শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জরিপকারদের জন্য একটি জরিপ শিক্ষালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বুয়েট। ১৮৭৬ সালে এটি 'ঢাকা সার্ভে স্কুল' নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ব্রিটিশ ভারত সরকার তাদের কাজের সুবিধার জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করে। ১৯০৫ সালে ঢাকার তৎকালীন খাজা আহসানউল্লাহ এ স্কুলের প্রতি আগ্রহী হন। মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার অগ্রগতির জন্য তিনি স্কুলে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা দান করেন। তার মহৎ অনুদানে এটি পরবর্তীতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষালয় হিসেবে প্রসার লাভ করে।

এরপর ১৯০৮ সালে এ বিদ্যালয়টি তার নামানুসারে 'আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল' হিসেবে নামকরণ করা হয়। এ সময় এখানে তিন বছর মেয়াদি পুরকৌশল, তড়িৎকৌশল এবং যন্ত্রকৌশল এ তিনটি ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হতো। শুরুতে একটি ভাড়া করা ভবনে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলত। ১৯০৬ সালে সরকারি উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের কাছে এর নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়। পরে ১৯২০ সালে এটি বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়।

শুরুতে বিদ্যালয়টি ঢাকা কলেজের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। পরবর্তীতে এটি জনশিক্ষা পরিচালকের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে। মি. এন্ডারসন এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৩২ সালে শ্রী বি সি গুপ্ত ও ১৯৩৮ সালে হাকিম আলী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বাংলার শিল্পায়নের জন্য তৎকালীন সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন এই অঞ্চলে দক্ষ জনশক্তির অভাব ছিল। এই অভাব দূর করতে সরকার নিযুক্ত একটি কমিটি যন্ত্র, তড়িৎ, কেমি ও কৃষি প্রকৌশলে ৮ বছর মেয়াদি ডিগ্রি কোর্সে ১২০ জন ছাত্রের জন্য ঢাকায় একটি প্রকৌশল কলেজ স্থাপন এবং আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলকে তৎকালীন পলাশী ব্যারাকে স্থানান্তর করার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে এই স্কুলে পুর, যন্ত্র, ও তড়িৎ কৌশলে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ৪৮০ জন ছাত্র ভর্তির সুপারিশও করা হয়।

১৯৪৭-এর দেশবিভাগের ফলে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া বাকি শিক্ষকদের সবাই ভারতে চলে যান। অন্যদিকে ভারত থেকে ৫ জন শিক্ষক এ স্কুলে যোগদান করেন। ১৯৪৭-এর আগস্ট মাসে এটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রূপে উন্নীত করা হয়।

১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার এই কলেজটিকে অনুমোদন দেয়। ১৯৫৬ সালে কলেজে সেমিস্টার প্রথা চালু হয় ও নতুন পাঠ্যক্রম অনুমোদিত হয়। ১৯৫৭ সালে ডিগ্রি কোর্সে আসন সংখ্যা ১২০ থেকে বাড়িয়ে ২৪০ করা হয়। ১৯৫৮ সালে কলেজ থেকে ডিপ্লোমা কোর্স বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯৫১ সালে টি এইচ ম্যাথুম্যান এবং ১৯৫৪ সালে ড. এম এ রশিদ কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। এ সময়ে এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল কলেজ অব টেক্সাস ও আহসানউল্লাহ কলেজের সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে সেখান থেকে অধ্যাপকরা এদেশে এসে শিক্ষকতার মান, ল্যাবরেটরি ও পাঠ্যক্রম উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য কিছু শিক্ষককে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য ওই কলেজে পাঠানো হয়। এ সময় এশিয়া ফাউন্ডেশন কিছু প্রয়োজনীয় বইপত্র দান করলে কলেজে রেন্টাল লাইব্রেরি প্রথা চালু করা হয়। কলেজ থাকা অবস্থায় ছাত্রদের জন্য কেবল দুটি ছাত্রাবাস ছিল-মেইন হোস্টেল (বর্তমান ড. এম. এ. রশীদ ভবন) ও সাউথ হোস্টেল (বর্তমান কাজী নজরুল ইসলাম হল)

 

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু

পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালের ১ জুন তারিখ এটিকে একটি পূূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করে নাম দেওয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন কারিগরি শিক্ষা পরিচালক ড. এম এ রশিদ প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। অধ্যাপক এ এম আহমেদ প্রকৌশল অনুষদের প্রথম ডিন নিযুক্ত হন। খ্যাতনামা গণিতজ্ঞ এম. এ জব্বার প্রথম রেজিস্ট্রার ও মমতাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম কম্পট্রোলার নিযুক্ত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়রূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ছাত্রদের জন্য তিনটি নতুন আবাসিক হল তৈরি করা হয়। অধ্যাপক কবিরউদ্দিন আহমেদ প্রথম ছাত্রকল্যাণ পরিচালক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালেই প্রথম স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদে স্থাপত্য বিভাগ গঠন করা হয়। এই বিভাগের জন্য টেক্সাস এ. অ্যান্ড এম. কলেজের কয়েকজন শিক্ষক যোগদান করেন। এভাবে প্রকৌশল ও স্থাপত্য এই দুটি অনুষদে পুর, যন্ত্র, তড়িৎ, কেমি ও ধাতব প্রকৌশল এবং স্থাপত্য বিভাগ নিয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ১৯৬৪ সালে আসন সংখ্যা ২৪০ থেকে ৩৬০ জনে উন্নীত করা হয়। ১৯৬৯-৭০ সালে আসন সংখ্যা ৪২০ জনে উন্নীত হয়। এ সময় স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদে ফিজিক্যাল প্ল্যানিং নামে একটি নতুন বিভাগ চালু হয়। এটিই পরবর্তীতে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে পরিণত হয়েছে।

 

স্বাধীনতার পর : ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পূর্ব-পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়।

 

এক নজরে

 

অবস্থান : ঢাকার পলাশীতে

 

প্রতিষ্ঠা : ১৯৬২ সালের ১ জুন (পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে)।

 

আয়তন : ৭৬.৮৫ একর

 

অনুষদ : ৫টি। এগুলো হলো- স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা অনুষদ, পুরকৌশল অনুষদ, তড়িৎ এবং ইলেক্ট্রনিক কৌশল অনুষদ, প্রকৌশল অনুষদ ও যন্ত্র কৌশল অনুষদ।

 

বিভাগ : ১৬টি।

 

ইনস্টিটিউট : ৪টি ।

 

আবাসিক হল : ৮টি।

 

অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা : সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, মিলনায়তন, ব্যায়ামাগার, খেলার মাঠ ইত্যাদি।

 

সর্বশেষ খবর