১৫ জুলাই, ২০২৪ ১৬:২৬

জাবিতে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি হামলা, হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ

জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস

জাবি প্রতিনিধি

জাবিতে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি হামলা, হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুইজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ মোট ৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া, হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার পদত্যাগের মৌখিক ঘোষণা দিয়েছেন।

রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। 

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্যর প্রতিবাদে সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় জড়ো হন বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে দুইজন আন্দোলনকারীকে অবরুদ্ধ করে ফোন তল্লাশির অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে রাত ১২টার দিকে বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রবীন্দ্রনাথ হলের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। 

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘আমরা কেন রাজাকার, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’, প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন। 

সেসময়, বিক্ষুব্ধরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে দাবি করে হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে শুরুতে হল প্রভোস্ট ফুটেজ দেখানোর আশ্বাস দেন। এসময়, আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দলকে সিসিটিভি দেখানোর কথা বললে বাকি আন্দোলনকারীরা তাদের মিছিল নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল প্রদক্ষিণ করতে যান। ইতোমধ্যে হল প্রশাসন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ও অভিযুক্তদের সাথে এক রুদ্ধদ্বার আলোচনা করে আন্দোলনকারীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে অস্বীকার করেন। ফলশ্রুতিতে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাত ২টার দিকে পুনরায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘেরাও করে এবং জড়িতদের শাস্তি দাবি করে।  

এসময়, হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শাখা ছাত্রলীগের ৪ নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আররাফি চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের রাস্তা আটকে মিছিল করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মারামারি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় হলের ভিতরে আশ্রয় নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে পুনরায় আন্দোলনকারীদের উপর চেয়ার, লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ তাদের। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিহা গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান সজলও আহত হন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহত ২ ছাত্রলীগ নেতার নাম জানা যায়নি। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবিরসহ কয়েকজন শিক্ষক দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দেন ও নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গালিগালাজ করেন।

এক পর্যায়ে রাত পৌনে ৩টার দিকে বাধা উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনকারীরা হলের ফটকে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ৪৬তম ব্যাচের ছাত্র প্রাচুর্য চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন হামলা করেছেন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উস্কে দিয়েছেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হলের প্রাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করার মৌখিক ঘোষণা দেন অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলা হয়েছে। যার প্রতিক্রিয়ায় তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আহ্বান করেন। এরমধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী স্লোগান দেওয়ায় তাদের আটকে রেখে মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়েছে- এমন খবর পেয়ে হলের সামনে যান তারা। পরে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে ছাত্রলীগকে উস্কে দেয়। এ সময় ছাত্রলীগ আক্রমণাত্মক স্লোগান দিয়ে তাদের উপর হামলা চালালে পাল্টা ধাওয়া দেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল আলম তাকিদ বলেন, আন্দোলনকারীরা আমাদের হলের সামনে এসে কোটা সংস্কারের নামে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগকে অবমাননা করে স্লোগান দিচ্ছিল। তখন আমরা একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে সামনে যেতে চাইলে তারা বাধা দেন এবং গালিগালাজ করেন। তাদের কোনো হামলা করিনি, যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছি। আমরা হলে ফিরে যাওয়ার সময় তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ওই রাতে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে হল চালানো সম্ভব না। আমি প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবো। 

এদিকে, আজ সোমবার বেলা ১১টায় বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে উপাচার্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে শিক্ষার্থীদের আটকে হেনস্তা এবং সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার, কোটা সংস্কারের দাবি এবং ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আজ সন্ধ্যা সাতটায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর