১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৮:২৩

হলে থাকার সময় নির্যাতন, ৭ বছর পর রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক

হলে থাকার সময় নির্যাতন, ৭ বছর পর রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

প্রভাষক সৈয়দ আশিকুর রহমান ও তৎকালীন মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সরকার রায়হান জহির

শিবির সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের পাঁচ শিক্ষার্থীকে নির্মম নির্যাতনের পর হল ছাড়া করার ঘটনায় ১৩ ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা হয়েছে। ২০১৭ সালে নির্যাতনের শিকার দুই ভুক্তভোগী বাদী হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার শাহবাগ থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন। আসামিদের মধ্যে একজন বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আশিকুর রহমান। তিনি তৎকালীন মুহসীন হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন। 

এ মামলার বাদীরা হলেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাসরুর এবং একই শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পী মিয়া।

উভয় মামলার অন্য আসামিরা হলেন- হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে সরকার রায়হান জহির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান (বর্তমান সেকশন অফিসার, রেজিস্ট্রার বিল্ডিং, যবিপ্রবি), মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (সানী), হল ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক এসএম খালেদ চৌং ওরফে এসএম খালেদ চৌধুরী (৪১তম বিসিএস অডিট ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত), হল ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান মিজান, সাবেক সহসম্পাদক হাসিবুল আলম সৌরভ, সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ওরফে সোহেল, সাবেক পাঠাগার সম্পাদক শেখ আরিফুল ইসলাম, সাবেক সাংগঠনিক ইমতিয়াজ ওরফে ইমতিয়াজ আহমেদ শুভ্র (বর্তমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার এসআই), সাবেক সহসম্পাদক নাঈম আহমেদ, সাবেক উপ-ছাত্র ও ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন (সম্প্রতি ধর্ষণের অভিযোগে আলোচিত) এবং সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক ইমরান হাসান।

আবদুল্লাহ আল মাসরুর মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট দিবাগত রাত ১১টা থেকে ১৭ আগস্ট প্রথম প্রহর পর্যন্ত আসামিরা আমার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। রাতটি ছিল আমার ও আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীর জীবনের সবচেয়ে বর্ণনাতীত ভয়াবহ রাত। আমি সে রাতটিকে নিজের জীবনের শেষ রাত হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। আমাকে মারতে মারতে একজন ক্লান্ত হয়ে পড়লে আরেকজন আসে, সে জিরিয়ে নিলে আরেকজন আসে এভাবে দীর্ঘসময় যাবৎ আমাকে মারতে থাকে। উপর্যুপরি রড ও অন্যান্য বস্তু দিয়ে মারার ফলে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। আমার শরীরের রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়তে থাকে। আজরাইল আসন্ন মনে করে আমি কালেমা পড়তে থাকি।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, তারা সবাই বলে ‘এই বাইনচোত, মাগির বাচ্চাকে ছাদ থেকে ফেলে দে। এই শিবিরকে জানে মেরে ফেলতে হবে।’ পিটুনির মাথায় আল্লাহ গো, মা গো বলে চিৎকার দিতে থাকলে তারা বলে, ‘তোর বাবা-মা আমরাই, এবার আরও ডাক’ বলে আরও সজোরে মারতে থাকে। এরই মধ্যে শাহাদাত হোসেন সোহেল একটি ছুরি নিয়ে এসে আমার জিহ্বা টেনে বের করে কেটে ফেলতে চায় এবং ছুরি চালায়, এতে করে আমার জিহ্বার সামান্য অংশ কেটে গিয়ে রক্ত বের হয়। খালেদ, আরিফ, শাহাদাত হোসেন সোহেল, জহির, সানি ও সাইফুর আমাকে ও বাকি ভিকটিমদের টেনে এনে হল গেটে ফেলে রাখে। এ সময় বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা এলে তারা যাতে আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা না বলতে পারে এজন্য বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়। সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য নিতে বাধার সৃষ্টি করে। জহির ও সানি পুলিশকে কল দেয়। পুলিশ এসে আমাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। ঢামেকে আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়।

বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি। হাত-পায়ের অসহ্য যন্ত্রণা এখনও নিয়মিত হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছলতার কারণে ভালো চিকিৎসা নিতে পারছি না। এই মর্মান্তিক নির্যাতনের ঘটনা আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। তৎকালীন মুহসিন হল প্রভোস্ট নিজামুল হক ভূঁইয়া, ভিসি মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর এএম আমজাদ আমাদের নির্যাতনের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমার মতো একই কায়দায়, একই ধরনে, একই মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বাপ্পী মিয়া ও মেহেদী হাসান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ইব্রাহিম হোসেন (ইরফান) এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আবদুল গাফফারকে উল্লিখিত একই পাতানো অপরাধে মেরে রক্তাক্ত করে। এতে তাদের কয়েকজনের হাত-পা ভেঙে যায়। তারাও আমার মতো মর্মান্তিক পরিণতি ভোগ করে।

নির্যাতনের বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক সৈয়দ আশিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তার মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম জানান, ওই শিক্ষক বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে জাপানে আছেন। প্রায় ২ বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য সেখানে গেছেন তিনি।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর