর শিক্ষা-গবেষণা ও সমাজ সংস্কারী পদক্ষেপে দেশের জ্ঞানচর্চার আলোকবর্তিকায় পরিণত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। 


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর